সারথির ভারতরত্ন!!

 সারথির ভারতরত্ন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। ১৯৫৪ সাল থেকে এই সম্মাননা প্রদান চালু হলেও বিভিন্ন সময়ে এই সম্মান প্রদানের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে।প্রথমদিকে এই সম্মান কেবলমাত্র শিল্প,সাহিত্য, বিজ্ঞান ও জনসেবায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনের জন্য দেওয়া হলেও,পরবর্তী সময়ে এই সম্মাননা প্রাপ্তির ক্ষেত্র মানবিক কৃতিত্বের অনেকগুলো পর্যায়কে স্পর্শ করেছে।আপাতঃ দৃষ্টিতে অশ্বথ পাতার উপর সূর্যের প্রতীকচিহ্ন অঙ্কিত এবং দেবনাগরী লিপিতে খোদিত ‘ভারত রত্ন’ শব্দটি দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান হলেও এর গুরুত্ব, মাহাত্ম্য এবং সাংবিধানিক মর্যাদার সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা করা চলে না।সেই দিক থেকে এটি শুধু নিছক একটি পদক নয়,একজন নাগরিকের কাছে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি।সবচেয়ে বড় কথা হল,এই সম্মানের সঙ্গে কোন অর্থমূল্য দেওয়া হয় না। তাই এই সম্মান শুধু একজন ব্যক্তির সম্মান নয়,এই সম্মান হল সেই ব্যক্তির আদর্শ ও নীতির প্রতি দেশের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।মাত্র কিছুদিন আগেই এ বছর মরণোত্তর ‘ভারত রত্ন’ পুরস্কারের জন্য বিহারের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী কপূরী ঠাকুরের নাম ঘোষণা করেছিল সরকার।পক্ষকাল না পেরোতেই এবার দেশের আরেক বর্ষীয়ান নেতা লৌহপুরুষ লালকৃষ্ণ আদবানিকে ভারতরত্নে সম্মানিত করার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।একটি বছরে সর্বোচ্চ তিনজনকে ভারতরত্ন সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানে কোন বাধা নেই।সেই দিক থেকে গেরুয়া শিবিরের বহু যুদ্ধের নায়ককে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা নিয়ে কোনও বাধা ছিলো না। শতবর্ষ ছুঁইছুঁই লালকৃষ্ণ আদবানি বয়সের ভার ন্যুব্জ এক ব্যক্তিত্ব,দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি থেকেও অনেক দূরে তিনি।অশক্ত শরীরের আদবানি এখনও ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র এবং গেরুয়া রাজনীতির লৌহ মানব।১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্মের অন্যতম রূপকার আদবানি জনতা দল ছেড়ে সঙ্গীদের নিয়ে বিজেপির জন্ম দেন।বলা হয়ে থাকে আদবানির হাতে ধরেই ভারতীয় রাজনীতিতে জুড়ে গিয়েছিল রামের নাম।রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারির হাত ধরেই দেশে হিন্দু আবেগ উসকে উঠেছিল ৯০এর দশকে। ১৯৯২-এর সেই আবেগকে হাতিয়ার করেই আদবাণী রামরথ নিয়ে গোটা দেশ প্রদক্ষিণ করতে বেরিয়ে পড়েন।উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু হওয়া সেই যাত্রা যা বিহারে আটকে দেন লালু প্রসাদ।সমস্তিপুরে গ্রেপ্তার হন আদবানি।তারপর সরযূ দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল।৩২ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন আদবানি। পরবর্তী সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে উপপ্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।আদালতও ২০২০ সালে বাবরি ভাঙার অভিযোগ থেকে তাকে এবং অভিযুক্ত সকলকে বেকসুর খালাস করে দেয়।বলা যায়, আদবানির হাত দিয়ে শুরু এদেশে রামরথ আন্দোলন যা গত ২২ জানুয়ারী রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।হিন্দু আবেগের পরিপূর্ণতার সেই বৃত্তে রাম রাজনীতির সারথি তথা মার্গদর্শককে ভারতরত্ন সম্মান এরই গুরুদক্ষিণি হিসাবে দেখা যেতে পারে।গেরুয়া শিবিরে লৌহ পুরুষ তথা একসময়ের দুঁদে রাজনীতিবিদ লালকৃষ্ণ আদবাণি ভারতের সমকালীন রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্র এ নিয়ে কোন সংশয় নেই।কিংবা তার ভারতরত্ন প্রাপ্তির যোগ্যতা নিয়েও বিতর্ক থাকার কথা নয়।কিন্তু ভোটের বছরে সদ্য রামমন্দির উদ্বোধনের পরই রামরথের কাণ্ডারিকে সম্মান জানানো আসলে যে হিন্দু আবেগেরই বৃত্ত পূর্ণ করার প্রয়াস তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।যেমনটা কপূরী ঠাকুরকে প্রাদেশিক রাজনীতির আঙ্গিনায় ভোটের বছর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আসলে এটা কোন বিতর্ক
নয়।এটা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে এদেশের পরিমণ্ডলে।ভারতরত্ন ভাঙিয়ে প্রাদেশিক রাজনীতির ফায়দা তোলার ঘটনা কিংবা নিজের প্রচার ও সম্মাননা অতীতে হয়েছে এই দেশে।১৯৫৫ সালে
নেহরু এবং ১৯৭১ সালে শ্রীমতী গান্ধীও নিজেরা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতরত্ন পেয়েছিলেন।যদিও ভারতরত্ন প্রাপকের নাম সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর হাত ঘুরেই রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। অথচ মাদার টেরেসা,অমর্ত্য সেন ভারতরত্ন পেয়েছিলেন নোবেল জয়ের পর।আবার রাজীব গান্ধী এমজি রামচন্দ্রনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক রাজনীতির কথা মাথায় রেখে।একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল ভিপি সিং যখন বিআর আম্বেদকরকে মরণোত্তর-ভারতরত্ন এবং ভূপেন হাজারিকার জন্য তরুণ গগৈ তদ্বির করেছিলেন।মোদ্দা কথা, জন্মলগ্ন থেকেই ভারত রত্ন প্রদান নিয়ে যথাযথ সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কর্তৃপক্ষ। সেই দিক থেকে থেকে অনেকটা দেরিতে হলো আদবানি তাঁর যোগ্য সম্মান পেয়েছেন এটাই সুখের কথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.