সিগারেটের পোড়া ফিল্টার দিয়ে শিশুদের খেলনা তৈরি করলেন বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
অনলাইন প্রতিনিধি || ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’এই প্রবাদ যখন শুরু হয়েছিল, সেই দিনও আর নেই, স্বাভাবিকভাবেই সেই মানুষও আর নেই। আমরা আন্তরিক হলে জীবকুলের বাকি প্রাণীদের সুরক্ষা দিতে পারি,কিন্তু সেটা আমরা চাই না বোধহয়। চাইলে কি আর প্লাস্টিক খেয়ে তিমিরা মারা যায়,শ্বেত ভালুকরা খাবারের খোঁজে হন্যে হয়ে শহরাঞ্চলে চলে আসে, গলায় স্ট্র আটকে মারা যায় পাখিরা! তবে ভয়ঙ্কর একটা দৃশ্যকে চোখের সামনে দেখেছিলেন হাফসুর রহমান।সেদিন যে দৃশ্য রহমান দেখেছিলেন তার বিস্তারিত বর্ননা দিলেন, ‘ পাখি তার ছানাকে সিগারেটের ফেলা টুকরো খাওয়াচ্ছে। বেচারা তো মা, সে তো তার সন্তানের মুখে খাবার ভেবেই তুলে দিচ্ছে, সে তো জানে না সেটা বিষ।গলায় আটকে মারাও যেতে পারে তার বাচ্চাটি।’
সান দিয়েগোর স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল অফ পাবলিক হেল্থর তরফে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জানানো হয়েছিল যে প্রতি বছর ৫ লক্ষ কোটি ফিল্টার সিগারেটের একটা বড় শতাংশ প্রতিবছরই পরিবেশের কোথাও না কোথাও নিক্ষিপ্ত হয়। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যে সিগারেটের এই অংশটা স্ট্রয়ের থেকেও বেশি বিপজ্জনক।সিগারেটের ফিল্টারের মধ্যে প্রায় চার হাজার বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে।যার ষাট-সত্তরটি থেকে ক্যানসার হতে পারে।এ ছাড়াও সিগারেটের ফিল্টারের মধ্যে থাকা ক্যাডমিয়াম,সিসা ইত্যাদিও।যা কেবল স্বাস্থ্যের পক্ষে নয়, পরিবেশের পক্ষেও ভয়ানক ক্ষতিকারক।ওই বর্জ্য জলে মেশায় ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণীদেরও।এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন,পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, মাত্র একটি সিগারেটের ফিল্টার যদি এক লিটার জলে ৯৬ ঘণ্টার বেশি ডুবিয়ে রাখা হয়, তা হলে সেটি থেকে যে পরিমাণ বিষাক্ত রাসায়নিক জলে মেশে তা জলজ প্রাণীদের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।এবার সেই ফিল্টার থেকে ‘বিষ’ বার করে তাকে শিশুদের খেলনায় ব্যবহার করার পথ দেখালেন তামিলনাড়ু রাজ্যের কোয়েম্বাটুরের রহমান।
বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন রহমান। ফলে মানুষের ব্যবহৃত যেকোন পণ্যকে পুন:ব্যবহারের পদ্ধতিকে হাতে কলমে রপ্ত করেছেন রহমান।কোয়েম্বাটুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কালাম ফাউন্ডেশন’এ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন রহমান।পারিশ্রমিকে নয় শুধুই ভালবাসার তাগিদে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি। ক্ষুধার্ত পাখির সিগারেটের ফিল্টারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মন কেঁদে উঠেছিল রহমানের।আর তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফিল্টারের তুলোকে বের করে এনে একেবারে অন্য কিছু করার যা মানুষের কাজে লাগবে। কারণ ওই তুলোতেই মিশে রয়েছে ‘বিষ’।সেই পথচলা সূচনা।ফাউন্ডেশনের কুড়ি জন সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তাঘাট, পার্ক-ময়দান সর্বত্র থেকে সিগারেটের পোড়া ফিল্টার সংগ্রহ করতে নেমে পড়েন তিনি।প্রায় মাস দুয়েকের মধ্যে কেজি ত্রিশেক ফিল্টার সংগ্রহ করেছিলেন তারা। তারপর প্রথম ধাপে জীবাণুমুক্ত করার কাজ আর দ্বিতীয় ধাপে টক্সিন বা ‘বিষ’; যা সিগারেটের লুকিয়েছিল তাকে দূর করার কাজ চলেছিল।পোড়া ফিল্টারের মধ্যে থাকা হলুদ রঙের তুলোই চেহারা নিল একেবারে ধবধবে দুধ সাদা তুলোয়। ফাউন্ডেশন’এর সম্পাদক কমল চন্দ্ৰ ‘দৈনিক সংবাদ’কে জানালেন, ‘সাদা রংয়ের তুলাগুলো দেখলে আপনি ভাবতেই পারবেন না এই তুলাগুলো একসময় সিগারেটের ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।’ তারপর সেই তুলো দিয়ে তৈরি হল সফট টয়েজ বা পুতুল। শুধু সফট টয়েজ নয়, শিশুদের খেলার উপযোগী সামগ্রী যেমন তৈরি হয়েছে একসময় ফিল্টারে থাকা তুলো দিয়ে ঠিক তেমনি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম তৈরি করার কৌশল নিয়েছেন।