ভারত সরকার গত ১ জুলাই থেকে গোটা দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বস্তুর উৎপাদন , আমদানি , মজুত , সরবরাহ ব্যবহার কিংবা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে । একবার ব্যবহারযোগ্য বলতে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত যে কোন ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের কথা এখানে বলা হয়েছে । যদিও ১ বছর আগেই দেশের পরিবেশ মন্ত্রক বলতে পণ্যের এই ধরনের প্লাস্টিক বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল । অথচ দেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে সারা দেশে এই সিদ্ধান্তটি রূপায়ণ করতে ১ বছরের বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে ।
কেন্দ্রের এই বিলম্বিত পদক্ষেপ থেকেই আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক যে , ১ লা জুলাই থেকে কেন্দ্ৰ গোটা দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপর নিষেধজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেও বাস্তবতার নিরিখে গত ৫ দিনে সেটা কি আদৌ বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে ? উত্তরটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায় মাত্র ৫ দিনে গোটা দেশে এই নিয়ন্ত্রণ জারি করা আদৌ সম্ভব নয় । তবে একেবারে না হওয়ার চেয়ে , ধীরে ধীরে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যে জরুরি সেটা সবাইকেই বুঝতে হবে । কেন সর্বনাশা প্লাস্টিক থেকে আমাদের বাঁচতে হবে- সেটা ব্যাপক পরিসরে অনুভব না করলেও অল্পবিস্তর সকলেই আমরা এই সম্পর্কে অবগত ।
বেশি দিন আগের কথা নয় । মাত্র ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়া সাগরে ভেসে আসা একটি মৃত তিমি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল । কারণ ৩০ ফুট লম্বা এই মৃত তিমিটির পেট থেকে ৬ কিলো ওজনের প্লাস্টিকের বিভিন্ন বস্তু উদ্ধার করা হয় । যার মধ্যে পলিথিন , কাপ বোতল সবই ছিল প্লাস্টিকের । প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে , প্লাস্টিক খেয়েই তিমিটির মৃত্যু হয়েছিল । এই ঘটনার পর গোটা বিশ্বে হইচই শুরু হয় । পরিবেশবিদরা ঝাঁপিয়ে পড়েন ময়দানে , রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে তখন জানানো হয় প্রতি বছর ৮০ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক সমূদ্রে এসে মিশছে ।
উদ্বেগের বিষয় হলো , ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে গোটা বিশ্বে যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপন্ন হয় তার এক – তৃতীয়াংশই হলো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যা দূষণ ছড়ানোর জন্য মারাত্মক । আর এই প্লাস্টিক ব্যবহারের পর ফেলে দিলে অন্তত ৫০০ বছর পর্যন্ত সেটা অপচ্য অর্থাৎ নষ্ট হয় না । অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রথম যে প লাস্টিকটি তৈরি করা হয়েছিল তা এখনও ধ্বংস হয়নি । আরও উদ্বেগের খবর হল পৃথিবীতে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৩ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয় । এর মধ্যে সমূদ্রে প্রতি বছর যে ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক এসে জমা হয় তার ৬০ ভাগই হচ্ছে ভারতের প্লাস্টিকের বর্জ্য ।
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম বলছে , এই ভাবে যদি চলতেই থাকে , আর মানুষ হিসাবে আমরা যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ না নিই তাহলে ২০৫০ সালে মধ্যে পৃথিবীর সমুদ্রগুলোতে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যাবে । যার নিট ফল হলো পৃথিবীকে আরও দ্রুত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া । এমনিতেই প্লাস্টিক আমাদের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে এনেছে । প্লাস্টিকের ব্যাগ , বোতল , কাপ , স্ট্র ইত্যাদির কারণে নালা নর্দমা দিয়ে জলনিকাষি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে । বেড়েছে রোগজীবাণু , কীটপতঙ্গ , মশা মাছির বিস্তার । বাড়ছে ম্যালেরিয়া , ডেঙ্গি , টাইফয়েড ।
জমিতে প্লাস্টিক জমে থাকায় সেগুলো পচনশীল না হওয়ার কারণে মাটির নীচে জল ঢুকতে বাধা পাচ্ছে । মাটির নীচে জলস্তর হ্রাস পাচ্ছে । এভাবেই খুব দ্রুত পৃথিবীর জৈব বৈচিত্র নষ্ট হয়ে বন্যা , ভূমিধসের মাধ্যমে বিপর্যয় এসে দরজায় কড়া নাড়ছে ।
অথচ ভারতের মতো এত বিশাল জনসংখ্যার দেশে মানুষের সচেতনতা যে মাত্রায় থাকার দরকার সেটা না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাচ্ছে । এই সঙ্কটে সরকারকে যতটা ভূমিকা নেওয়ার কথা তারাও সেটা করছে না বলেই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ ১ বছর পরে কার্যকর করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে ।
লক্ষণীয় হলো আপাতত সরকার ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক পণ্যের উপর ১ লা জুলাই থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও চলতি বছরই ডিসেম্বর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও । সুতরাং ধাপে ধাপে পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকলের প্রস্তুতি হতে হবে পুরো মাত্রায় নিখুঁত । এক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্র সব সরকারকেই রাজনৈতিক বিরোধিতা ভুলে পরিবেশ দূষণের প্রশ্নে সম্মিলিতভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে ।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিলম্বিত পদক্ষেপের কারণে এমনিতেই যে দুর্বলতা প্রকট হয়েছে , তাকে কাটিয়ে সরকারী নির্দেশিকা যেন বাস্তব অর্থেই সাফল্য পায় সেদিকে প্রতিটি নাগরিকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে । আর সেটা সম্ভব হলেই প্লাস্টিক মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার স্বপ্নে ভারতের যোগদান অগ্রণী হতে পারে ।
অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…
কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…
নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…
অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…
হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…
অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…