সিরিয়ার নয়া চ্যালেঞ্জ!!
সিরিসায় বাসার আসাদ সরকারের পতন এবং আসাদের সপরিবারে দেশত্যাগের ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে আরও একবার ভূমধ্যসাগর-উপসাগরমুখী করিয়াছে।যদিও চিন এবং আমেরিকা বাদে আর কোনও দেশকে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিতে দেখা যায় নাই।চিন সিরিয়ার বিদ্রোহী দল, যাহারা রাষ্ট্রপতি ভবন সহ গোটা দামাস্কাসের দখল লইয়াছে তাহাদের প্রতি আবেদন রাখিয়াছে যাহাতে চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা বজায় থাকে ওই দেশে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বলিয়াছেন, সিরিয়ায় আসাদের পতনে ধাক্কা খাইয়াছে ইরানের যুদ্ধ-জোট। ইহা ইরান,রাশিয়ার ব্যর্থতা। তবে বিদ্রোহীরা সিরিয়া দখলের পর ঘোষণা দিয়াছে, আমরা বহুত্ববাদের পক্ষে এবং ধর্মীয় সহনশীলতার পথ অবলম্বন করিয়াছি।
এই প্রসঙ্গে গত জুলাই আগষ্ট মাসে গণ অভ্যুত্থানে দেশত্যাগী শেখ হাসিনা এবং বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে থাকা বাংলাদেশের কথা আসিয়া যায়।এই দেশের সরকারও বহুত্ববাদের কথা বলিতেছে কিন্তু আড়ালে আবডালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালাইতেছে। সংখ্যালঘু অংশের মানুষকে দাবাইয়া রাখিবার পুরানো খেলা খেলিতেছে।সিরিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে তুলনা চলে না।বাংলাদেশে গণ আন্দোলন হইয়াছে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে, যাহাকে বাংলাদেশের সরকার এবং আন্দোলনকারীরা গণ অভ্যুত্থানই বলিতেছেন। অন্যদিকে,সিরিয়ায় ঘটিয়া গিয়াছে সশস্ত্র বিদ্রোহ। রক্তক্ষয়ী সংঘাত এড়াইতে শেষ পর্যন্ত আসাদ দেশত্যাগ করিয়াছেন গোপনে।আবার প্রাণরক্ষায় শেখ হাসিনাকেও দেশ ছাড়িতে হইয়াছে। এইখানেই শুধু দুইটি দেশের মধ্যে মিল রহিয়াছে। আর কোথাও নাই।
পশ্চিম এশিয়ার দেশ সিরিয়া ভূমধ্যসাগরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।অর্থাৎ দেশটির পশ্চিম প্রান্ত জুড়িয়া রহিয়াছে ভূমধ্যসাগর।উত্তরে তুরস্ক,পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্ডন। দেশটির দক্ষিণ- পশ্চিমে রহিয়াছে লেবানন এবং ইজরায়েল।এই দেশটি বরাবর ইজরায়েল বিরোধী এবং ইরান যুদ্ধ জোটভুক্ত হইয়াছিল।গত পঞ্চাশ বছর ধরিয়া আসাদ পরিবারের শাসন চলিয়া আসিতেছে এই দেশে।আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভ ধূমায়িত হইতেছিল অনেকদিন ধরিয়া।২০১১ সালে দেশটিতে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে। সেই হইতে গোটা দেশজুড়িয়া এক বিশৃঙ্খল অবস্থা ও নৈরাজ্য চলিতেছে।
শনিবার আসাদ সপরিবারে বিমানে দেশত্যাগের পর রবিবার দেশের বিদ্রোহী দলগুলির মধ্যে বৃহৎ দল হায়াত তাহরির আল শাম দেশের পতাকা হাতে দামাস্কাসে ঢুকে জয়ের আনন্দে শূন্যে গুলী ছুড়িতে ছুড়িতে।তাহাদের মিছিলে সাধারণ নাগরিকেরাও যোগ দেয়।রবিবার দুপুর নাগাদ সেই জমায়েত বড় হইতে থাকে এবং উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষ রাষ্ট্রপতি ভবনে, আসাদের বাসভবনে ঢুকিয়া যায় এবং ভাঙচুর করে। তাহারা নিরাপত্তা বাহিনীকেও আক্রমণ করে।আসাদের সমর্থকদের আটক করে বিক্ষুব্ধ জনতা।তবে আসাদ কোথায় রহিয়াছে এই খবর এখনো কাহারও কাছে নাই। অনুমান করা হইতেছে আসাদ সপরিবারে রাশিয়ায় আশ্রয় লইয়াছে।কিন্তু সেই দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ নাই।ওপর একটি অংশের মত আসাদ আরব আমিরশাহিতে আশ্রয় লইয়াছে।সকলের নজর ছিল আসাদের পতনে ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেয় তাহা জানিয়া লওয়া।ইরান এখনো পর্যন্ত নীরব।অন্যদিকে বিদ্রোহীরা আসাদমুক্ত সিরিয়ায় আনন্দোল্লাসের পর্যায়ে ইরানের দূতাবাস পোড়াইয়া দিয়াছে।অন্যদিকে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিরিয়া লইয়া যেই সকল সংবাদ প্রকাশ পাইতেছে তাহাতে জানা যায়, আলকায়দার প্রাক্তন কমান্ডার আবু মহম্মদ আল গোলানি সিরিয়ার পরবর্তী সরকার কেমন হইবে তাহার আকার রচনা করিতেছেন। এই আল গোলানিই কিন্তু সিরিয়ার বিভিন্ন বিদ্রোহী দলগুলির মধ্যে বহৎ দল হায়াত তাহরির কমান্ডার হিসাবে দামাস্কাসে সর্বসমক্ষে আসিয়াছেন।এই বিষয় স্পষ্ট যে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনে ইরানের যুদ্ধ- জোট ধাক্কা খাইয়াছে। অন্যদিকে,সিরিয়ার বিদ্রোহী যে নেতারা বহুত্ববাদের কথা শুনাইতেছেন তাহারাও দেশে শৃঙ্খলা ফিরাইয়া আনা লইয়া যথেষ্ট চাপে রহিয়াছে।চাপ দিনে দিনে তীব্র হইবে বলিয়া অনুমান করা হইতেছে। কারণ আসাদের বিরুদ্ধে যাহারা সশস্ত্র বিদ্রোহ করিয়াছে।তাহারা সবাই একসঙ্গে যুদ্ধে নামে নাই। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য জিয়াইয়া রাখিয়াই আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাইয়া গিয়াছে।তাই সবগুলি দল বৃহত্তম হায়াত তাহরির নেতৃত্ব মানিয়া লইবে এমন আশা করা যাইতেছে না।সম্ভবত এই কারণে হায়াত তাহরি বহুত্ববাদের নরম পথ লইয়াছে।তাহারা বলিতেছে, সিরিয়া সকলের জন্য।কোন বাছবিচার এর মধ্যে থাকিবে না।সুন্নি, ড্রজে, আলাউই সকল অংশের মানুষকে স্বাগত জানাইবে নতুন সিরিয়া।প্রসঙ্গত,প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসাদ নিজে আলাউই সম্প্রদায়ের।ওপর দিকে বিদ্রোহীরা প্রায় সকলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি, ড্রজে, খ্রিস্টান এবং কুর্দ সম্প্রদায়ের মানুষ। ইহাদের একত্রিত করিয়া দেশে ঐক্য ও মৈত্রীর পরিবেশে শান্তি ফিরাইয়া আনা এখন সিরিয়ার বিদ্রোহীদের জন্য এক চ্যালেঞ্জ।