সুখ-অসুখ!!

 সুখ-অসুখ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রাচীন রোমে একটি বিখ্যাত প্রবাদ প্রচলিত ছিল। প্রবাদটির মূল সুর প্রা হলো সুখ কেউ রুপোর থালায় সাজিয়ে আপনার সামনে হাজির করে দেবে না। আপনার জীবনে সুখের দায়িত্ব আপনারাই।আপনি আপনার আশেপাশের মানুষজনের কাছ থেকে কতটা সহায়তা ও ভালোবাসা পাচ্ছেন- সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার সাফল্য। আসলে সুখ হলো আনন্দ বা তৃপ্তির এক ধরনের অনুভূতি। মানুষ যখন সফল, নিরাপদ কিংবা ভাগ্যবান তখনই তারা একে সুখ মনে করে।আসলে আমরা সকলেই সুখের পূজারী।কিন্তু সুখ অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের উপর।অনেকে বলেন আমাদের মধ্যে ইন্দ্রিয় আনন্দের যে সন্ধান খোঁজে সেটাই হলো সুখ।
এই প্রসঙ্গে কবি কামিনী রায়ের লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘সুখ’ এর একটি পঙক্তি মনে পড়ছে। তাতে কবি প্রশ্ন করেছেন ‘নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?এ ধরা কি শুধু বিষাদময়’!আসলে সুখ সুখ করে যারা হতাশ,কবি তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই এই চরণটি লিখেছেন।যারা সবসময় সুখের জন্য আকুল হয়ে থাকেন, তারা সামান্য দুঃখ যন্ত্রণাতেই কাতর হয়ে যান।তারা মনে করেন সুখ ছাড়া জীবন ব্যর্থ।কিন্তু কবি মনে করেন,তাদের এই ধরনের ভাবনাগুলো ভুল।পৃথিবী ফুলশয্যা নয়।এখানে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়।এই সংগ্রামের মধ্যেই নিহিত আছে সুখ।আসলে নিজের জন্য নয় অন্যের উপকারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। নিজের সুখের কথা যারা ভাবে তারা পৃথিবীতে প্রকৃত সুখী নয়।সমাজের অন্য সবার কথা ভুলে কেউ যদি শুধু নিজের স্বার্থ দেখে সে হয়ে যায় আত্মকেন্দ্রিক ও সমাজবিচ্ছিন্ন।কবির মনে সুখ নিয়ে এই ভিন্ন ভাবন উদয় হলেও আমাদের সমাজে প্রায় সব মানুষই আজীবন সুখের পেছনে ছুটে চলে।সেই সুখ পাওয়া, না পাওয়া সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সুখের জন মানুষের নিরন্তর চেষ্টার বিরাম নেই।
সুখ নিয়ে কবি কামিনী রায়কে স্মরণ করা, আর এতগুলো কথা বলার পেছনে মূলত একটাই কারণ। মাত্র গতকালই ২০ মার্চ গোটা পৃথিবীতে পালিত হল আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০১২ সাল থেকে দিনটিকে ‘সুখ দিবস’ হিসাবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয় ভালো থাকার প্রত্যাশা আর লক্ষ্য নিয়ে সুখ দিবস পালনের সূচনা।প্রতিবছর এই দিনটিতে পৃথিবীর সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়।এই বছরও প্রকাশিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৪। এবারও পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে ফিনল্যান্ড। এই নিয়ে পরপর ৭ বার দেশটি সুখী দেশের তালিকার এক নম্বরে স্থান পেয়েছে। আর সুখী দেশের তালিকায় একেবারে সবার নীচে ১৩৭ নম্বর স্থানে জায়গা পেয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় সুখী দেশ হলো যথাক্রমে ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড।সুখী দেশের তালিকায় আমেরিকা ১৫০ নম্বরে, ইংল্যান্ড ১৯ নম্বরে, রাশিয়া ৭০ নম্বরে। আর আমরা ভারতীয়র
আছি ১২৬তম স্থানে।
কোন দেশ কতটা সুখী এই তালিকা তৈরি করতে মানুষের সুখের মূল্যায়ন, তাদের আর্থিক সামাজিক পরিস্থিতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সুস্থতা, জিডিপি এবং দেশটিতে দুর্নীতির মাত্রা বিচার করা হয়।আসলে ঘুরেফিরে আমাদের সেই কথাটাই আবার বলতে হয়, সুখের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের অসুখ বেড়ে গেছে।কোভিড ১৯-এর ধাক্কা সামলাতে সামলাতেই আমাদের দু- তিন বছর কেটে গেছে। তারপর দেখা দিয়েছে আর্থিক মন্দা। শুরু হয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ।এরপর একে একে হাত ধরাধরি করে সামনে এল বেকারত্ব,মুদ্রাস্ফীতি,নিত্য পণ্যের দাম আর রাজনীতির চড়া বাজার।এভাবেই আমাদের কমে গেছে সুখ, কমে গেছে ভালো থাকা, ভালো লাগা। আবার এটাও ঘটনা, যে দেশের মানুষ সুখ খুঁজতে মরিয়া,তাদের মধ্যেই সুখ সবচেয়ে কম।সুখ খোঁজার পেছনে বেশি মনোযোগ না দিলেই বরং সুখ এসে ধরা দেয়- এমনটাই বিশ্বাস করেন ফিনল্যান্ডের মানুষ। আবার এটাও ঘটনা, সুখ অন্যকে দেখানোর বিষয় নয়।সেকারণেই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির রাস্তায় দামি কোন গাড়ি দেখা যায় না। অথচ অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে নিজের প্রাচুর্য দেখানোটা মানুষের বড় ব্যাধি। এটাই সুখের বদলে অসুখের বড় কারণ। আবার এটাও সত্য যে, গ্রীষ্ম সবার জীবনেই আসে।তাই জীবনে যা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই তা নিয়ে হতাশ হতে নেই।তাহলে সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখ আমাদের ধরা দেবে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.