সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে সরকার!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে
সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ বিশবাঁও জলে।উল্টো সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে মামলার সিদ্ধান্তে সীলমোহর দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। আর রাজ্য সরকারের এই কর্মচারীবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই হাজারো সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের উচ্চ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে স্পেশাল লিভ পিটিশনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন মহাকরণের আধিকারিকরা।এমনকী এ লক্ষ্যে নয়াদিল্লীতে তিনজন বরিষ্ঠ আইনজীবীকেও মামলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
অবাক করার বিষয় হল, ২০১৮ সালে বিজেপির ভিশন ডকুমেন্টে প্রতিশ্রুতি ছিল রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত বেতনক্রম প্রদান করা হবে, যা আজ পর্যন্ত করেনি বিজেপি সরকার।উল্টো বামফ্রন্ট সরকারের সময় সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের বছরে একবার বেতন বৃদ্ধির যে প্রথা ছিল তাও বাতিল করে দেয় রাজ্য সরকার।শুধু তাই নয়,তাদের ডি এ সহ অন্যান্য আর্থিক সুযোগসুবিধা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ত্রিপুরাতে।
উল্লেখ্য, আসাম পরিচালিত বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডার চেয়ারম্যান হিমন্ত বিশ্বশর্মা স্বেচ্ছায় গত
২ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে।
প্রায় ২৩ হাজার সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের নিয়োগপত্র তুলে দেন। এর ফলে আসামের সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের স্বস্তি হলেও ত্রিপুরার শিক্ষকদের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ বিরাজ করছে।
অভিযোগ,সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের হাইকোর্টের নির্দেশ এবং কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শিক্ষকদের বেতনবাবদ অর্থ বরাদ্দের সবুজসংকেত থাকার পরও শিক্ষা দপ্তর, আইন দপ্তর এবং অর্থ দপ্তরের আধিকারিকরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে লিভ পিটিশন করার জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে যতগুলি স্পেশাল লিভ পিটিশন করেছে এই সময়ে প্রায় ৬১টি এসএলপি সহ অন্যান্য মামলার নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে প্রায় সিংহভাগ মামলাতেই রাজ্যের পক্ষে রায় হয়নি।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর,২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে রাজ্যের উচ্চ আদালত সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ সহ পেনশন প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে পরবর্তীতে কনটেম মামলা হলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতকে জানায় সর্বশিক্ষার মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাবে না সরকার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ করবে।
তৎসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয় সমগ্র শিক্ষার নিয়মানুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করবে।কেন্দ্রীয় সরকার আরও জানিয়েছে চতুর্দশ অর্থ কমিশন রাজ্যকে ৩২ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করেছে।সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ করে শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। পরবর্তীতে ৩০ নভেম্বর ২০২১-এ রাজ্য সরকার নিয়মিতকরণের স্কিম বানিয়ে টেটের অজুহাত দেখিয়ে কোন শিক্ষক নিয়মিত করেনি।
সরকার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বঞ্চিত সর্বশিক্ষার শিক্ষকেরা পুনরায় উচ্চ আদালতে শরণাপন্ন হন ন্যায় বিচার পাওয়ার দাবিতে।গত ১৬ আগষ্ট উচ্চ -আদালত শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন,২৯ জুলাই ২০১১ সালের পূর্বে যে সমস্ত শিক্ষকদের চাকরি নিয়োগের বিজ্ঞাপন বের হয়েছে সেই সমস্ত শিক্ষকদের চাকরিতে নিয়মিত করণ করতে টেটের কোন প্রয়োজন নেই।
বিজেপি দলের ভিশন ডকুমেন্টে বলা হয়েছিল সরকার গড়লে তিন মাসের মধ্যে নিয়মিতকরণ করা হবে। অপরদিকে পূর্বের শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় বলেছেন টেট ছাড়া শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ করা যাবে না। যখন উচ্চ আদালত স্পষ্ট করলেন শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ করতে টেটের প্রয়োজন নেই।বর্তমান সময়ে বিজেপি শাসিত আসাম রাজ্য সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের নিয়োগপত্র শিক্ষকদের হাতে দিল, অন্যদিকে অপর বিজেপিশাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ না করে উচ্চ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি প্রায় নিয়ে নেয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের এক সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আধিকারিক জানান,আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে যা ঠিক হচ্ছে না। রাজ্য সরকার এর আগেই সর্বশিক্ষার শিক্ষক কর্মচারীদের সবধরনের আর্থিক সুযোগসুবিধা প্রদান করেছে। তাদের চাকরি ৬০ বছর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই অযথা আসাম সরকারের বিষয় এনে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক হচ্ছে না। রাজ্য সরকার এখন সর্বশিক্ষার শিক্ষক-কর্মচারীদের সবগুলি বিষয় নিয়ে স্পষ্টীকরণের জন্য সর্বোচ্চ আদালতে যেতেই পারে।