সুপ্রিম নজির!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাম ভারত।আর এই দেশেই মহান গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত।হাত থেকে রক্ষা করাই নয়, নজির বিহীন রায় দিয়ে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করলো সুপ্রিম কোর্ট।এখানেই শেষ নয়, আদালতের কক্ষেই হলো ভোট গণনা।গণনা শেষে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন খোদ বিচারপতি।যা দেশের ইতিহাসে নজির বিহীন এবং ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।সম্প্রতি চণ্ডীগড় পুর নিগমের মেয়র নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ উঠে।নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেছিলেন।কিন্তু অভিযোগ উঠে, ইচ্ছাকৃত এবং বদ উদ্দেশে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী (আম আদমি) প্রার্থীর আটটি বৈধ ভোট বাতিল করার।বিজেপি নতুন করে ভোট প্রক্রিয়া শুরু করার আবেদন জানালেও,তা বাতিল হয়ে যায়।শেষ পর্যন্ত জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আম আদমি পার্টির প্রার্থী কুলদীপ কুমার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার শুনানিকালে আদালত কক্ষেই পুনরায় ভোট গণনা করা হয়।একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রিটার্নিং অফিসার আটটি ব্যালট পেপার নষ্ট করে দিচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সেই দৃশ্য।এই দৃশ্য দেখে খোদ প্রধান বিচারপতিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।এই দৃশ্য দেখে গণতন্ত্রের হত্যা বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।সেখানে দেখা যায়,ওই ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ব্যালট পেপার নষ্ট করে দিচ্ছে।প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন,ওই অফিসারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা উচিৎ।এখানেই শেষ নয়, প্রধান বিচারপতি তার মন্তব্যে আরও বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও বাধা না আসে, এমন কিছু না ঘটে যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মিথ্যে হয়ে যায়। তা নিশ্চিত করতে হবে আদালতকে।এমন ব্যতিক্রমী ঘটনায় আদালত পদক্ষেপ করতে পারে বলে মন্তব্য করে বিচারপতির বেঞ্চ।রিটার্নিং অফিসারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে,তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে কারণ দর্শাতে হবে যে তার বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ও নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই জাতীয় রাজনীতি ফের তোলপাড় হতে থাকে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে ব্যাপক সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়। বিজেপি দেশের গণতন্ত্রকে কিভাবে হত্যা করছে, চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে অনেকে মন্তব্য করে সমালোচনায় বিদ্ধ করে।সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই দ্বিগুণ অক্সিজেন পেয়ে যান আম আদমি সুপ্রিমো দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কেজরিওয়াল বলেন,সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ছে, তাই সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বসে নেই কংগ্রেসও।কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল টুইট করে বলেছেন,গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশ,সেটাই সামনে আনল আরও একবার।শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে। প্রসঙ্গত, চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে আপ-কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থী কুলদীপ কুমার পেয়েছিলেন বারোটি ভোট। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী মনোজ সোনকার পেয়েছিলেন ষোলটি ভোট। তবে বিতর্কের জেরে তিনি পরে ইস্তফাও দেন।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ও নির্দেশ থেকে কি শিক্ষা নেবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি।যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিমত করার প্রয়াস নিয়েছে।গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে টুটি টিপে ধরে হত্যা করায় চেষ্টা করেছে।এই প্রয়াস আজও জারি আছে।কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালত একটি ঘটনায় যে নজির বিহীন রায় দিয়েছে, তা আগামীদিনে দেশের ভগণতন্ত্রকে রক্ষার ক্ষেত্রে পথ দেখাবে।এটা বুকে হাত রেখে দাবি করা যায়।