সুর বদলে গান গাইছে চড়াই, গবেষণায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগের মতো এখন আর চড়াই পাখির ঝাঁক তেমন দেখা যায় না । আশৈশব আমরা জেনেছি চড়াই ‘ কিচিরমিচির ’ করে । আসলে ওটা গান । হ্যাঁ , গানই গায় চড়াই । সেই গানের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তাদের মনের ভাব প্রকাশের ভাষা । এমনকী প্রেম নিবেদনের কৌশলও । তাদের গানে লুকিয়ে আছে সত্যিই এক অপার রহস্য । এতদিনে সেই রহস্যের অনেকটাই খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা । চড়াইদের জীবন এমনিতে দারুণ । ঘর বাঁধার তাড়া নেই । কারও হুকুম মানার বাধ্যবাধকতা নেই । খামখেয়ালি জীবন । জীবনের একঘেয়েমি তাদের মোটে পছন্দ নয় । কোকিলের মতো নিজেদের গায়ক বলে তারা জাহির করে না ঠিকই , তবে গান গায় । গত ১৪ বছর ধরে চড়াইয়ের জীবন নিয়ে নিরলস গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি হদিশ পেয়েছেন এই রহস্যের । গবেষকরা যাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘ নতুন খোঁজ ’ বলে । কী এই ‘ খোঁজ ’ । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন , সব প্রজাতির চড়াই নয় , তবে খয়েরি রঙের গলায় সাদা ছোপ যে চড়াই আমাদের পরিচিত তারাই গান গায় । তাতে সুর , তাল , লয় , ছন্দ সবই আছে ! চড়াই সমাজে যারা ‘ মুখিয়া ’ , মূলত সে – ই প্রথমে গান বাঁধে । সেই সুরই শিখে নেয় বাকিরা । বাচ্চাদের যাকে বলে পাখি পড়ানোর মতো করে সেই সুর শেখানো হয় । সেই গানই ঠোঁটে ঠোঁটে গোটা চড়াই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে । সুর ভুল করা চলবে না । মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে সেই একই সুর তাদের ঠোঁটে ভেসে বেড়াবে । গবেষকরা দেখেছেন , দুই দশক ধরে একই গান গাইছিল চড়াইরা । খুব সম্প্রতি তাদের পুরোনো সুরে বদল এসেছে । ‘ আচ্ছে দিন ’ এসেছে কি তাদের জীবনে ! বিজ্ঞানীরা কান পেতে শুনেছেন , ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে কানাডার ওন্টারিও পর্যন্ত ৩৩০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চড়াইয়ের দল এক অদ্ভুত সুরে গান শুরু করেছে ।

সকলের ঠোঁটে একই সুর । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন , গানের কথা যদি বৈজ্ঞানিক উপায়ে অ্যামপ্লিফাই করে শোনা যায় তাহলে বোঝা যাবে , শেষ তিনটি নোট বার বার গাইছে চড়াইয়ের দল । প্রায় ১৭৮৫ টি পুরুষ চড়াই গলা ছেড়ে এই গান গাইছে । গত ১৪ বছর চড়াইয়ের উপর গবেষণা চালাচ্ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব নর্দার্ন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার গবেষক কেন ওট্টার , আলেকজান্দ্রা ম্যাকেন্না , স্টেফানি লাজার্তে এবং ওয়াটারলুর ওয়াইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্কট এম রামসে । ‘ কারেন্ট বায়োলজি ‘ সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে কেন ওট্টার জানিয়েছেন , শুধু কানাডা নয় , নতুন গানের প্রতি চড়াইদের যে উৎসাহ আমরা লক্ষ করেছি তাতে মনে হচ্ছে আরও অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে তাদের গানের পসরা । বিজ্ঞানী কেন ওট্টারের কথায় , ১৯৬০ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছিল শিস দিয়েই চড়াইরা মনের ভাব প্রকাশ করে । ১৯৬০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে চড়াই বংশে গায়কদের জন্ম হয় । আসলে পুরুষরাই গান গায় বেশি । স্ত্রী চড়াইরা মূলত শ্রোতা । পাহাড়ি এলাকায় পুরুষ চড়াইদের মধ্যে গান গাওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল । ২০০৪ সালে আলবার্টার কাছে একঝাঁক পুরুষ চড়াইকে অন্য সুরে গান গাইতে শোনা যায় । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন , চড়াইদের পুরোনো গানের সুর ছিল ‘ ট্রিপলেট নোট ’ – এ । অর্থাৎ শেষ শব্দগুলি তিনবার করে তারা গাইত ।

কিন্তু নতুন গান ডাবলেট নোটের । অর্থাৎ শেষ শব্দগুলি এখন তারা দু’বার করে গাইছে । ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল অবধি ২২ থেকে ৫০ শতাংশ চড়াই এই নতুন গান শিখতে শুরু করে । আর এখন গোটা চড়াই সমাজই এই সুর রপ্ত করে ফেলেছে । বিজ্ঞানীরা বলেছেন , এই সুর বদলের পিছনে রয়েছে পুরুষ চড়াইদের প্রেমিক – মন । কেন ওট্টার বলেছেন , পুরুষ চড়াইরা গান গেয়ে স্ত্রীদের মনে প্রেম জাগিয়ে তোলে । গানই তাদের ভাব প্রকাশের মাধ্যম । এমন হতেই পারে যে স্ত্রী চড়াইদের মনের স্বাদ বদলেছে। তারাও আধুনিক গান পছন্দ করছে । তাই পুরুষরা নতুন করে গান বাঁধছে । পরিবেশ দূষণ , মোবাইল টাওয়ারের বাড়াবাড়ি , রেডিও তরঙ্গ , সর্বোপরি করোনার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চড়াই সমাজ যদি বেঁচেবর্তে থাকে তবে আগামী প্রজন্ম হয়তো চড়াইদের নতুন কোরাস শুনবে , জানিয়েছেন কানাডার বিজ্ঞানীরা ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

অর্থনীতির হাল-হকিকত

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…

6 hours ago

রোমান লিপিকে স্বীকৃতির দাবিতে টি,এস,এফ এর বিক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…

6 hours ago

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রকাশ্যে এলো ত্রিপুরার শিক্ষার বেআব্রু চেহারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…

6 hours ago

ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ রাজ্য বানাচ্ছে বিজেপি সরকার: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…

6 hours ago

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

1 day ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

1 day ago