সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

 সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন চলছে। অন্যদিকে শাসক দলের আড়ালে চলছে ব্যাপক হারে তোলাবাজি, জমির দালালি, নিগো বাণিজ্য।সুতরাং বলা যায়,রাজ্যে আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুলিশি ভূমিকা শূন্যের কোঠায়।শুধু পুলিশকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। পুলিশকে পঙ্গু ও অকেজো বানিয়ে রাখা হয়েছে।কোনও ক্ষমতা নেই।অন্যদিকে প্রতিদিন খুন,রাহাজানি,চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ চলছেই।এই অবস্থায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে।কেন তিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না।হয় পুলিশ তার কথা শুনছে না নয়তো তিনি দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।তার সরকার তোলাবাজি, মাফিয়াবাজি,নিগো বাণিজ্যকে উৎসাহ দিচ্ছে। তাই তো ধরে নিতে হবে। খবরে প্রকাশ পেয়েছে, স্বরাষ্ট্র দপ্তরই জানাচ্ছে যে গত ছয় মাসেই রাজ্যে খুন হয়েছে ৪৭ জনের মতো।অর্থাৎ মাসে গড়ে আট জন।এই পরিসংখ্যান ৪০ লক্ষের রাজ্যে বেশ উদ্বেগজনক।গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই পরিসংখ্যান এটাই জানান দিচ্ছে যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। কিরকম অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে।এই খুনের মামলাগুলির দিকে চোখ বুলালেই ধরা পড়ছে যে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। শুধু খুন নয়, মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থাকা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পরিসংখ্যান আরও বলছে, চুরি, অপহরণ, ডাকাতি, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনাও বেড়েই চলছে রাজ্যে। মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা গত ছয় মাসে ঘটেছে ১২৯৩টি।
এই মামলাগুলি থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে তা প্রকাশ্যে এসেছে।বহু মামলা রয়েছে থানার বাইরে পাড়ার দাদা, মাফিয়া, মণ্ডল স্তরে, ক্লাব স্তরে মীমাংসা হচ্ছে এবং তাও প্রণামির বিনিময়ে। এহেন সুশাসনের।নমুনা রাজ্যবাসীর ইদানীংকালে তেমন একটা অভিজ্ঞতা নেই।
এখন তো ভয়ঙ্কর হারে বেড়েছে জমির দালালি আর নিগো বাণিজ্য।কোনও এলাকায় জমি,বাড়ি বিক্রি করা আর জমি বাড়ি কেনা পাড়ার মাফিয়া, দাদা আর মণ্ডল ছাড়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই ধরনের কালচার ভূভারতে রয়েছে কিনা বিরল।এই করে এক শ্রেণীর পাড়ার দাদা, নেতা, উঠতি কার্যকর্তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।রাতারাতি বাড়ি, দামি গাড়ি হাঁকিয়ে বড়লোক, বিত্তশালী হয়ে ওঠছে।কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ সব জানে।প্রশাসন সব জানে।কিন্তু ব্যবস্থা নেবার মালিক তারা নন।কেননা তারা একেক জন আশীর্বাদধন্য।এই হলো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার নমুনা।অতি সম্প্রতি রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল।গত পাঁচ দশকের মধ্যে এরকম ভয়াবহ বন্যা রাজ্যে আর হয়নি।আশা করা গেছিল এবার বন্যার দিকে চেয়ে বন্যা পীড়িতদের দিকে নজর রেখে পুজোর বাজেট কাটছাঁট করে সাধারণ পুজো করে সমাজকে একটা বার্তা দেবার চেষ্টা করবে ক্লাব কর্মকর্তারা। কিন্তু কোথায় কি।মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত এই আহ্বান রেখেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে তোয়াক্কাই করছে না ক্লাবগুলি।রাজ্যজুড়ে চলছে ব্যাপক হারে পুজোর চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজি। রাজধানী শহর থেকে মফস্সল শহর বাদ যাচ্ছে না কিছুই।কোথায় মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান?কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না?পুলিশের কীসের ভয়?সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে এইভাবে চলতে থাকলে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এরা সমাজকে?রাজ্যকে? বন্যা পীড়িতদের সাহায্যার্থে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ফটোসেশন করে সাহায্য করা হচ্ছে।কিন্তু পুজোর চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজি কেন?কেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কেন মানা হচ্ছে না? মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কোনও বিবৃতি দিচ্ছেন না কেন?এই দায় তো তারও।সম্প্রতি রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দল কংগ্রেস রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে ইদানীংকালের অন্যতম বড়সড় জমায়েত করে ডিজি অফিস ঘেরাও করে।কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যের আইনশঙ্খলা বলতে আর অবশিষ্ট কিছু নেই।তথাকথিত সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছয় বছর আগে রাজ্যে যে একটা সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সরকারের হাতে এখন আর রাজ্যের মানুষ সুরক্ষিত নয়। প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, লুঠপাট সংগঠিত হচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবলেই গা শিউরে উঠছে। সর্বত্র এক অরাজকতার চিত্র। শাসক দল এবং সরকারকে এনিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা দরকার। তৎসঙ্গে কড়া হাতে এর মোকাবিলা প্রয়োজন শীঘ্রই। সাধারণ মানুষ যাতে পরিত্রাণ পান। তা সুনিশ্চিত করা সরকারের একমাত্র এবং প্রধান কর্তব্য এবং সরকারকে সর্বাগ্রে এতে মনোযোগী হতে হবে। নাহলে রাজ্যের – মানুষই সময়ে এর জবাব দেবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.