সুশাসনে দলিল রেজিস্ট্রি করতে চরম দুর্ভোগের শিকার জনগণ!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুশাসনের ঠেলায় বর্তমানে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে জনগণ।শুধু হয়রানি বললে কম বলা হবে। দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে,তার উপর জনগণের বাড়তি খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ।দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলেও কোনও হেলদোল নেই জেলা প্রশাসন এবং রাজস্ব দপ্তরের।বর্তমানে সারা রাজ্যেই অনলাইন দলিল রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে।

কিন্তু এই অনলাইন জমি রেজিস্ট্রি চালু করতে গিয়ে এমন সব নিয়মকানুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে,যে কারণে সাধারণ জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।একটি দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এর মধ্যে যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তো কথাই নেই।ছয়-সাত মাসেও দলিল রেজিস্ট্রি হবে কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। নিয়মকানুনের বেড়াজালে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।এতে করে সাধারণ মানুষের সুবিধা না হলেও একাংশ সরকারী কর্মচারীর বাড়তি উপার্জন রমরমিয়ে চলছে।কাগজপত্র ভ্যারিফিকেশনের নামে সাধারণ জনগণকে চরম হয়রানি করা হচ্ছে।পারিবারিক প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে দলিল রেজিস্ট্রি করার এখন কোনও সুযোগ নেই।বর্তমান অনলাইন সিস্টেমে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে দলিল লেখক এবং আইনজীবীদের নিজেদেরই সংশি লষ্ট পোর্টালে (এনজিডিআরএস) দলিল এবং পেস্টিং পেপার আপলোড করতে হয়।দশ লক্ষ টাকার নিচে ভ্যালু হলে দাতা এবং গ্রহীতার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আপলোড করতে হয়।দশ লক্ষ টাকার উপরে হলে দাতা এবং গ্রহীতার ওই দুটি নথি ছাড়াও প্যানকার্ড আপলোড করতে হয়।কিন্তু এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়।এই প্রক্রিয়া শেষ করার পর দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য কুড়ি থেকে পঁচিশদিন পর কখনও কখনও আরও পরে তারিখ দেওয়া হয়।অভিযোগ,এই তারিখ দেওয়ার ক্ষেত্রে চলে অর্থের খেলা।

অর্থাৎ কমিশন বেশি দিলে তারিখ তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে,নতুবা মর্জিমাফিক।এখানেই শেষ নয়,কোনও কারণে যদি পুরনো দলিলের সাবেগ দাগের সাথে নতুন পরচার সাবেগ দাগ ম্যাচ না করে তাহলে রেজিস্ট্রি হবে না। এবার পুরনো দলিলের রেকর্ড অথবা পরচা বের করতে হলে কালঘাম ছুটে যায়। কবে এই রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। গাঁটের অর্থ খরচ করেও সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পুরনো দলিলের রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না।পুরনো দলিলের নকল অর্থাৎ সার্টিফায়েড কপি বের করতে হলেও একই অবস্থা। কারণ কোনও রেজিস্ট্রি অফিসেই এখন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক নেই।বর্তমানে যারা কাজ করছে, তারা কেউই জানে না কোথায় কোন নথি বা রেকর্ড আছে।তাদের পক্ষে পুরনো নথি খুঁজে বের করা,খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতো অবস্থা।ফলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও দলিলের কপি পাচ্ছে না জনগণ।নথিপত্রে নামের মধ্যে কোনও অমিল থাকলে যেমন অনেকের নামেই চন্দ্র, কুমার, বালা, রাণী ইত্যাদি থাকে। বিয়ের পর মেয়েদের টাইটেল পরিবর্তন হয়।অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভোটার কার্ডে ‘চন্দ্র’ রয়েছে, অথচ আধার কার্ডে ‘চন্দ্র’ নেই। ভোটার কার্ডে রাণী রয়েছে, আধার কার্ডে রাণী নেই।এমন ক্ষেত্রে আগে একটি অ্যাফিডেভিট দিলেই দলিল রেজিস্ট্রি করা যেতো।এখন অ্যাফিডেভিট দিলেও দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে না।এখন গেজেট নোটিফিকেশন করতে হচ্ছে। এবার গেজেট নোটিফিকেশন করতে গেলে যে প্রক্রিয়া,তাতেই চলে যাচ্ছে ছয় থেকে সাত মাস।এখানেই শেষ নয়, করতে হয় পেপার পাবলিকেশন।মোদ্দা কথা, খাজনার থেকে বাজনা বেশি। সবথেকে বিস্ময়ের ঘটনা হলো, দুর্নীতি এবং অনিয়ম কিন্তু বন্ধ নেই।অথচ সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দুর্দশা বেড়েছে চারগুণ।যে কাজ আগে দশ থেকে পনেরোদিনের মধ্যে করা যেতো এখন দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধ করার নামে পাঁচ থেকে ছয় মাস লেগে যাচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.