সুশাসনে নিগো বাণিজ্যে জড়ালো একাংশ কর্মচারী, সর্ষেতে ভূত!!

 সুশাসনে নিগো বাণিজ্যে জড়ালো একাংশ কর্মচারী, সর্ষেতে ভূত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাম আমলে শুরু হওয়া নিগো বাণিজ্য সংস্কৃতি, রাম আমলে ফুলেফেঁপে একেবারে মহাকরণ থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে নিগো বাণিজ্য ও জমি দালালি নামক সামাজিক ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ এবং আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। কেননা, যাদের হাতে এই ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের দায়িত্ব, অভিযোগ তারাও জড়িয়ে পড়ছে এই ভয়ানক কর্মকাণ্ডে।সব থেকে বিস্ময়ের ঘটনা হলো,সরকারী কর্মচারীদের একটা বড় অংশ এখন নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে।একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কর্মচারীদের একটা বড় অংশ এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ।
কখন কোন্ সরকারী দপ্তর বা অফিস থেকে টেন্ডার বের হবে, তার আগেই সব খবর চলে যাচ্ছে নিগো বাণিজ্য গ্রুপের কাছে।কারা কারা টেন্ডার ড্রপ করেছে, ঠিকাদারদের নাম-ঠিকানা সহ যাবতীয় তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে নিগো গ্রুপের কাছে। কর্মচারীদের এখটা অংশই সেই খবর পৌঁছে দিচ্ছে।এরপরই শুরু হয়ে যায় খেলা। নিগো মাফিয়া গ্রুপ হামলে পড়ছে। ঠিকাদারদের ভয়ভীতি, নানাভাবে হুমকি দিয়ে টেন্ডার তুলে নিতে বাধ্য করছে।নানাভাবে, নানা মহল থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এককথায়, কাজ কে করবে তা টেন্ডার বের হওয়ার আগেই একপ্রকার ঠিক হয়ে যায়। অর্থের বিনিময়ে কাজের গুণমানের সাথে আপোশ করা হচ্ছে।এরপর রিল পেমেন্ট হলেই নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে।
রাজধানীর ঊষাবাজারস্থিত সিপিডব্লিউডি অফিসে এমন নয় থেকে দশ জন কর্মচারী আছেন, যারা সরাসরি নিগো বাণিজ্যের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ।এদের কারণেই ঊষাবাজার এলাকায় নিগো বাণিজ্যের রমরমা।যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে এলাকায় গ্যাং ওয়ার হয়েছে। খুন খারাপি হয়েছে। বারবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।জানা গেছে, সিপিডব্লিউ’র ওই সব কর্মচারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসই নয়, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, যেমন হাউজিং বোর্ড, পূর্তদপ্তর, পূর্ত (রোড অ্যাণ্ড বিল্ডিং), পানীয় জল, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদ, পুর নিগম তালিকা অনেক লম্বা। মোদ্দা কথা একেবারে মহাকরণ থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত, সর্বত্র একই পরিস্থিতি। একাংশ কর্মচারী সরাসরি নিগো বাণিজ্য গ্রুপের সাথে সমান্তরাল যোগাযোগ রক্ষা করে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে।আরও বিস্ময়ের ঘটনা হলো, একাংশ কর্মচারী মহাকরণে বসে নিগো বাণিজ্যের কমিশন (অর্থ) কালেকশন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।কখন, কোথায় কার টেবিলে ফাইল যাচ্ছে, সেই খবরও পৌঁছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। এই চক্র সারা রাজ্যেই রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের কাছেও এই খবর আছে। কিন্তু আমলাতন্ত্র যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছে, তাতে কারও কিছু করার নেই।পুরো বিষয়টি এখন আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।কেননা, রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই-চারজন মন্ত্রীকে বাদ দিলে বাকিদের যোগ্যতা সম্পর্কে সকলের জানা হয়ে গেছে।এমন এক দুইজন মন্ত্রী আছেন, যাদের এক লাইন ইংরেজি লেখা এবং বোঝার পর্যন্ত ক্ষমতা নেই। ফলে গোটা প্রশাসন এখন আমলানির্ভর। পুলিশ প্রশাসনের একটি বড় অংশও কমিশন বাণিজ্যে যুক্ত। এমন অভিযোগ নতুন নয়। পাচারের গাড়ি কীভাবে থানার নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যায়, তা সকলের জানা। সম্প্রতি দামছড়ায় মাদক পাচারে এক পুলিশ কর্মীর যুক্ত থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
নিগো বাণিজ্য এবং জমি দালালি নিয়ে দৈনিক সংবাদে ধারাবাহিক তথ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের পর,এখন অনেকেই পদ্ধতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে নিগো বাণিজ্য ও জমি দালালির বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করছেন।ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাই না’, অনেকটা এই ধরনের প্রয়াস। অথচ কোনও ব্যবস্থা নেই। যারা ব্যবস্থা নেবে এবং যাদের উপর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল উঠছে। সম্প্রতি ধর্মনগর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে নির্বাচিত দলের কাউন্সিলারই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে।যা দলের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছে অনেকে। দলের সংগঠনেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন সাক্রম থেকে খবর এসেছে মনু বিধানসভার অন্তর্গত সুকান্ত পল্লীর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজ হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে শাসক দলের আশ্রিত নিগো মাফিয়ারা।তারা ঠিকাদারের কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে কাজ করতে দেবে না। অগত্যা ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।আর এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শাসক দলেরই স্থানীয় এক সদস্য। মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে তিনি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।বলেন, মণ্ডল থেকে এসে ঠিকাদারের কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেছে।তার প্রশ্ন এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কীভাবে চলবে?তার আরও বক্তব্য ২০১৮ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।আজ এই সব দেখতে হচ্ছে।শুধু মনু থেকেই নয়, বক্সনগরে রাস্তা নির্মাণে বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছেও কাটি টাকা দাবি করার অভিযোগ শোনা গেছে।দাবি মতো অর্থ মিটিয়ে দিলে তবেই নির্বিগ্নে কাজ করতে পারবেন ঠিকাদার।শুধু নিগো এবং জমি দালালিই নয়, রাজ্যে এবার কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও অর্থ আদায়ের মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগ শোনা গেছে। রাজধানীর রামঠাকুর কলেজ কর্তৃপক্ষের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জনমনে এবং অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।নতুবা এমন বিজ্ঞপ্তির কারণ কি? তবে কি বঙ্গের সংস্কৃতি এই রাজ্যেও আমদানি হচ্ছে? সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.