সেমিফাইনাল জিতে বিজয় উৎসবে মাতলো বিজেপি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারী মাসে। তার আগে রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে সেমিফাইনাল হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে ২০২৩ হচ্ছে ফাইনাল। উপনির্বাচনের ফলাফল থেকেই নির্ধারিত হবে ২০২৩ এ কোন দলের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে রাজ্যে। গত রবিবার উপনির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের দাবী অনুযায়ী উপনির্বাচনের সেমিফাইনালে তিন – এক ব্যবধানে জয়ী হয়েছে শাসকদল বিজেপি। সেই জয়ের আনন্দে শাসক দল বিজেপি বিজয় উৎসব উদযাপন করল।

এদিন বিকেলে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় মিছিল শুরু হয়। মিছিলে মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা থেকে শুরু করে দলের সমস্ত স্তরের নেতা নেত্রী ও কর্মীসমর্থকরা অংশ নিয়েছে। বিজয় মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।
এদিকে, প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে শাসকদল বিজেপি । একটি আসনে জয়ী হলো কংগ্রেস ।

সেই অর্থে বহু আলোচিত 2023 ফাইনালের আগে তিন – এক ব্যবধানে সেমিফাইনাল জিতলো বিজেপি । একই সাথে ২০২৩ ফাইনালের আগে রাজ্য বিধানসভায় খাতা খুললো কংগ্রেস । অন্যদিকে , ২০২৩ সালে যারা ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছিলো , সেই বামেদের অবস্থা উপভোটে আরও বেহাল হয়ে পড়েছে । ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা , উল্টো পায়ের নীচে মাটি আরও সরে গেছে । উপভোটে শক্তি বাড়লো কংগ্রেসের । অপরদিকে মুখ পুড়লো তৃণমূল কংগ্রেসের । পুর ভোটে যে ম্যাজিক দেখিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস , উপভোটে সে ম্যাজিক উধাও । চার কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে । সেই সাথে উপভোটের ফলাফল থেকে স্পষ্ট হয়েছে শাসকের প্রতি মানুষের আস্থা এখনও অটুট রয়েছে । উপভোটে প্রত্যাশিতভাবেই ৮ নং টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তথা মুখ্যমন্ত্ৰী ডা . মানিক সাহা । তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী আশিস কুমার সাহাকে ৬,১০৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন । ডা.সাহার প্রাপ্ত ভোট ১৭,১৮১ টি । কংগ্রেস প্রার্থী আশিস কুমার সাহা পেয়েছেন ১১,০৭৭ টি ভোট । এই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী রঘুনাথ সরকার পেয়েছেন মাত্র ৩,৩৭৬ টি ভোট । তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা ব্যানার্জি পেয়েছেন ৯৮৬ টি ভোট।

৬ নং আগরতলা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণ । তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী ডা . অশোক সিন্হাকে ৩,১৬৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন । সুদীপবাবুর প্রাপ্ত ভোট ১৭ , ৪৩১ টি । বিজেপি প্রার্থী ডা . অশোক সিন্‌হা পেয়েছেন ১৪ , ২৬৮ টি ভোট । এই কেন্দ্রে সিপিআই ( এম ) প্রার্থী কৃষ্ণা মজুমদার পেয়েছেন ৬,৮০৮ টি ভোট । তৃণমূল প্রার্থী পান্না দেব পেয়েছেন ৮৪২ টি ভোট । ৪৬ সুরমা তপশিলি জাতি সংরক্ষিত আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী স্বপ্না দাস পাল । তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জনজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল তিপ্ৰা মথা প্রার্থী বাবুরাম সতনামীকে ৪,৫৮৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন । স্বপ্না দাস পাল পেয়েছেন ১৬,৬৭৭ ভোট । তিপ্ৰা মথা প্রার্থী বাবুরাম সতনামী পেয়েছেন ১২,০৯৪ ভোট । এই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই ( এম ) প্রার্থী অঞ্জন দাস পেয়েছেন ৮,৪১৫ ভোট । তৃণমূল প্রার্থী অর্জুন নমঃশূদ্র পেয়েছেন ১৩৪১ ভোট ।

৫৭ যুবরাজনগর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মলিনা দেবনাথ । সিপিআই ( এম ) এর হাতে থাকা যুবরাজনগর কেন্দ্রটি শাসকদল ছিনিয়ে এনেছে উপভোটে । এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মলিনা দেবনাথ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই ( এম ) প্রার্থী শৈলেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথকে ৪,৫৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন । মলিনা দেবনাথ পেয়েছেন ১৮,৭৬৯ টি ভোট । বাম প্রার্থী শৈলেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ পেয়েছেন ১৪,১৯৭ টি ভোট । এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতা দেবনাথ পেয়েছেন ১৪৪০ টি ভোট। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৃণাল কান্তি দেবনাথ পেয়েছেন ১০৮০ টি ভোট । সব মিলিয়ে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগে , রাজ্যের চার বিধানসভার উপনির্বাচনকে সব রাজনৈতিক দলই সেমিফাইনাল হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল । এই সেমিফাইনালের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ২০২৩ এ ফাইনালে পাল্লা ভারী কার ।

সেই অর্থে রবিবার চার কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশের পর তা স্পষ্ট হয়ে গেছে । শুধু তাই নয় , এই উপনির্বাচনের ফলাফল থেকে অনেক কিছু বার্তাও উঠে এসেছে । যেমন ৬ নং আগরতলা কেন্দ্রে সুদীপ রায় বর্মণ জয়ী হলেও ২০১৮ সালে বিধানসভায় প্রাপ্ত ভোট থেকে অনেকটাই কমে গেছে । ২০১৮ সালে বিজেপির টিকিটেই তিনি এই কেন্দ্রে পেয়েছিলেন ২৫,২৩৪ ভোট সিপিআই ( এম ) প্রার্থী কৃষ্ণা মজুমদার পেয়েছিলেন ১৭,৮৫২ ভোট । এবার উপভোটে কৃষ্ণা পেয়েছেন মাত্র ৬,৮০৮ ভোট । সুদীপবাবু উপভোটে পেয়েছেন ১৭,৪৩১ ভোট । রাজনৈতিক মহলের অভিমত বাম ভোট বিভাজনেই সুদীপবাবুর জয়কে নিশ্চিত করেছে । উপভোটে বিজেপির টিকিটে ডা . অশোক সিন্হা যে ১৪,২৬৮ টি ভোট পেয়েছেন , বলতে গেলে পুরোটাই সুদীপবাবুর এবং কিছুটা বামেদের ভোট ।
এটা যেমন একটা দিক , তেমনি ৬ নং আগরতলা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও এই কেন্দ্রে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত । এই উপনির্বাচন থেকে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে , তা হলো জনজাতি মানেই তিপ্রা মথা এই ধারণাও ধাক্কা খেয়েছে উপভোটে । নির্বাচনের আগে সকল মহল থেকেই দাবি ও ধারণা করা হয়েছিল যে ৪৬ সুরমা কেন্দ্রে সকলকে টেক্কা দিয়ে জয়ী হবে তিপ্রা মথা প্রার্থী বাবুরাম সতনামী । কিন্তু ফলাফল বলে দিয়েছে অন্য কথা । জনজাতি মানেই যে তিপ্রা মথা , সেই ধারণাকে ধাক্কা দিয়েছে উপভোটের ফলাফল । তবে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে সুরমার হেভিওয়েট বাম প্রার্থী অঞ্জন দাসকে তৃতীয়স্থানে ঠেলে দিয়ে মথার দ্বিতীয়স্থানে উঠে আসা । এর থেকে স্পষ্ট মথার এই উত্থান ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদল বিজেপিকেই সুবিধা করে দেবে ।

কারণ , বামেদের জনজাতি ভোট ব্যাঙ্ক যদি মথায় চলে যায় , সুবিধা হবে বিজেপির । যেটা হয়েছে উপভোটে সুরমায় । অপরদিকে চার কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেসের জামানত জব্দ হয়েছে । যে দল ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় সরকার গড়বে বলে দাবি করেছিল , সেই দলের চার প্রার্থীর মোট প্রাপ্ত ভোট মাত্র ৪,২৪৯ টি ।

অন্যদিকে , রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিআই ( এম ) সেমিফাইনালে একেবারে মাঠের বাইরে চলে গেছে । চার কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭ যুবরাজনগর তাদের হাতে ছিলো । ২০১৮ সালে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও যুবরাজনগর ধরে রেখেছিলেন বামনেতা প্রয়াত রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ।

প্রচণ্ড গেরুয়া ঝড়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে হলেও রমেন্দ্রবাবু নিজের আসন ধরে রেখেছিলেন । ২০১৮ সালে রমেন্দ্রবাবু পেয়েছিলেন ১৮,১৪৭ ভোট । আর বিজেপি প্রার্থী যাদবলাল দেবনাথ পেয়েছিলেন ১৭,৪৯৮ ভোট । উপভোটে সেই কেন্দ্রটি বামেদের হাতছাড়া হলো । বিধানসভায় বামেদের প্রতিনিধি কমে দাঁড়ালো ১৫ – তে । অপরদিকে সুদীপবাবুর ছায়াসঙ্গী আশিস কুমার সাহাকে শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের মুখ দেখতে হলো । রাজনৈতিক মহলের মতে সুরমার আশিস দাসের মতো টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রে আশিস কুমার সাহার পরাজয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বড় ক্ষতি বলে মনে করা হচ্ছে । সুদীপবাবু নিজের ইমেজ কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেও আশিসবাবুর পক্ষে তা সম্ভব হয়নি । ২০১৮ সালে বিজেপির টিকিটে এই কেন্দ্রেই তিনি পেয়েছিলেন ২৪,২৯৩ ভোট । উপভোটে তিনি পেয়েছেন ১১,০৭৭ ভোট । এই কেন্দ্রের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ২০১৮ সালে আশিসবাবু যে ভোট পেয়েছিলেন তার একটি বড় অংশ এবং বামেদের বড় অংশের ভোট মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহার পক্ষে গেছে । এই উপভোট আরও একটি বার্তা দিয়েছে , তা হলো শাসকদলের প্রতি মানুষের আস্থা । বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ও অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে , সঠিকভাবে ভোট হলে শাসকদল বিজেপি চার আসনেই পরাজিত হবে । এই দাবি ও অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হয়েছে । সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে শাসকদলও যে জয়ী হতে পারে সেটা কিন্তু এই উপভোটে প্রমাণিত হয়েছে । ছাপ্পা ভোট , ভোটদানে বাধাদান এবং বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির মধ্যে ভোটদান পর্ব চললেও প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও ছিলো ইতিবাচক । অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রশাসন ও কমিশন তৎপরতার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । সব মিলিয়ে সেমিফাইনাল বেশ জমজমাটভাবেই সম্পন্ন হয়েছে । এখন ফাইনালের জন্য অপেক্ষা ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

11 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

11 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago