সেয়ানে সেয়ানে লড়াই!!
৪ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল আপাতত ১-১ অর্থাৎ বলা যায় সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে বিজেপি এবং ইন্ডিয়া জোট। যদিও হরিয়ানায় বিজেপির অপ্রত্যাশিত জয় বিজেপিকে এক্সট্রা মাইলেজ পাইয়ে দিয়েছে।বিজেপির আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। বিজেপি ধরেই নিয়েছিলো হরিয়ানা এবার তাদের হাতছাড়া হচ্ছেই।কিন্তু ফলাফল।সবাইকে চমকে দিয়েছে।কংগ্রেস অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল হরিয়ানা নিয়ে।এই আত্মবিশ্বাসই কি শেষ পর্যন্ত তাদের কাল হলো?জম্মু কাশ্মীরে দশ বছর পর ভোটে জিতে ওমর আবদুল্লার দল এনসি এবং কংগ্রেস জোট অর্থাৎ ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে।সেই নিরিখে দুই রাজ্যের ভোটের ফলাফল আপাতত দাঁড়িয়েছে ১-১।এবার ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের ফলাফলের দিকে গোটা দেশের নজর।সেই রাজ্যগুলিতে ফলাফল কী হবে তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।ঝাড়খণ্ডে এখন ইন্ডিয়া জোটের সরকার চলছে।মহারাষ্ট্রে চলছে এনডিএ জোট সরকার।দুই রাজ্যেই কি গণেশ উল্টাবে? দুই রাজ্যে যদি গণেশ উল্টায় তাহলে ফলাফল ড্র হবে অর্থাৎ ১-১। কিন্তু দুই রাজ্যেই যদি বিজেপি তথা এনডিএ জেতে তাহলে ফলাফল হবে ৩-১ এবং ইন্ডিয়ার পক্ষে গেলে তাও হবে ৩- ১।সুতরাং মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড নিয়েই এখন বড় ভাবনা দুই শিবিরে। ঝাড়খণ্ডে বর্তমানে জেএমএম নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের সরকার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিলো দুর্নীতি মামলায়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে তিনি। কংগ্রেস এবং বামেদের সমর্থনে এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন জেএমএম। তাই এবারও জেএমএম নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। হরিয়ানা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কংগ্রেস আগে থেকে সতর্ক। জোট নিয়ে কংগ্রেস এবার নমনীয় ভাব নিয়ে এগোচ্ছে। অর্থাৎ ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-ই বড় ভাই। সুতরাং জেএমএম যা বলে তাই মেনে নিতে হবে কংগ্রেস এবং বামেদের। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ অনেক আগে থেকেই এবার ঝাড়খণ্ড ছিনিয়ে নিতে তৎপর। ঝাড়খণ্ডে এর আগেও দুই-তিনবার সরকার ফেলতে তৎপর হয়েছিলো বিজেপি। কিন্তু বিজেপি সফল হতে পারেনি। এবার তাই ভোটে সরকারকে ফেলতে বিজেপি ব্যাপক তৎপর। বিজেরি এবার ঝাড়খণ্ডে বহু আগে থেকেই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে প্রভারি নিয়োগ করেছে। হিমন্ত দায়িত্ব পেয়ে ঝাড়খণ্ডে তার রাজনৈতিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে গত কয়েক মাস ধরেই। প্রায় ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে একেকবার ইস্যু ঠিক করছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। একই সাথে রাজ্যে রাজনৈতিক সংগঠন সহ নানা কৌশলও বাতলে চলেছেন। ফলে এবার ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় টিকে থাকা জেএমএমের পক্ষে এত সুবিধা হবে না।
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বড় রাজ্য মহারাষ্ট্র ভোটও এবার এক চকমপ্রদ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে মহাবিকাশ আগাধির সরকার গঠিত হয়েছিলো। শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি জোট করে রাজ্যে সরকার গড়েছিলো। অন্যদিকে বিজেপি, কিন্তু এই পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যেই এনসিপি ভেঙে দুই টুকরো হয়েছে। শারদ পাওয়ারের কাছ থেকে আসল এনসিপির তকমা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তেমনি উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। শিবসেনা ভেঙে নয়া শিবসেনা গঠিত হয়েছে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে। বর্তমানে নয়া শিবসেনা, নয়া এনসিপি এবং বিজেপি মিলিয়ে মহাজ্যোতি জোট রাজ্যের ক্ষমতায়। এবার সেই জোটের সাথে মহাবিকাশ আগাধির লড়াই। যদিও গত জুন মাসে লোকসভা ভোটের যে ফল বের হয় তাতে মহারাষ্ট্রে মহাবিকাশ আগাধি আশাতীত ফল করে সবাইকে চমকে দেয়। সেই থেকে মহাবিকাশ আগাধির পক্ষে রাজ্যে হাওয়া বইছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বিধানসভা ভোটে তাই এবার সবাই মনে করছে মহারাষ্ট্র ভোেট দুই শিবিরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিরোধী ইন্ডিয়া জ়োট মনে করছে এই ভোট তাদেরকে অপমানের বদলা নেবার সুযোগ। অন্যদিকে বিজেপির কাছে মহারাষ্ট্র ধরে রাখা প্রেস্টিজ ফাইট। দুই রাজ্যের ভোট এবার তাই ইন্ডিয়া এবং এনডিএর কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই।