সোনামুড়ায় জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, বিধানসভার পবিত্রতা রক্ষায় বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করুন।

 সোনামুড়ায় জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, বিধানসভার পবিত্রতা রক্ষায় বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করুন।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- সোনামুড়া মহকুমার ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশের শেষদিনে শাসকদল বিজেপির আজ চাঁদের হাট বসেছিল সোনামুড়া মহকুমা সদরে। কোনও নির্বাচন উপলক্ষে শাসকদলের এত সংখ্যক প্রথম সারির নেতা মন্ত্রীর একসঙ্গে একই মঞ্চে শামিল হতে দেখেনি মহকুমা সদরের মানুষ। দুই প্রার্থী বিন্দু দেবনাথ, তফাজ্জল হোসেন কর্মী সমর্থকদের নিয়ে হুডখোলা গাড়ি সুসজ্জিত করে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে এসেছেন মহকুমা সদরে। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, মন্ত্রী রতনলাল নাথ, সুশান্ত চৌধুরী, শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিকাশ দেববর্মা, শান্তনা চাকমা, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ, বিজেপি দলের রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য সকলে একসঙ্গে উপস্থিত সোনামুড়া নেতাজী চৌমুহনীতে আয়োজিত সমাবেশ মঞ্চে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান সবকা সাথ সবকা বিকাশ এই দিশাতেই রাজ্য চলছে। বিরোধী দলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এবারের বাজেট অধিবেশনে চিৎকার চেঁচামেচি করে পবিত্র বিধানসভাকে কলঙ্কিত করার প্রমাণ দিয়েছে। কি ধরনের জঘন্য কাজ বিরোধীরা করেছে তা সকলেই অবগত। এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা বিজেপি দল বরদাস্ত করে না। এবারের উপনির্বাচনে ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করে পবিত্র বিধানসভার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বার্তা দেন। যারা বিধানসভার পবিত্রতাকে বিনষ্ট করার কাজে লিপ্ত তাদের কোনও ভোট নয়। কংগ্রেস দলের বিধায়কের নাম উল্লেখ না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিধানসভায় তিনি গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্রতা রক্ষা করার কথা বলেছেন। এ এক অদ্ভূত নাটক বলে মন্তব্য করে বলেন, যাদের ত্রিপুরাবাসী ত্রিপুরা থেকে তাড়িয়েছে। যারা ত্রিপুরায় মা- বোনেদের ইজ্জত নিয়েছে সেই দুই দল এখন একে অপরের হাত ধরছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। ত্রিপুরাবাসীর দুর্ভাগ্য এই দৃশ্যও তাদের দেখতে হল। সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল কিনা সিপিএমের দলীয় অফিসে বসে বৈঠক করেছেন। তেমনি ত্রিপুরা পঁয়ত্রিশ বছর শাসন করা দল কংগ্রেস দলের অফিসে বৈঠক করছেন। কংগ্রেস দল সিপিএম দলের পতাকা তলে শামিল হচ্ছে। রাজ্য রাজনীতিতে তাদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। যাদের কাজ ত্রিপুরা অরাজকতা সৃষ্টি করা তাদের মানুষ আর পবিত্র বিধানসভায় পাঠাতে চায় না। রাজ্যের উন্নয়নে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উন্নয়ন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে নারাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাতে হীরা মডেল উপহার দিয়েছেন। হীরা মডেলের অর্থ বর্তমানে সকলের কাছে পরিষ্কার। এর অন্যতম হলো রেলওয়ে। ত্রিপুরা থেকে দেশের নানা প্রান্তে বর্তমানে এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে যাচ্ছে। এই সরকার কাজে বিশ্বাস করে। পুরসভা নগর পঞ্চায়েত এমনকী গ্রামপঞ্চায়েত স্তরে বর্তমানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। ডবল ইঞ্জিনের সরকার রয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই উন্নয়ন দিশাকে তিনি ট্রিপল ইঞ্জিনের সরকারও বলা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। ভারতবর্ষের প্রায় সব রাজ্যেই বিজেপি সরকার রয়েছে। তেমনি সব রাজ্যেই বিজেপির সংগঠন রয়েছে। ত্রিপুরার মানুষের সবচেয়ে বেশি সমস্যা রয়েছে স্বাস্থ্য নিয়ে। সব পরিবারের আয়ুষ্মান কার্ড নেই।সে জন্য রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য এবারের বাজেটে ঊনষাট কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এই সরকার মানুষকে নিয়ে চলতে চায়, মানুষের জন্য কাজ করতে চায়, এই সরকার কোনও মিথ্যা কথা যেমন বলে না তেমনি মিথ্যা। প্রতিশ্রুতিও দেয় না। ত্রিপুরায় এই বিধানসভা উপনির্বাচনের দিকে সারা ভারত তাকিয়ে রয়েছে। তেমনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাকিয়ে আছে। এই সরকার উন্নয়নের দিশায় কাজ করছে। এই দিশাতেই ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান। সভায় প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ বলেন, এবারের এই উপনির্বাচনে শান্তির জন্য, সম্প্রীতির জন্য, উন্নয়নের জন্য বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করতে হবে। বিরোধী দলগুলির বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি দল প্রতি নির্বাচনেই বলতে থাকে ‘আইয়া পড়তাছি’। এই দল বর্তমানে অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে তিন বিধায়কে নেমে এসেছে। ধনপুরের নির্বাচনে সবসময়েই সিপিএম জয়ী হয়েও ধনপুরের উন্নয়নে কোনও কাজ করেনি। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ধনপুরের প্রতিনিধি তারপরও ধনপুরের অবস্থা কি? সিপিএম দল ক্ষমতায় ছিল, বর্তমানে বিরোধী দল। এই দল ক্ষমতায় থাকাকালেও যেমন কিছু করতে পারেনি। তেমনি এখনও কিছু করতে পারবে না। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার মাত্র পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় এসেছে। পাঁচ বছরের ক্ষমতায় দুই বছর করোনার জন্য কোনও কাজ করা যায়নি। উন্নয়নের প্রসঙ্গে যীষ্ণু দেববর্মণ বলেন, বাম সরকারের আমলে সোনামুড়া-আগরতলা সড়কের কি অবস্থা ছিল? এখন কি হয়েছে, তা সকলেই অনুভব করতে ও দেখতে পারছেন। গত পাঁচ বছর বিধানসভায় বিরোধী দলের কি ভূমিকা ছিল সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই দল ক্ষমতায় থাকাকালে ত্রিপুরার জন্য এই ধনপুরের জন্য কিছুই করেনি। গত পাঁচ বছরে বিধানসভায় তাদের ভূমিকা দেখেছি, তারা ত্রিপুরায় উন্নয়নের জন্য কিছুই করতে পারে না। ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পাঁচ বছরে অনেক কাজ করেছে।আরও অনেক কাজ করতে হবে।এই উন্নয়নের দিশারী করতে ধনপুর ও বক্সনগরের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেবার দিনে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন।এই দুই কেন্দ্রের উন্নয়ন যাতে হয় সেই প্রয়াস থাকবে।সভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেবার দিনে কার্যকর্তাদের উপস্থিতিতেই প্রমাণ করে এই দুই কেন্দ্রের ফলাফল কী হবে। গত তিন মাস ধরে বিরোধীরা কেবল রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। সিপিএম পঁচিশ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে আজকে কংগ্রেস দলের হাত ধরেছে। দীর্ঘ শাসনের পর আজ দেউলিয়াপনায় কংগ্রেসের সঙ্গী হয়েছে। এই নির্বাচনে আঁতাত করে মুখিয়ে স্বপ্ন দেখছে। বিজেপিকে পরাজয় করার। দিবাস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু আজকের মনোনয়নপত্র জমা দেবার দিনে কার্যকর্তাদের উপস্থিতিতে সিপিএম দলের রাতের ঘুম উড়ে যাবে। আমরা সেই ডবল ইঞ্জিনের সরকার মানুষের জন্য কাজ করবে, নারীদের জন্য কাজ করবে। বিগত সরকার অর্থাৎ দীর্ঘ বামশাসনে গরিবদের কেবল শোষণ করেছে। ইনক্লাব জিন্দাবাদ ধ্বনী দিয়েছে, আর বলেছে আমরা খাব তেমরা বাদ। আর এই সরকার সবকা সাথ সবকা বিকাশের সরকার। সামাজিক ভাতা দুই হাজার টাকা করেছে। আরও ত্রিশ হাজার নতুনভাবে সামাজিক ভাতা দেবে। এর জন্য কোনও আন্দোলন করতে হয়নি। সিপিএম কুচক্রীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সিপিএম-কংগ্রেসের অশুভ আঁতাঁতকে ধনপুর, বক্সনগরের মানুষ উচিৎ শিক্ষা দেবে। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, আজ থেকে প্রতি বুথে বুথে কার্যকর্তারা যাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আজকের এই সমাবেশে মন্ত্রী রতনলাল নাথ, শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিকাশ দেববর্মা, প্রমুখও ভাষণ দেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.