সোনিয়ার নিবন্ধ, শাসককে তির!!
কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে শাসক বিজেপির চোখ খুলে দেবার রাস্তা খুঁজলেন।সোনিয়ার বার্তা – গণতান্ত্রিক কর্তব্য মেটাতে এবং পালনে শাসক বিজেপি তথা ট্রেজারি বেঞ্চ এগিয়ে আসবে এ মর্মে আমি আশা করি।একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী তার নিবন্ধে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেশের জনগণের রায় থেকে শুরু করে সংসদে স্পিকার নির্বাচন,নির্বাচন চলাকালীন তার ঘৃণাসূচক ভাষা, বিভাজনের রাজনীতি, নিট দুর্নীতি থেকে মণিপুরে হিংসা, গত সংসদে একের পর এক সাংসদদের বহিষ্কার, পরবর্তীতে একের পর এক বিল পাস করানো,জরুরি অবস্থা সব বিষয়ই উল্লেখ করেছেন।পরিশেষে সোনিয়া বলেছেন, ট্রেজারি বেঞ্চ সংসদে গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার, কর্তব্য, দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে বলে আমি আশা করতেই পারি।
এবার অষ্টাদশ লোকসভায় প্রার্থী হননি সোনিয়া।কিন্তু রাজ্যসভায় রাজস্থান থেকে জিতে আগেই তিনি সাংসদ হয়ে গেছেন।তার ছেড়ে যাওয়া আসন রায়বেরেলিতে দাঁড়িয়ে জিতে এসেছেন পুত্র তথা এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাণভোমরা রাহুল গান্ধী।শুধু জয়ী নয়, রাহুল গান্ধী রায়বেরেলি থেকে বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।আমেথি এবং রায়বেরেলিতে যেদিন কংগ্রেস প্রার্থীপদ ঘোষণা করে সেদিন প্রধানমন্ত্রী মোদি ছিলেন ভোটের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে। ৩মে মনোনয়নের অন্তিম দিনে রাহুল গান্ধীকে রায়বেরেলিতে এবং আমেথিতে কিশোরীলাল শর্মাকে প্রার্থী করানোর পর অনেকেই চমকে ছিলেন। তখন অনেকেই বলেছিলেন যে, স্মৃতি ইরানীকে বোধহয় ওয়াকওভার দিচ্ছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী কেন আমেথি থেকে রায়বেরেলিতে এসেছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করেছিলেন,রাহুল বলেন ‘ডরো মত’।আমি বলি কী ‘ভাগো মত’।একজন তো আগেই পালিয়েছেন। (সোনিয়াকে উদ্দেশ করে)।সেই সোনিয়া এবার ভোটের পর নিবন্ধ লিখে মোদিকে একহাত নিয়েছেন।সোনিয়ার মতে, প্রধানমন্ত্রী মানতেই চাইছেন না যে এবার মানুষের রায় তার পাশে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর আচরণে এর কোনও প্রতিফলনও নেই। প্রধানমন্ত্রী একদিকে মুখে বলছেন বিরোধীদের সহযোগিতা চাই। অন্যদিকে তিনিই সংঘাত জারি রাখতে উৎসাহ দিচ্ছেন।শাসকদলের আচরণে বিন্দুমাত্র কোনও পরিবর্তন নেই।স্পিকার পদ নিয়ে ঐকমত্য গড়ে ওঠুক তা আমরা চেয়েছিলাম।কিন্তু ডেপুটি স্পিকার আমাদের দিতে চাইলো না শাসক।ফলে প্রথমদিন থেকেই সরকারই চাইছে সংঘাত হোক।
নীট নিয়েও মোদিকে একহাত নিয়ে সোনিয়া বলেছেন, সীমাহীন দুর্নীতি। গত দশ বছরে শুধু নিট নয়, ইউজিসি, এনসিইআরটি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও শেষ করে দেওয়া হয়েছে।কোনও হেলদোল নেই।
গত সংসদে বিরোধীদের কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।সাংসদদের বহিষ্কার করে একের পর এক বিতর্কিত বিল পাস করানো হয়েছে।
২০২২-এর ফেব্রুয়ারী মাসে মণিপুরে বিধানসভা ভোট গেছে।বিজেপি নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে।২০২৩-র মে মাস থেকে মাত্র পনেরো মাসের ব্যবধানে মণিপুর অগ্নিগর্ভ।প্রধানমন্ত্রী গেলেন না।কোনও আলোচনা নেই। সমস্যা, হিংসা দমনে কোনও ভূমিকা নেই।সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে মণিপুরের দুটি আসন কংগ্রেসের দখলে এসেছে। মানুষের এই রায় আসার পরও মোদির কোনও ভূমিকাই নেই মণিপুর নিয়ে। এতে অবশ্য সোনিয়া আশ্চর্য হননি।কিন্তু সরকারের কার্যকরী ভূমিকা চান তিনি। সংসদে মূল ইস্যু নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে স্পিকারকে দিয়ে ১৯৭৫ সালের ইমারজেন্সির যে বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে তা দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার অপকৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।সোনিয়া মোদিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭৫ সালে ইমারজেন্সি জমানা চললেও ১৯৭৭ সালে কিন্তু বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন ইন্দিরা। আপনার থেকেও বেশি গরিষ্ঠতা নিয়ে। এটা ভুলে যাবেন না।
সোনিয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন,মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন,সবকা সাথ, সবকা বিকাশ।কিন্তু তার বিভাজনের রাজনীতির কারণে মানুষ তার ৪০০ পারের স্লোগানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।তাই তাকে শক্তিশালী বার্তা দিয়ে মানুষই বলে দিয়েছেন, অনেক হয়েছে, আর নয়।
এবারের সংসদে বিরোধীরা যে আগের বিরোধী নেই তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সোনিয়া।বিরোধীদের কণ্ঠস্বর সংসদে তুলতেই হবে- দেশের মানুষ এ রায়ই দিয়েছে। সরকারকে তা শুনতেই হবে। সোনিয়া আশা করেছেন, শাসক, ট্রেজারির শুভবুদ্ধির উদয় হবে।গণতান্ত্রিক কর্তব্য মেনে তারা চলবে। নজিরবিহীনভাবে সোনিয়া গান্ধী যেভাবে পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে শাসক এবং মোদিকে আক্রমণ করেছেন তাও এককথায় নজিরবিহীন। দেখার, শাসক তাদের মতিগতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয় কিনা। আপাতদৃষ্টিতে সোনিয়া এই ধরনের অভিমত পোষণ করলেও শাসকের আচরণে এর কোনও প্রতিফলন পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।