বিজেপির অঙ্ক ও ইডি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোনিয়া ও রাহুলকে তলব করেছে । সোনিয়াকে আগামী ৮ জুন এবং ৫ জুন রাহুল গান্ধীকে তলব করেছে ইডি । বিজেপি নেতা সুব্রহ্মনিয়ন স্বামীর দায়ের করে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলাটি আসলে বেশ পুরনো । এই ন্যাশনাল হেরাল্ডের ইতিহাসটাও বেশ চমকপ্রদ । দেশ তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন । সময়টা ১৯৩৮ সাল । কংগ্রেস দলের ভেতরকার দুই ধারা চরমপন্থা আর উদারপন্থা । স্বাধীনতাকামী দুই গোষ্ঠীই তখন ইংরেজদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতালাভের জন্য প্রহর গুনছে । এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েই জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের উদারপন্থী অংশ এবং অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মিলে ১৯৪২ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের সূচনা করেছিলেন । এই সংবাদপত্রটির পরিচালন কর্তৃপক্ষ ছিলো অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড । দেশ স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস দল এই ন্যাশনাল হেরাল্ড কাগজটিকে কংগ্রেসের মুখপত্র হিসাবে ঘোষণা করে । সেই সময় ন্যাশনাল হেরাল্ড ছাড়াও অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও দুখানা কাগজ ছাপা হতো ।

এর একটির প্রকাশনা ছিল হিন্দীতে এবং অপরটি উর্দু ভাষায় । দীর্ঘদিন চালিয়ে যাবার পর আর্থিক সঙ্কট এবং ঋণের দায়ে ২০০৮ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড কাগজটি বন্ধ হয়ে যায় । তারপরই প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মনিয়ম স্বামী দিল্লী হাইকোর্টে ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পত্তি অপব্যবহারের অভিযোগে সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন । তার অভিযোগ ছিল একটি বেসরকারী সংস্থা ইয়াং ইণ্ডিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবার এই অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করেছিল এবং যার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ছিল রাহুল গান্ধীর হাতে । সেই থেকে এই মামলায় বহু জলঘোলার পর ২০১৪ সালে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ন্যাশনাল হেরাল্ডের তদন্ত শুরু করে । স্বামীর বক্তব্য ছিল ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পত্তি হাতবদলে লাভবান হয়েছেন সোনিয়া – রাহুল । যদিও এই মামলায় তদন্তকাজ চালানোর পর অভিযোগের সারবত্তা বিশেষ না থাকায় মামলাটি গুটিয়ে নেয় ইডি । কিন্তু ২০১৮ সালে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের চাপের মুখে ফের তদন্তকাজে নামে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । বুধবার ইডির এই নোটিশের পরই রাজনৈতিক মহলের জোর গুঞ্জন শুরু হয় । কংগ্রেসের সরাসরি অভিযোগ এ হল প্রতিহিংসার রাজনীতির নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত । রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই হোক কিংবা অভিযোগের সারবত্তির নিরিখেই হোক , গান্ধী পরিবারের দুই শীর্ষ ব্যক্তিকে যে সময়টুকুতে মামলার নোটিশ ধরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে , তার পেছনে রাজনৈতিক অংকই যে প্রধান বিবেচ্য হিসাবে সরকারের কুশীলবদের মাথায় কাজ করেছে সেটা উপলব্ধি করতে অক্সফোর্ড কিংবা কেমব্রিজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হওয়ার প্রয়োজন নেই ।

সাধারণ বিচারবুদ্ধি আর চলমান রাজনীতির অঙ্কের হিসাব কষেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় । কারণ , চলতি জুন মাসের ১৩ তারিখ রাজ্যসভার ৫৭ টি আসনের নির্বাচন । তার পর জুলাইয়ের প্রথমদিকে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন । জয়ী হওয়ার ব্যাপারে বিজেপি অনেকটা আশাবাদী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসাবে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে শাসক শক্তি এখনও স্বাচ্ছন্দোর অবস্থায় নেই । জুনের রাজ্যসভার ভোটে জয়ী হয়ে আসার পর বিজেপির অবস্থা অনেকটা শোধরালেও রাষ্ট্রপতি ভোটে নিশ্চিত জয়ের অবস্থায় দল নেই । ইতিমধ্যেই তাদের শরিকি বিরোধে অনেকেই পদ্মশিবির ছেড়েছেন । এই অবস্থায় বিরোধীরা যাতে কোনভাবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে কোন প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারে সেই লক্ষ্যেই ইডিকে দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভোটের আগে কংগ্রেসকে অনেকটা হেনস্তার মাধ্যমে দুর্বল করা এবং বিরোধী জোট দানাবাঁধার তাঁর আগেই তাকে ভেঙে দেওয়ার কৌশল নিয়ে এই তলবি নোটিশ । মনে রাখতে হবে , বিগত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী ছিলেন তখন কংগ্রেস প্রার্থী । যদিও এই কংগ্রেস প্রার্থীকে বৃত্ত করেই হিংসভাগ বিরোধী জোটবদ্ধ হয়েছিল । বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের মুখে রয়েছেন বিরোধী দলের প্রায় সব নেতৃবৃন্দ । শারদ পাওয়ার থেকে শুরু করে লালুপ্রসাদ , পুত্র তেজস্বী , ফারুক আবদুল্লাহ , ওমর আবদুল্লাহ , মায়াবতী , মুলায়ম , অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় , তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও – বাদ নেই কেউই । সেই কৌশলের অঙ্গ হিসাবেই এবার সোনিয়া – রাহুলকে টেনে আনা হল তদন্তের দরজায় । লক্ষ্য একটাই , আসন্ন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের নখ দাঁত ভেঙে দিয়ে বিরোধীদের অভিন্ন প্রার্থী দেওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে বিষহীন ঢোঁড়া সাপে পরিণত করা । যাতে শুধু ফোঁস করা ছাড়া আর কিছুই তাদের করার অবস্থায় থাকবে না । এতে করে শুধু রাষ্ট্রপতি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনই নয় , আগামী ২০২৪ পর্যন্ত লোকসভা ভোটে বিরোধীরা যাতে এক ছাতার তলায় না আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করা । কিন্তু বিজেপির এই খেলা আদৌ কতটা কাজে আসবে সেটাই এখন দেখার ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

18 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

18 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago