স্টেট লোগোর ডিজাইন চুরি ও জালিয়াতির অভিযোগ শিল্পীর!!

 স্টেট লোগোর ডিজাইন চুরি ও জালিয়াতির অভিযোগ শিল্পীর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুশাসনে একের পর এক দুর্নীতি,জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে।এবার খােদ রাজ্য সরকার এবং রাজ্য তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের বিরুদ্ধে ‘স্টেট লোগো’ জালিয়াতি এবং লোগোর ডিজাইন চুরির অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের বরিষ্ঠ এবং খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী অপরেশ পাল। শিল্পীর অভিযোগ, ‘স্টেট লোগো’ নিয়ে রাজ্য সরকার এবং তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর তাঁর সাথে প্রতারণা করেছে। তাঁর তৈরি ‘স্টেট লোগো’র ডিজাইন চুরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শ্রেষ্ঠ লোগো নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটির সাথেও প্রতারণা করা হয়েছে বলে মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন শিল্পী অপরেশ পাল। এখানেই শেষ নয়, ক্ষোভে, দুঃখে এবং অপমানিত হয়ে অপরেশবাবু বিস্তারিত উল্লেখ করে ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যের চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পী মহল থেকে শুরু করে জনসাধানের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার
সৃষ্টি হয়েছে।প্রশ্ন উঠেছে, এই সরকার কীভাবে সুশাসন ও স্বচ্ছতার দাবি করে প্রচার করে? অপরেশবাবুর অভিযোগমূলে জানা যায়, গত (২০২৩ সালের) জুলাই মাসে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর, ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য একটি ‘স্টেট লোগো’ প্রবর্তন করার লক্ষ্যে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যের সকল অংশের চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পীদের কাছে তাঁদের তৈরি মৌলিক লোগো জমা দেবার জন্য আবেদন জানায়। একই সাথে জমাকৃত লোগোগুলি থেকে শ্রেষ্ঠ লোগো নির্বাচনের জন্য ত্রিপুরা সরকারী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে মাথায় রেখে পাঁচজন চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পীকে নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করে।
ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক রাজ্যের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী অপরেশ পালও উৎসাহিত হয় একটি লোগোর ডিজাইন জমা দেন। নির্বাচক মণ্ডলীর বিচারে অপরেশবাবুর লোগোটি শ্রেষ্ঠ লোগো হিসাবে মনোনীত হয়। পরবর্তী সময় তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা সঞ্জীব চাকমা অপরেশ বাবুকে তাঁর তৈরি লোগো নির্বাচিত হওয়ার কথা জানান। একই সাথে বলেন যে।দপ্তর কিছু টেকনিক্যাল কারণে উক্ত লোগোটিতে সামান্য কিছু পরিবর্তন করতে চান। সেই মতো ২০২৩-এর আগষ্ট মাস থেকে ২০২৪- এর জানুয়ারী পর্যন্ত দপ্তরের নির্দেশ মতো অপরেশবাবু বেশ কয়েকবার তাঁর তৈরি লোগোটিতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছেন। অপরেশবাবু জানিয়েছেন, দপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক তিনি লোগোটি ৯ বার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছেন। জানুয়ারী মাসের পর থেকে দপ্তর অপরেশবাবুর সাথে আর কোনও যোগাযোগ করেনি। হঠাৎ করে প্রায় পাঁচ ছয় মাস পর তিনি পত্রিকায় দেখেন তাঁর তৈরি করা সর্বশেষ লোগোটির সামান্য পরিবর্তন (আনুমানিক ৫শতাংশ) অর্থাৎ লোগোর নীচে যে ফয়েলটি ছিল সেটিকে কপি করে ফয়েলের দুটি মাথা শুধু বাঁকা করে দিয়ে, সেটিকেই ‘স্টেট লোগো’ হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচিত ‘স্টেট লোগো’র রিজলিউশনও অত্যন্ত কম। যে কারণে লোগোটি ফেটে যাচ্ছে। নিজেই বিস্মিত অপরেশবাবু পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নির্বাচিত লোগোটি দপ্তরের একজন কর্মীকে দিয়ে করানো হয়েছে। দপ্তরের ওই কর্মীকেই স্টেট লোগোর জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে, যে নাকি প্রতিযোগিতাতেই অংশ নেয়নি। এই ঘটনায় অত্যন্ত অপমানিত অপরেশবাবু পরে দপ্তরের ‘স্টেট লোগো’-র ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানতে পারেন, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত লোগোটিকে বাতিল করে দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ‘ইনহাউজ’ কোনোও শিল্পীকে দিয়ে লোগো ডিজাইন করানোর জন্য। সেই অনুযায়ী দপ্তরের একজন শিল্পী নাকি ১১টি লোগোর ডিজাইন জমা দিয়েছেন। তার মধ্য থেকে একটি স্টেট লোগো হিসাবে চয়ন করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে অপরেশবাবুর বক্তব্য এবং অভিযোগ উনার তৈরি করা লোগো ডিজাইনটিকে কপিপেস্ট করে (চুরি করে) সামান্য পরিবর্তন এনে যে লোগো তৈরি করা হয়েছে, তার কৃতিত্ব কীভাবে অন্যের প্রাপ্য হয়? অন্তিম পর্যায়ে যেটুকু পরিবর্তন করা হয়েছে, সেই পরিবর্তনটুকু কি অপরেশবাবু নিজে করতে পারতেন না? শেষ পরিবর্তনটুকু কি তাঁকে দিয়ে করানো যেত না? তিনি তো এর আগে ছয় মাস ধরে ৯ বার পরিবর্তন করেছেন। এটুকুও তিনি করতে পারতেন। অপরেশবাবু শুধু এই রাজ্যের নয়, তিনি জাতীয় মানের একজন চিত্রশিল্পী। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন চিত্রশিল্পী। তাঁর তৈরি লোগো ডিজাইন রয়েছে আগরতলা পুর পরিষদে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে, টিপিএসসি-তে, ত্রিপুরা টি কর্পোরেশন সহ আরও অনেক আধা সরকারী, বেসরকারী সংস্থায়। কিন্তু তাঁর তৈরি ‘স্টেট লোগো’ নির্বাচক মণ্ডলীর বিচারে শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর সম্মানিত প্রাপ্য দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো শিল্পীকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গোটা বিষয়টি তিনি জালিয়াতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.