স্ট্যালিনের গোঁসা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জোসেফ ভিসসারিওনোভিচ স্ট্যালিন নন, ইনি মুহুুভেল করুণানিধি স্ট্যালিন। বর্তমানে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং পিতা করুণানিধির হাতে তৈরি দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) দলের সুপ্রিমো।জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি। লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) উদ্যোগ আগামী তিরিশ বছরের জন্য মুলতবি রাখার দাবি তুলেছেন।এহ বাহ্য,তিনি তামিলনাডুর জনগণকে ১৬টি করে সন্তান উৎপাদনের নিদান দিয়েছেন।স্ট্যালিন আশঙ্কা করছেন, আগামী বছর দেশে জনগণনার সূত্রে বর্ধিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার আসনের পুনর্বিন্যাস হলে তামিলনাড়ু সহ দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি থেকে সাংসদ কমে যাবে।কারণ দক্ষিণের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। অপরদিকে,যেহেতু উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে কার্যত স্রোতের মতো জনসংখ্যা বেড়েছে,তাই জনসংখ্যার ভিত্তিতে কোন্ রাজ্যের কত লোকসভা কেন্দ্র হবে তা নির্ধারিত হলে, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি থেকে অনেক বেশি সাংসদ লোকসভায় যাবেন।সেই অনুপাতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে সাংসদের সংখ্যা কমবে।ফলে সংসদে তামিলনাড়ু, কেরল, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানার প্রতিনিধিত্ব কমবে।দক্ষিণের রাজ্যগুলির রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা খর্ব হবে। বিজেপির মতো রাজনৈতিক দল, যাদের দাক্ষিণাত্যের তুলনায় উত্তর ভারতে শক্তি অনেক বেশি, তারা শুধু উত্তর ভারতে ভালো ফল করেই কেন্দ্রে সরকার গড়ে ফেলবে। স্ট্যালিনের পাখির চোখ চেন্নাইয়ের কুর্সি। আগামী বছর তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচন। অতএব এখন থেকেই তামিল আবেগ উস্কে দিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আগামী কয়েক মাস স্ট্যালিন এ নিয়েই কথা বলবেন, যাতে তামিল আবেগে ভর করে তিনি আবার ফিরে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।
এসব যেমন রাজনৈতিকভাবে সত্য, তেমনই ‘ডিলিমিটেশন’ কিন্তু সংকটের অপর নাম। এই আসন্ন ঘটনাটি যেভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রকে পাল্টে দিতে চলেছে, তার চেহারাটা যতই স্পষ্ট হচ্ছে, আশঙ্কা ততই গাঢ় হচ্ছে। লক্ষণীয়, এই আসন্ন ঘটনাটি নিয়ে উত্তর ভারতের হিন্দুবলয় বলে খ্যাত যে অঞ্চল, সেখানে কল্লোল যত জোরদার হচ্ছে, হৃষ্টতর হচ্ছে, দক্ষিণ ভারত ততটাই বিপন্ন বোধ করছে।লোকসভায় আসন যেভাবে বাড়বে, তাতে জনসংখ্যা যে প্রদেশে বেশি, তাদের আসনের সংখ্যা কম-জনসংখ্যাবিশিষ্ট রাজ্যের থেকে বেড়ে যাবে, ফলত প্রথম গোষ্ঠীর রাজ্যগুলির ক্ষমতা দ্বিতীয় গোষ্ঠীর রাজ্যগুলিকে ছাপিয়ে যাবে।তখন আইন পাসের ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা যে কোনও সংসদীয় কার্যক্রমেই উত্তর ভারত যা চাইবে, দক্ষিণ ভারতকে তার সঙ্গে সঙ্গত মিলিয়েই চলতে হবে। দক্ষিণ ভারত তুলনামূলকভাবে অধিক উন্নয়নশীল এবং সেই উন্নয়ন-মাত্রার অন্যতম সূচক জনসংখ্যার নিম্নহার। কিন্তু এই ঘটনায় যেন সেই অতিবাঞ্ছিত অর্জনটির জন্যই সংসদে তাদের ‘শাস্তি’ পেতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ভারতীয় রাজনীতি ক্রমশই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিচলিত, ক্ষুব্ধ এবং ভীত হয়ে উঠছে। কিন্তু এই তরজায় যে বিষয়টি অনালোচিত থেকে যাচ্ছে সেটি হলো, ডিলিমিটেশনের ফলে কেবল উত্তর-দক্ষিণের ভেদই বাড়বে না, রাজনীতি মানচিত্রেও খুব বড় একটি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। হিন্দুত্ববলয় বলে উত্তরের যে অঞ্চল খ্যাত, সেখানে রাজনীতির যে শৈলী ও প্রকরণ জনপ্রিয়, তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রাজনীতিকে অনেকাংশে গ্রস্ত করে দিতে চলেছে। সহজ কথায়, এতে শাসক দলের লাভ নি:সন্দেহে কিন্তু পক্ষান্তরে তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রীয়তার বিপদই বাড়াবে না, এর ফলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চেহারাও অনেকটা পাল্টাবে।
‘ডিলিমিটেশন’ একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সংবিধানের ৮২তম। অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনার পরে লোকসভার আসন-সংখ্যাও বাড়বে। যুক্তি এই যে, এক-একটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বা জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে, একজন সাংসদ এত মানুষের দায়িত্ব কীভাবে সামলাবেন? কিন্তু ১৯৭১ সালের জনগণনার পর লোকসভা ও বিধানসভার আসনের মোট সংখ্যা আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। অথচ জনসংখ্যা ৫০ কোটি থেকে ১৪০ কোটির গণ্ডি পার করেছে।
এত বছর পর আগামী বছরের জনশুমারি অনুযায়ী যে-হেতু আসনসংখ্যা বাড়তে চলেছে, গোলযোেগ সেখানেই। প্রসঙ্গত, মহিলা সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে এই পুনর্বিন্যাসকে জোড়ার প্রবল প্রয়াসের একটি কারণই হলো মোট আসনসংখ্যার বৃদ্ধি, যার ফলে পুরুষ আসন শেষ অবধি খুব বেশি কমবে না ধরে নিয়েই পুরুষতান্ত্রিক হিন্দুত্ববলয়ের নেতা-কর্তাদের বিষয়টিতে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে, বললে ভুল হবে না যে, আসন পুনর্বিন্যাসই হতে চলেছে শাসকের তুরুপের এক্কা,চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রকরণ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

তেলাঙ্গানার সুড়ঙ্গে আটকে পড়াদের একজনের দেহের সন্ধান মিলেছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-অবশেষে তেলাঙ্গানার সুরঙ্গে আটকে পড়াদের মধ্যে একটি দেহের সন্ধান করতে পেরেছে উদ্ধারকারীরা। তবে…

39 mins ago

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় দিল্লী বললেন রাজনাথ।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলাদেশের সঙ্গেভারত সবসময় সুসম্পর্ক রক্ষা করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ…

5 hours ago

মোরা কেমন আছি।।

যত গর্জায় তত বর্ষায় না। বাংলার এই প্রবাদের গূঢ়ার্থ বুঝতে হলে রাজনীতির চশমায় নয়,আন্তর্জার নারী…

6 hours ago

দিল্লি এইমসে ভর্তি উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গভীর রাত থেকে বুকে ব্যথা ও শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করাতে দিল্লির এইমস-এ তড়িঘড়ি…

6 hours ago

আয়কর ভবনে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ মতবিনিময় সভা।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-শুক্রবার রাজধানীর আয়কর ভবনে নতুন আয়কর বিধি ও নিয়মকানুন নিয়ে নানা জটিলতা দূর…

1 day ago

পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল ত্রিপুরা : মুখ্যমন্ত্রী

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজধানী আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বললেন, পঞ্চায়েতস্তরে উল্লেখযোগ্য…

1 day ago