স্নায়ু রোগের সমস্যা, উপসর্গ ও চিকিৎসা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কারও হাত পা কাঁপে তো কারও আবার মাথা , কারও সারা শরীরেই কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না । এই ধরনের উপসর্গ হলেই বুঝতে হবে নার্ভের সমস্যা দেখা দিয়েছে । এই বিষয়ে কথা বলছেন নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা . মনোজ কুমার মাহাতা । স্নায়ুরোগ বা নার্ভের সমস্যা আসলে কী ? স্নায়ুতন্রর কোনও রকমের কোনও অসুবিধা , তার গঠনগত অসামঞ্জস্যতা থাকা , এছাড়াও ফিজিওলজিক্যাল ক্রিয়াকলাপ কিংবা শরীর দুর্বল লাগতে পারে নার্ভের সমস্যা থেকে । স্নায়ুর গঠনগত এবং ফিজিওলজিক্যাল কাজকর্মের তফাতের কারণে শরীরে যে লক্ষণ বা উপসর্গগুলো ফুটে ওঠে সেগুলোকেই আমরা স্নায়ুরোগ বলে থাকি । স্নায়ুরোগের জন্য কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয় ? স্নায়ুর সমস্যা ব্রেনেরও হতে পারে , স্পাইনাল কড়েরও হতে পারে । যে নার্ভগুলো আমাদের শরীরের বাকি অংশগুলোতে থাকে সেটারও হতে পারে । পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বাইরের স্নায়ুগুলিকে প্রভাবিত করে । মস্তিষ্কে র স্নায়ুর সমস্যা হলে তা থেকে স্ট্রোকও হতে পারে । আবার ডায়াবেটিসের জন্যও নার্ভ ড্যামেজ হতে পারে । স্নায়ুরোগ বলতে এগুলোকেই বোঝায় । ডিমায়েলিনেশন , এটায় স্নায়ুর তত্ত্বগুলো খারাপ হয়ে যায় । নার্ভের সমস্যার উপসর্গ কী হয় ? কারও হাত পা কাঁপে তো কারও আবার মাথা , কারও সারা শরীরেই কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না । কোনও সমস্যার মধ্যে পড়লে অল্পেতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কিছু মানুষ । এগুলোই আপাতদৃষ্টিতে নার্ভের সমস্যা । এই ধরনের উপসর্গ হলেই বুঝতে হবে নার্ভের সমস্যা দেখা দিয়েছে । নার্ভের রোগ লক্ষণ অনুযায়ী আলাদা হয় । কার কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে । হঠাৎ করে শরীরের একটা স্থান অবশ হয়ে যাওয়া , হঠাৎ করে খিঁচুনি আসা , বমি পাওয়া , অজ্ঞান হয়ে যাওয়া , মাথা ব্যথা — ইত্যাদি উপসর্গ । স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা হতে পারে , চোখে কম দেখা , ব্যালান্স কমে যায় , হাত পায়ের দুর্বলতা এবং কথা জড়িয়ে যাওয়া । স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এটা কমন সিম্পটম । আবার কিছু মানুষের হাতে পায়ে জ্বালা ভাব অনুভূতি হতে পারে । অসাড় হয়ে যায় । স্পাইনাল কড়ের সমস্যা হলে ইউরিনের একটা সমস্যা দেখা দেয় । প্রস্রাব ধরে রাখা যায় না কিংবা কখনও কখনও তা আটকেও যায় । তাই শরীরের সমস্যার দিকে নজর রাখলে সেই সমস্যাই বলে দিতে পারবে আপনি কোন ধরনের নার্ভের সমস্যায় আক্রান্ত । অসাড়তার মতো , ঘুমের সমস্যাগুলিও স্নায়বিক লক্ষণগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত । পায়ে ক্র্যাম্প ধরে যাওয়া , হঠাৎ করে হাঁটু মুড়ে যাওয়া এগুলোও কি নার্ভের সমস্যা থেকে হয় ? এটা সাধারণত পেশীগত সমস্যা থেকে হয় । সোডিয়াম , ক্যালশিয়ামের তারতম্য ঘটলে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । কোনও দুর্ঘটনার সঙ্গে কি নার্ভের সমস্যা জড়িত ? চোট – আঘাত অবশ্যই স্নায়ুরোগে প্রভাব ফেলে । বিশেষত দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগলে সেখানে স্নায়ুরোগের প্রভাব পড়ে । সেখান থেকে শরীরের একটা অংশ প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে । মস্তিষ্কের মধ্যে স্নায়ুকোশগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে । এপিলেপসি রোগ দেখা দিতে পারে । পোস্ট ট্রমাটিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে । পড়ে গিয়ে রক্তনালীগুলো আঘাত পেয়ে স্ট্রোকও হতে পারে । নার্ভের সমস্যার ঝুঁকি কাদের বেশি থাকতে পারে ? যাদের এপিলেপসি আছে তাদের মধ্যে স্নায়ুর সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে । ছোটরাও এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে । খিঁচুনি বা এপিলেপসি বাচ্চাদের মধ্যে হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় । আবার স্ট্রোক যেমন মধ্যবয়স্ক এবং বয়স্ক মানুষের বেশি হয় । যদিও ইদানীং কম বয়সি মানুষের মধ্যেও স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে । ডায়াবেটিক রোগীদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে । সেখান থেকেও নার্ভের সমস্যা আসতে পারে । খাওয়া – দাওয়ার সঙ্গে কি এই রোগর সম্পর্ক আছে ? সেই অর্থে নেই । তবে যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা হওয়া উচিত । নার্ভের রোগ যে কোনও মানুষেরই যে কোনও সময় হতে পারে । ডিপ্রেশনও কি স্নায়ুরোগের একটা অংশ ? এটা সরাসরি নার্ভের সমস্যা নয় । এটা সাইকোলজিকাল একটা বিষয় । একজন স্ট্রোক হওয়া রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি ? স্ট্রোক হল একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য কোশের মৃত্যু ঘটে । প্রধানত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে , মস্তিষ্কের রক্ত সংরোধজনিত ও রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক । উভয় কারণেই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না । মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে বা ফেটে গেলে স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যটাক হয় । আমাদের শরীর যেভাবে গঠিত , সেখানে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন সংরক্ষণ করতে পারে না । কয়েক মিনিটের জন্য রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যাহত হলে তখনই ঘটে দুর্ঘটনা । সাধারণত স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা আই ভি থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা দিয়ে থাকেন । চিকিৎসকরা ইনজেকশনের মাধ্যমে এমন একটা ওষুধ দেন যা রক্তনালীর ব্লক কাটিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে । ওষুধ দেওয়ার এই পদ্ধতিকে বলা হয় থ্রোম্বোলাইসিস । একটি বিশেষ যন্ত্র বা ক্যাথেটার দিয়ে রোগীর রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয় । এই পদ্ধতির নাম মেকানিকাল থ্রম্বেক্টমি । এপিলেপসির ট্রিটমেন্ট হওয়া সম্ভব ? এপিলেপসি যাদের আছে তারা নিয়মিত ওষুধ খেলে অবশ্যই কমে যায় । দু – তিন বছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায় । স্নায়ু রোগ থেকে মুক্তির উপায় কী ? আর্লি আইডেন্টিফিকেশন করলে এই রোগ সারানো সম্ভব ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

অর্থনীতির হাল-হকিকত

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…

2 days ago

রোমান লিপিকে স্বীকৃতির দাবিতে টি,এস,এফ এর বিক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…

2 days ago

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রকাশ্যে এলো ত্রিপুরার শিক্ষার বেআব্রু চেহারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…

2 days ago

ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ রাজ্য বানাচ্ছে বিজেপি সরকার: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…

2 days ago

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

3 days ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

3 days ago