স্পিকার নির্বাচন!!

 স্পিকার নির্বাচন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে।ফলাফল প্রকাশের পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো এনডিএ সরকারের শপথ গ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষমাণ অবস্থাতে রয়েছে লোকসভার স্পিকার নির্বাচন এবং জয়ী সাংসদদের শপথ গ্রহণ পর্ব। আপাতত স্পিকার নির্বাচন নিয়েই জাতীয় রাজনীতি সরগরম।তৃতীয় এনডিএ সরকারে কে বসবেন স্পিকারের পদে?যাবতীয় জল্পনা এখন এই প্রশ্নকে ঘিরে।
এনডিএ চারশ পার এবং বিজেপি একাই তিনশ সত্তর – এই স্লোগান তুলে এবার নরেন্দ্র মোদি অষ্টাদশ লোকসভা ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন।ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল, এনডিএ ২৯৩ এবং বিজেপি একা ২৪১ আসনে থেমে গেছে।এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা (ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২) অর্জন করতে পারেনি বিজেপি।ফলে শরিকদের সমর্থন নিয়ে ফের একবার দেশের মসনদে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।মন্ত্রিসভা গঠনে যে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলো শরিকরা আশা করেছিলেন, তাও সুকৌশলে এড়িয়েছেন মোদি।আর এবার স্পিকার পদের ক্ষেত্রেও বলা যায় ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি।
প্রথম থেকেই যে পদ নিয়ে দর কষাকষি চলছিল শরিকদের মধ্যে।সেই ছবি বদলে গেল এক সপ্তাহের মধ্যেই।সুর নরম করে টিডিপি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,বিজেপির মনোনীত প্রার্থীকেই স্পিকার পদের জন্য সমর্থন জানাবেন তারা।তৃতীয় এনডিএ সরকারে চন্দ্রবাবুর টিডিপি এবং নীতীশের জেডিইউ-এর মোট আসন সংখ্যা ২৮। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, নীতীশ এবং চন্দ্রবাবু এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।তাতেও কিন্তু মোদি সরকারের কোনও ক্ষতি হবে না।উল্টোদিকে, চন্দ্রবাবু ও নীতীশকে সাথে নিয়ে ইন্ডি জোট সরকার গড়তে পারবে, এমন সম্ভাবনা খুব একটা নেই।কেননা, ইন্ডি জোটের মোট আসন সংখ্যার সাথে টিডিপি এবং জেডিইউর ২৮ যুক্ত হলেও ম্যাজিক সংখ্যা থেকে পিছনে থাকতে হবে।এই সহজ অঙ্কটি সকলেই জানে।
তাছাড়া পাল্টি খেতে খেতে নীতীশবাবুর রাজনৈতিক ইমেজ এখন একেবারে তলানিতে।নীতীশবাবু নিজেও এটা ভালো করে উপলব্ধি করতে পারছেন।এবার ভোটের ফল থেকে তিনি এই বিষয়টি আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনিও ভালো করে জানেন, এনডিএ জোট ছাড়লে এক মুহূর্তের মধ্যে তার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চলে যাবে।শুধু তাই নয়, ইন্ডি জোটে গেলেও তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না।এটা এক প্রকার নিশ্চিত। তার জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।মাঝে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে আরজেডির হাত ধরার পর, নীতীশ বাবুর কি অবস্থা হয়েছিল, তা তিনি ভালো করেই জানেন। শেষ মুহূর্তে চেয়ার বাঁচাতে পাল্টি খেয়ে আবার বিজেপির সাথে আসতে হয়েছিল তাকে।ফলে প্রথমে হাঁকডাক দিলেও, পরে সুর নরম হয়ে যায়।
চন্দ্রবাবু নাইডু, পাল্টি খাওয়া রাজনীতিবিদদের মধ্যে পড়েন না। দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিতে তার একটা নিজস্বতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। অনেক আগে থেকেই বিজেপির সাথে জোট করে তিনি এবার ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন।তাছাড়া,তার কাছে প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে রাজ্যের স্বার্থ।সেই দিকে বিবেচনা করে তাকেও সুর নরম করতে হয়েছে। বিজেপির প্রধান দুই শরিকের দর কষাকষি দেখে বিরোধী ইন্ডি জোটও উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল।কিন্তু সেই উৎসাহ অচিরেই নিরুৎসাহে পরিণত হয়েছে।বিজেপি শরিকদের ম্যানেজ করে নেওয়ায়, ইন্ডি জোটকেও নিজেদের ‘লাইন’ বদলাতে হয়েছে।ফলে যতটুকু খবর, এবার স্পিকার পদে প্রার্থী দিতে পারে বিরোধী ইন্ডি জোট।কিন্তু বিজেপি চাইছে ভোট এড়িয়ে স্পিকার নির্বাচিত হোক সর্বসম্মতিভাবে।কেননা, সর্বসম্মতিভাবে স্পিকার নির্বাচিত হওয়াটাই গণতন্ত্রের জন্য উত্তম।এটাই বিজেপির কাছে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ। গেরুয়া শিবিরকে স্পিকার পদের জন্য এমন একজনকে মনোনীত করতে হবে,যাকে সকলের পছন্দ হয়। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, এই বিষয়ে বিরোধী সব দলের সাথে কথা বলে সমাধান সূত্র বের করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে।তিনি কতটা সফল হবেন? সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.