স্বখাত সলিলে!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-দেশের উত্তরে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের সামনে হিমাচল প্রদেশ দেনাম নামক যে ক্ষুদ্র কাঁটাটি বিদ্যমান ছিলো, এবার সেটিও সম্ভবত উৎপাটিত হতে চলেছে। হিমালয়ের বুকে উত্তরের ছোট পাহাড়ি রাজ্যটিতে রাজ্যসভার মাত্র একটি আসনে অভিষেক মনু সিংভির পরাজয় যুগপৎ কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা, অস্তিত্ব এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে হিমালয়সমান প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের সমর্থনে সিংভি ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ। হিমাচলের আসনটিতে জয় নিশ্চিত বলেই কংগ্রেস ছাতি ফুলিয়ে তাকে হিমাচলে প্রার্থী করেছিল।কিন্তু শেষ রক্ষা তো হলোই না,উল্টে কংগ্রেসের পরাজয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর গদি এখন টলমলে।তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছে বিজেপি।বিধানসভায় দলীয় প্রার্থীদের সংখ্যার নিরিখে ভোট হলে ফল যা হতো,বিজেপি তা উল্টে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশে এসপি ও হিমাচলে কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়ে।যেখানে এসপির জয় নিশ্চিত ছিলো তিনটি আসনে, সেখানে তারা জিতেছে দুটি। বিজেপি সাত আসনের জায়গায় আটটি আসনে জয়ী হয়েছে।ফলে রাজ্যসভায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র গরিষ্ঠতা পেতে আর বাকি রইলো মাত্র চারটি আসন।লোকসভা নির্বাচনের মুখে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করেছে তো বটেই,তবে ততোধিক অনিশ্চিত করে তুললো উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রাক্তন দুটি ‘গড়’ রায়বেরেলি ও আমেথি।পাঁচ বছর আগে আমেথি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল গান্ধীকে ধরাশায়ী করেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি।অন্যদিকে, রায়বেরিলিতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ভোটে সোনিয়া গান্ধী জিতলেও রাজ্যসভার ভোটের পর এই দুই লোকসভা আসনে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের ভোটে এসপির আটজন বিধায়ক হয় সরাসরি বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন অথবা ভোটদানে বিরত থেকেছেন।ওই আট বিধায়কের মধ্যে তিনজন আমেথি ও রায়বেরিলি অঞ্চলের।এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য তিনবারের এসপি বিধায়ক তথা বর্তমান রাজ্য বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ পাণ্ডে। ১৯৯৮ সালের পর বিজেপি কখনও রায়বেরিলিতে জয়ের মুখদর্শন করেনি। সুতরাং এবার রায়বেরিলিতে কংগ্রেসের হার নিশ্চিত করতে মনোজ পাণ্ডেকে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী করতেই পারেন নরেন্দ্র মোদি।কার্যত সমদৃশ্যের অবতারণা হয়েছে আমেথিতেও।ওই লোকসভা আসনের অন্তর্গত গৌরীগঞ্জ ও আমেথি বিধানসভা আসন থেকে জয়ী এসপি বিধায়ক রাকেশ প্রতাপ সিং ও মহারাজি প্রজাপতি মঙ্গলবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। অকুতোভয় রাকেশ প্রতাপ বলেছেন,তিনি অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে ভগবান রামচন্দ্রের নামে ভোট দিয়েছেন।আমেথি ও রায়বেরিলিতে এসপির ভোট বরাবর কংগ্রেসের ঝুলিয়ে পড়েছে।দুর্বল কংগ্রেস এবার কাদের ভরসায় উত্তরপ্রদেশে নিজেদের ঘাঁটিতে লড়বে? অতএব বিজেপি পরিকল্পিতভাবে গান্ধী পরিবারের ওই দুই সাবেকি আসনে এসপি ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের দলে টেনে নিজেদের জয়ের সম্ভাবনা যে
উজ্জ্বলতর করে তুলবেই তাতে সন্দেহ কী।গণতান্ত্রিক দেশে ভোটকে যদি সত্যিই যুদ্ধ হিসাবে দেখতে হয়, তাহলে বিজেপির রণকৌশলের উৎকর্ষ এই মুহূর্তে সংশয়াতীত।এর বিপ্রতীপে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আর রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে যে বিরাট তফাত আছে, দল হিসাবে কংগ্রেস এবং নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীরা এখনও বোঝেননি।শুধু প্রথম গুণ অর্থাৎ কর্মকাণ্ডই যথেষ্ট নয়, দ্বিতীয় তথা রণকৌশলের গুণটি অধিগত না করলে এই ভারতে টিকে থাকার সম্ভাবনা স্বল্প, অধিকন্তু শূন্য।রাজনীতিতে জয়রথ হাঁকানোর জন্য কৌশল সর্বদাই থাকে চালকের আসনে।সেই কৌশলই জনতাকে দলের অভিমুখে টেনে আনে।মোদির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রীত্বের সম্ভাবনার মুখে অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠায় যে সর্বস্মৃতিহর ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাকে কংগ্রেস এবং বিরোধী শিবির কীভাবে প্রতিহত করবে দেবা ন জানন্তি।এই কারণেই কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সংকটও এই মূহূর্তে বৃহৎ।কংগ্রেস এতোদিনে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছে, এই ভারতে ধর্ম নিয়ে কথা না বলা কঠিন।পক্ষান্তরে ধর্ম নিয়ে কথা বলা আরও কঠিন, তাতে কেবল বিজেপির বি-টিম হওয়া যায়।এদিকে হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন।তাই বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রশ্নে সার্বিক উদ্বেগের কারণটি হলো,অবিমৃশ্যকারী রাজনৈতিক নেতাদের স্বখাত সলিলে নিঃশেষ হয়ে যেতে বসা দেশব্যাপী বিরোধী পরিসরের আশা এবং আকাঙক্ষা।