স্বপ্নভঙ্গ!!

 স্বপ্নভঙ্গ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কোনদিন যদি ‘দঙ্গল-২’ সিনেমা বলিউডে নির্মিত হয় তাহলে এখনই বলে দেওয়া যেতে পারে যে ভিনেশকে নিয়ে দঙ্গল-২ নির্মিত হবে এবং তাতে অলিম্পিকের মঞ্চে তার স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি বর্ণিত হবে।ভারতীয় এক কুস্তিগিরের স্বপ্নভঙ্গ হল প্যারিস অলিম্পিকের মঞ্চে।একেবারে শেষলগ্নে এসে মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় ভারতীয় কুস্তিগির ভিনেশ ফোগাটকে বাতিল বলে গণ্য করে অলিম্পিক সংস্থা।শুধু তাই নয়, তাকে একেবারে প্রতিযোগীদের শেষ স্থানে ঠেলে দেওয়া হয়।এহেন অলিম্পিকের মঞ্চে এতদূর এসে ভারতের এক কুস্তিগিরের এই স্বপ্নভঙ্গকে কি এত সহজেই মেনে নেওয়া যায়?এ নিয়ে বহু জলঘোলা হয়েছে।সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।আদতে তাতে কি ভিনেশের কিছু লাভ হলো? মোটেও নয়।শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুস্তিকে বিদায় জানিয়েছেন ভিনেশ।মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পারেননি বলে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভিনেশ। আদতে ভিনেশের কি তা প্রাপ্য ছিল?ভিনেশ কি কোনও ষড়যন্ত্রের শিকার? জটিল রাজনীতির কূটচাপের কি বলি হয়েছেন ভিনেশ? ভিনেশের পদক হাতছাড়া হওয়ায় কারও কি কোনও লাভ হয়েছে?কোনও বদলা নেওয়া কি হল ভিনেশকে অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে বিদায় দিয়ে?এই সমস্ত নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতেই থাকবে যতদিন ভারতীয় কুস্তি জীবিত থাকবে।অন্যদিকে,ভারতীয় কুস্তির ইতিহাসে অবশ্যই নাম লেখা থাকবে ভিনেশের। অলিম্পিকের মঞ্চে মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় তাকে প্রায় নির্বাসিতই করা হয় মঞ্চ থেকে।এর পেছনে দায়ী কারা?প্রশ্ন কি আড়ালেই থেকে যাবে?একটু চেষ্টা করলে তার একটি পদক কি পাওয়া যেত না?
ভারতীয় কুস্তিগির ভিনেশ ন’বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন।মহাবীর ফোগাট দঙ্গল সিনেমার দৌলতে ভারতীয় কুস্তিজগতে এক পরিচিত নাম।দঙ্গল সিনেমায় মহাবীর ফোগাটের মেয়ে হিসাবে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জুটেছিল গীতাকুমারী ফোগাটের। বাবা মহাবীর ফোগাট গীতার পিতা তো বটেই অন্যদিকে কোচ কাম ম্যানেজার কাম গুরু। বাবার তত্ত্বাবধানেই গীতার এই সাফল্য। অলিম্পিকের মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গ হওয়া ভিনেশের বাবা নেই।জেঠা মহাবীর ফোগাটই তার কোচ।কিন্তু কোচকে তিনি অলিম্পিক থেকে পদক এনে দিতে পারেননি।তার সারাজীবনের আক্ষেপ থাকবে এটি। ভিনেশের বয়স মাত্র ২৯।৫ বছর বয়স থেকে তার কুস্তির জগতে পা রাখা।সেই নিরিখে দেখতে গেলে তার কুস্তি দুনিয়াতে ক্যারিয়ার ২৪ বছরের।এই ২৪ বছরের ক্যারিয়ারকে সম্প্রতি তিনি আলবিদা জানিয়েছেন। অনেকটা অভিমান করেই বলা যায়।
ভিনেশ ৫৩ কেজি ক্যাটাগরিতে খেলতেন।কিন্তু কিছুদিন হল তিনি ৫০ কেজি বিভাগের ফরম্যাটে এসেছেন। ৫০ কেজি বিভাগে তার সোনা জয়ের রেকর্ডও রয়েছে।
অলিম্পিকের মঞ্চে খেলতে নেমে প্রথমেই যে অসাধ্য সাধন করেছিলেন ভিনেশ তা হলো জাপানের অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন।এরপর একদিনে আরও ২ জন প্রতিযোগীকে হেলায় হারিয়ে দিয়ে ফাইনালের টিকিট আদায় করেন ভিনেশ।পরদিন ফাইনালের জন্য সবাই যখন গভীর উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভিনেশের সোনা জয়ের প্রহর গুনছে সে সময়ই এলো দুঃসংবাদ।মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় অলিম্পিকে ‘অযোগ্য’ ভিনেশ। ১০০ গ্রামের জন্য অলিম্পিক থেকে বিদায়!অনেকটাই আশ্চর্যই হয়েছিলেন এই খবরে গোটা দেশবাসী।ডোপ টেস্টে ধরা পড়েন অনেকেই এবং তাতে বাদ যান।এরকম ঘটনা আকছার শোনা যায় খেলার দুনিয়ায়।কিন্তু এ ধরনের ফাইনালে ওঠে ওজন বেশি হওয়ায় ‘অযোগ্য’ এরকমটা সচরাচর শোনা যায় না বা হয় না।ভিনেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
প্রশ্ন হল- আগেরদিন ভিনেশের ওজন ঠিক ছিল এবং তিন তিনজন প্রতিযোগীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ভিনেশ।ঠিক পরদিন তার ওজন এত বাড়ল কীভাবে? কর্তারা কী করছিলেন? ভারতের হয়ে অলিম্পিকের আসরে এবার ১১৭ জন প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন।কর্মকর্তা গেছেন ১১৮ জন।কুস্তিতে প্রতিযোগী ছিলেন ৬ জন।কর্মকর্তা ছিলেন ডবল।সাকুল্যে ভারতের পদক জুটেছে ৬টি। যে ইউক্রেন গত আড়াই বছর ধরে যুদ্ধে বিধ্বস্ত সেই ইউক্রেনও ১২টি পদক জিতেছে অলিম্পিকে।এর মধ্যে তিনটি সোনা রয়েছে। আর ১৪০ কোটির দেশের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৬টি পদক।তালিকায় ৭১তম স্থানে।
ভিনেশের কোচেরা কি জানতেন না ভিনেশের ‘ওজন ‘টাই হচ্ছে সবচেয়ে ভাইটাল ম্যাটার।কেননা সে ৫৩ কেজি থেকে ৫০ কেজি বিভাগে খেলতে এসেছে।তাই তাকে প্রতি মুহূর্তেই ওজন নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।তাই ফাইনালের আগের রাতে তাকে বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে।ওজন কমানোর জন্য তাকে চুল পর্যন্ত কাটতে হয়েছে।ভাবা যায়!এত কিছুর পরও সকালে যখন তার ওজন পরীক্ষা করানো হয় তাতে ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হয় ভিনেশের।এটা কি আগে ধরা পড়েনি?কর্মকর্তারা যদি ধরেই নিতেন যে ভিনেশের ওজন কোনও মতেই কমানো যাচ্ছে না তখন তাকে আনফিট কেন তারা করালেন না? তাতে তার সিলভার মেডেল নিশ্চিত তো ছিলই। এই প্রশ্ন তোলেছেন স্বয়ং বজরং পুনিয়ার মতো কুস্তিগির।এর কিছুক্ষণ পরই ভিনেশ আনফিট হয়েই গেল। তার শরীরে জলের মারাত্মক অভাব দেখা দেওয়ায় তাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়।
ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিটি ঊষা সম্প্রতি বলেছেন যে, ভিনেশের অযোগ্য ঘোষণার দায় তার (ভিনেশ) এবং তার কোচের।প্রশ্ন- তাহলে তিনি প্যারিসে বসে কী করছিলেন?ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা হিসাবে তারও দায় রয়েছে।তিনি দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন কেন?শুধু তড়িঘড়ি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দেবার জন্য তিনি প্যারিস গিয়েছিলেন। ভিনেশের ‘অযোগ্য’ ঘোষণা হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট ভেসে উঠতে থাকে। সবাই কি এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন? সংসদে ক্রীড়ামন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন ভিনেশের জন্য দেশের সরকার ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে।বাহ্ ক্রীড়ামন্ত্রী! এতো অপমান কি ভিনেশের সইবার ছিল?
গত ২০২৩ সাল ভিনেশরা কাটিয়েছে যন্তরমন্তরে আন্দোলনে।কেউ ছিল না পাশে।বলা যায় রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন ভিনেশ, পুনিয়া, সাক্ষী মালিকরা।সেই থেকে অলিম্পিকের মঞ্চে পৌঁছানোর রাস্তা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না ভিনেশের। কিন্তু সেই আশার গুড়েও বালি। অযোগ্য ঘোষণার পর কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস (ক্যাস)-এ আবেদন করেছিল ভারত।পদকের দাবিতে। কিন্তু তাও খারিজ হয়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গ হল এক ভারতীয় মহিলা কুস্তিগিরের। অভাগা!বোধহয় একেই বলে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.