স্বপ্নের অপমৃত্যু, দায়ী কে?
দিল্লীর রাজেন্দ্রনগরে আইএএস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জলডুবিতে তিন ছাত্রছাত্রীর অকাল মৃত্যু দেশে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যথারীতি রাজনীতিসর্বস্ব দেশে এ নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়েছে।ছাত্রছাত্রীরা এর বিহিত চেয়ে রাজপথে আজও ধরনা দিচ্ছে।আন্দোলন করছে।কিন্তু এভাবে কার পাপে,কার ভুলে তিন পড়ুয়ার স্বপ্নের যে অপমৃত্যু ঘটল এতে এ দেশের রাজনীতিকদের কি কিছু এসে যাবে? দুদিন পর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে প্রত্যাশার অপমৃত্যুকে কি এত সহজে মেনে নেওয়া যায়? যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের এভাবে অকালে প্রাণ ঝরেছে এরা প্রত্যেকেই একরাশ স্বপ্ন নিয়ে দিল্লীতে এসেছিল কোচিং নিতে। কোচিং নিয়ে সিভিল সার্ভিসে জয়েন করবে এমন আশা নিয়ে হাজারো ছাত্রছাত্রীর সাথে উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কেরলের তিন পড়ুয়াও দেশের রাজধানীতে এসেছিল।
দিল্লীর রাজেন্দ্রনগরে একটি আইএএস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে কার পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছিল।এর সাথেই ছিল লাইব্রেরি ঘরও। সেই লাইব্রেরিতে তারা থাকত। যে সমস্ত কোচিং সেন্টার দিল্লী বুকে এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং করায় এবং রাখার ব্যবস্থা করে তারা শুধুই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই তা পরিচালনা করে। নাহলে বেসমেন্টে কি কেউ থাকার জায়গা বা লাইব্রেরির জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়? শুধু এই কোচিং সেন্টারই নয়, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা দিল্লীর বুকে এ ধরনের কোচিং সেন্টারে ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে দিন গুজরান করে তা দেখলে বা অভিজ্ঞতা নিলে গা শিউরে ওঠবে।৪×৪ ফুটের ঘরে ৪ জন ছাত্রী বা ছাত্র থাকে এমন অভিজ্ঞতাও উঠে এসেছে এই ঘটনার পর। মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা দেশ তা দেখেছে।
বেসমেন্টে জলডুবির ঘটনায় যে তিন পড়ুয়ার নির্মম পরিণতি হয়েছে তারা হলেন শ্রেয়া যাদব, তানিয়া সোনি এবং নেভিন ডালউইন। শ্রেয়ার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকরনগর। তারা বাবা সামান্য ডেয়ারির দোকান চালিয়ে মেয়েকে আইএএস বানাতে চেয়েছিলেন। তানিয়ার বাড়ি তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদে।তৃতীয় পড়ুয়া নেভিনের বাড়ি কেরলের এর্নাকুলামে।সে দিল্লীর জেএনইউতে পিএইচডি করছিলো।পাশাপাশি আইএএস কোচিংও নিচ্ছিল।
তারা গত রবিবার রাতে জলডুবির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারেনি। কিন্তু মৃত্যুর আগে পরিবারের সাথে তাদের কথা হয়। জলডুবি যে তাদের প্রাণ কেড়ে নেবে তা ঘুণাক্ষরে তারা বুঝতেও পারেনি সে সময়। যথারীতি কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জলডুবিতে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর পর রাজনীতি শুরু হয়েছে। রাজনীতিকদের কী আর করার রয়েছে! যারা বিরোধী পক্ষে রয়েছেন তারা দোষারোপ করছেন সরকার পক্ষকে যেন বিরোধী পক্ষ সরকারে এলে এইরকম ঘটনা কোনওদিন ঘটবে না! দিল্লীতে সরকার আপের। দিল্লী পুর কর্পোরেশনও আপের। স্বভাবতই দায় তাদেরই। তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর পর দিল্লী পুর কর্পোরেশন এ রকম ২৫টি কোচিং সেন্টার সিল করেছে। বিজেপি এই ঘটনায় ধরনা দিয়েছে। আপ সরকারের মুন্ডুপাত করছে প্রতিনিয়ত। সংসদের উভয় কক্ষে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যসভায় অভিনেত্রী সাংসদ জয়া বচ্চন রীতিমতো কান্নাগলায় এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং শোক প্রকাশ করেছেন এবং রাজনীতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মা, ঠাকুমা, দিদিমা। আমি বুঝি এই যন্ত্রণা।কিন্তু এই ঘটনা যেন দ্বিতীয়বার না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও এ নিয়ে রাজনীতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনা থেকে কি আদৌ কি কোনও শিক্ষা নেব আমরা?কোন শিক্ষা নেবে দিল্লী পুর নিগম?শিক্ষা নেবে রাজনীতির কারবারীরা? দিল্লীতে গোটা ভারতের পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষার আশায় একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করতে আসে। কোচিং সেন্টারগুলি কীভাবে ছাত্রছাত্রীদের উপর জুলুম চালায় তা কি অজানা সরকারের, প্রশাসনের? ছাত্রছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে পড়তে এসে কীভাবে দিন গুজরান করে তা কি কেউ কোনওদিন খোঁজ নিয়েছেন। ৪×৪ ফুটের ঘরে চারজন ছাত্রী থাকছেন। ভাবা যায়! এভাবে মা-বাবার কষ্টার্জিত রোজগার দিয়ে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পড়ুয়ারা পড়তে আসে, কোচিং নিতে আসে।এই অবস্থায় ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত গাফিলতিতে যদি স্বপ্নের এভাবে অপমৃত্যু হয় তাতে দায় কার?এক কথায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র পড়ুয়াদের যথাযথ দেখভাল করতে ব্যর্থ হয়েছে
তা নি:সন্দেহে বলা যায়।
রাজেন্দ্রনগরের ঘটনায় কোচিং সংস্থার ২ কর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন।আর গ্রেপ্তার হয়েছেন কে?একজন গাড়ি চালক।তার অপরাধ কী?তার অপরাধ ঘটনার দিন সে স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা দিয়ে গিয়েছিলো। ফলে জলের ঢেউ তড়িঘড়ি গিয়ে বেসমেন্টে ঢুকে পড়ে। সেজন্য সে গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তিন পড়ুয়ার অকাল মৃত্যুর ক্ষতি কারও জানা নেই।