স্বপ্ন আরও উচ্চতায়!!

আরও এক ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে ভারত। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে প্রথম ভারতীয় হিসাবে পা রাখতে চলেছেন নভশ্চর শুভাংশু শুক্লা।যদিও এর আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে একাধিকবার পা রেখেছেন সুনীতা উইলিয়ামস।কিন্তু শুভাংশু শুক্লা হলেন ভারতীয় বায়ুসেনার এমন একজন আধিকারিক যিনি প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে পা রাখবেন।যদিও ভারত বহু প্রতীক্ষিত গগন যান মিশনের জন্যই রাত-দিন এক করে চলেছে। ইতিমধ্যেই সেই মিশনে শুভাংশু শুক্লা একজন নভশ্চর হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আছেন। কিন্তু তার আগেই তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য ইতিহাস লেখার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। শুভাংশু শুক্লা ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। জাগুয়ার, হক, মিগ-২১, সু-৩০. এ এন-৩২ সহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ শুভাংশুকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রায় বছর দুই আগেই এই অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছিলো। নাসার অক্সিয়াম- ৪ সংক্ষেপে অ্যাক্স-৪ নামের এই অভিযানের জন্য বাছা হয়েছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের ড্রাগ মহাকাশ যানকে। এই মহাকাশযানে করেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছোবেন ভারতের এই মহাকাশচারী সহ এই বিশেষ অভিযানে মোট চারজন নভশ্চর। অভিযানের যাবতীয় প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করবে ফ্যালকন রকেট। এরই মধ্য আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চপ্যাডে পাঠানো হয়েছে রকেটটিকে। মঙ্গলবার সকালেই মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য উৎক্ষেপণের সব কাজ সম্পন্ন। এই প্রাইভেট কমার্শিয়াল মিশনের জন্য ভারত সরকার ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের অভিযানের জন্য এই প্রথমবার উৎক্ষেপণ করা হবে ড্রাগন যানটিকে। সেদিক থেকে মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে এবং ভারতের নিরিখে নিঃসন্দেহে এই মুহুর্তটি একটি মাইলফলক। ১৯৮৪ সালে রাশিয়ার সয়ুজ মিশনে রাকেশ শর্মার মহাকাশ অভিযানের প্রায় একচল্লিশ বছর বাদে আবার কোনও ভারতীয় মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছেন। আরও তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, চার সদস্যকে নিয়ে এই বিশেষ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব যার কাঁধে তিনি ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু শুক্লা। যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতা আর মহাকাশ অভিযানের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেই কারণেই অক্সিয়াম-৪ অভিযানের জন্য ইসরো যখন ২ ভারতীয় নভশ্চরকে প্রাথমিক ভাবে বেছে নেয়, তখন শুভাংশু শুক্লার পাশাপাশি বিকল্প মহাকাশচারী হিসাবে প্রশান্ত বালকৃষ্ণন নায়ারকেও গোটা অভিযানের প্রস্তুতির জন্য স্পেস এক্স এবং অক্সিয়াম স্পেস কর্পোরেশনে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়। গত বছর মাঝামাঝি থেকে পুরোদস্তুর চলতে থাকে দুই ভারতীয় নভশ্চরের প্রশিক্ষণ। শেষ পর্যন্ত বিকল্প হিসাবে নায়ারকে রেখে দিয়ে মূল মহাকাশচারী হিসাবে শুভাংশুর নামে সীলমোহর দেয় ইসরো। চার সদস্যের এবারকার এই বিশেষ অভিযানে মহাকাশযানটি পরিচালনা করবেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু। আর অভিযানের তিন বাদবাদী সদস্য থাকবেন হাঙ্গেরির টিবর কাপু, নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি হুইটসন এবং পোলান্ডের স্লায়োস উজানস্কি। প্রায় ২৮ ঘন্টার যাত্রাশেষে ১১ জুন ভারতীয় সময় রাত দশটায় মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছবেন মহাকাশচারীরা। গত পক্ষকালের বেশি সময় ধরে মহাকাশচারীরা অভিযানের প্রস্তুতিতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১৪ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকালে অক্সিওম- ৪ মিশনের নভোচারীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মহাকাশ ক্ষেত্রের শীর্ষ কর্তা এবং মহাকাশ স্কুল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবেন। শুক্লার এই মহাকাশ কেন্দ্রে অভিযান, মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। পরবর্তী সময়ে গগনযান মিশনে তিনি যে মহাশূন্যে পাড়ি দেবেন, তা বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। যা ভারতের গগনযান মিশনের জন্য বড় দিকনির্ণায়ক হতে চলেছে। সেদিক থেকে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখতে চলেছে ভারত।