স্বল্প সঞ্চয়ে বিড়ম্বনা

 স্বল্প সঞ্চয়ে বিড়ম্বনা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জীবনে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য নানারকম নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা প্রয়োজন । এর মধ্যে মানুষের জীবনে আর্থিক নিরাপত্তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । মানুষকে জীবনে চলার পথে নানারকম অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয় । এর মধ্যে রয়েছে অসুস্থতা , বার্ধক্য , আকস্মিক মৃত্যু কিংবা দুর্ঘটনার মতো বিষয় এই সঙ্কটকে মোকাবিলা করার জন্যই সময় থাকতে আমাদের সবারই উচিত উপযুক্ত সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা ।

আয়ের সাথে ব্যয় সীমাবদ্ধ রেখে ভবিষ্যতে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার জন্যই কিছু অর্থ আমরা জমিয়ে রাখার বা তুলে রাখার চেষ্টা করি । এরই নাম সঞ্চয় । সঞ্চয়ের মূল প্রয়োজনীয়তা হলো ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । ভবিষ্যতের যেকোনও অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সঞ্চয়ের কোনও বিকল্প নেই । সঞ্চয় শুধু পারিবারিক নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না ? সঞ্চয় পরিবারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানোর পাশাপাশি জাতীয় জীবনকেও সমৃদ্ধ করে তোলে ।

মনে রাখতে হবে , সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধকালের জন্য নয় বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি সঞ্চয় স্বাস্থাগত অক্ষমতার সময় সহায়ক হিসাবে কাজ করে । বিপর্যয় ও দুর্দিনের সহায়ক হিসাবে পাশে দাঁড়ায় উচ্চশিক্ষা , বিবাহ , পারিবারিক অন্যান্য ব্যয়ের সহায়ক হিসাবেও সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে । আছে গৃহনির্মাণ এবং গৃহসামগ্রী ক্রয়ের জন্য আর্থিক জোগান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ।

নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস মানুষকে মিতব্যয়ী করে গড়ে তোলে । এর ফলে অপচয় রোধ হয় । আর্থিক সচ্ছলতা বজায় থাকে । সবচেয়ে বড় কথা হলো জাতীয় মূলধনের উৎস হল পারিবারিক সঞ্চয় । বিভিন্ন পরিবারের জমা সঞ্চয় পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে । আমাদের দেশে শহর ও নগর এলাকায় মানুষ তাদের সঞ্চয় বিভিন্ন জাতীয়কৃত বা বেসরকারী ব্যাঙ্কে জমা রাখতে পারলেও গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় ব্যাঙ্কের শাখা কম থাকায় মানুষের পক্ষে সেই সুযোগ থাকে না

তাছাড়া ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বিভিন্ন নিয়ম কানুনের কারণে গরিব দুর্বল অংশের মানুষ ব্যাঙ্কে অর্থ জমা রাখার প্রতি আগ্রহ কম দেখান । এই সুযোগে গ্রামে গঞ্জে নামে বেনামে বিভিন্ন চিটফাও এজেন্সি দরজা খুলে বসেছিল । সরল সাদাসিধে মানুষ চিটফাণ্ডের আকর্ষণীয় টোপে সেখানে অর্থ জমা দেওয়ার জন্য ভিড় করেন । এভাবেই একটা সময় চিটফাণ্ডের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে অল্প সময়ে বড়লোক হবার নেশায় গরিব অংশের মানুষ তাদের সর্বস্ব অর্থ এখানে জমা রাখেন । কিন্তু একটা সময় সরকারী আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানুষের জমাকৃত অর্থ হাতিয়ে পালিয়ে যায় চিটফাও ব্যবসায়ীরা ।

গ্রামীণ মানুষকে এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সূচনা করেছিল । মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকঘরের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে মানুষ যাতে তাদের বহু কষ্টার্জিত অর্থ জমা রাখতে পারেন তার উদ্যোগ নেওয়া হয় । অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের মধ্যে স্বল্প সন্ধ্যা প্রকল্প জনমনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প হল সবার সেরা সঞ্চয় প্রকল্প কারণ এখানে আকর্ষণীয় সুদে , কর ছাড়ের সুবিধা থাকে ।

এখানে মাসিক আয় , পাবলিক প্রভিডেন্ট ফাও , ডাকঘর মেয়াদি আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সংস্থান রয়েছে । কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলো , গ্রামীণ মানুষ যখন এই ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে বেশি বেশি অংশগ্রহণ শুরু করলেন তখন একে একে ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের প্রতি প্রশাসনের অবহেলা বাড়তে লাগল । সম্প্রতি রাজ্যের ধলাই জেলায় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে মানুষ অর্থ জমা দিতে পারছেন না । নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতাজনিত কারণেই এই অব্যবস্থা । এতে মানুষ আবারও ডাকঘরমুখী হওয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন । প্রশ্ন হলো , যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছিল প্রশাসনিক অব্যবস্থায় সেটা আবারও মাঠে মারা গেল নাতো ? যদি এভাবেই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে মানুষের অর্থ জমা রাখা নিয়ে এই ধরনের গাফিলতি ও বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে এই সুযোগে চিটফাগুগুলো নতুন নাম নিয়ে আবারও ডানা মেলে মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয় লুটে নিয়ে রাজ্যের আর্থিক ভিতটাকে যদি নাড়িয়ে দেয় তাহলে এর দায় কার ?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.