রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
স্বস্তির দিন শেষ!!
কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস সংক্ষেপে সিএনজি হল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। এই প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরল করা হয় এবং সেই তরলীকৃত গ্যাসকে ট্যাঙ্কে জমা করা হয়। মূলত সব ধরনের ডিজেল কিংবা পেট্রোলচালিত গাড়ি যেগুলোতে সিএনজি রূপান্তরের ব্যবস্থা আছে সেই সমস্ত গাড়িতেই এই সিএনজি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে যে হারে যানবাহনের জ্বালানির দাম আকাশ ছোঁয়া হচ্ছে অর্থাৎ পেট্রোল ও ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি যে পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা থেকে নিস্তার পেতে এই সিএনজি ছিল এতদিন সবচেয়ে সস্তার বিকল্প জ্বালানি।
সিএনজি শুধু সস্তার বিকল্প জ্বালানিই নয়। বলা হয় এই গ্যাস অনেক সহজলভ্য। এতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম। সিএনজি এবং পেট্রোল ডিজেল উভয়ের ক্ষেত্রে গাড়ির মাইলেজ সমান হলেও সিএনজি দামে সাশ্রয় অনেকটাই। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষায় পেট্রোল-ডিজেলের তুলনায় সিএনজি যথেষ্ট নিরাপদ ও দূষণমুক্ত। এককথায় বলা যায়, যানবাহনের ক্ষেত্রে এতদিনকার প্রথাগত জ্বালানির তুলনায় সিএনজি অনেকাংশেই এগিয়ে, অথচ দামেও অনেক সস্তা। ফলে পেট্রোল ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামের কারণে সাধারণ গাড়ি মালিকরা যখন সিএনজির ভরসায় স্বস্তির নি:শ্বাস নিচ্ছিলেন, তখনই একে একে সিএনজি জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানোর ফরমান দিতে শুরু করলো সরকার।
ঘটনা হল কেন্দ্রীয় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের অধীন পেট্রোলিয়াম প্রাইসিং এবং এনালাইসিস সেল গত বেশ কিছুদিন ধরে বছরে দুই দফায় প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা করে থাকে। এই নির্দেশিকা মেনেই গত ৩০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী ৬ মাসের জন্য সিএনজির মূল্য নতুন হারে ধার্য করার কথা ঘোষণা করে। এই নতুন ধার্য করা মূল্যের ফলে একলাফে সিএনজি গ্যাস ব্যবহারকারীরা বড়সড় সঙ্কটের মুখে পড়লেন। শুধু সিএনজিই নয়, গোটা দেশেই এই নির্দেশিকার মাধ্যমে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্যও আচমকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশ যখন উৎসবের আনন্দে মশগুল, তখনই ১ লা অক্টোবর থেকে নতুন বর্ধিত মূল্য কার্যকর করা হয়েছে।
ত্রিপুরাতে এক লাফে সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১০ টাকা। শনিবার রাত ১২ টার পর এই বর্ধিত মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। আগরতলার পশ্চিম জেলা প্রতি কেজি সিএনজি গ্যাসের দাম ৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। আর পশ্চিম জেলার বাইরে বাকি সব জেলাতে ৭২ টাকার জায়গায় প্রতি কেজি সিএনজি কিনতে হবে ৮১ টাকা ৩০ পয়সায়। ত্রিপুরায় গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ ফরমান এখনও সরকারীভাবে প্রকাশ্যে না এলেও দেশের প্রায় সর্বত্রই উভয় গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে পেট্রোলের সঙ্গে সিএনজির দামের ফারাক তেমন আর বিশেষ কিছু রইলো না।
এর ফলে এতদিন যে সমস্ত গ্রাহকরা পেট্রোল ডিজেলের চড়া দামের হাত থেকে বাঁচতে এবং সাশ্রয়ের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার শুরু করেছিলেন তারা আর সেই পরিমাণ সাশ্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পেট্রোপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিএনজি এবং সিএনজির এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি যে কঠিন সঙ্কটের দিকে দেশের মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনও রাস্তাই এখন খোলা থাকলো না, তখন আগামীদিনে এর বিষময় ফল কিন্তু বড় বিপর্যয় ও দুর্যোগের দিকে দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এর সর্বগ্রাসী প্রভাব হবে আরও মারাত্মক।
কারণ ইউরোপের দেশগুলোতে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এমনিতেই বিশ্ব বাজারে ধাক্কা দিচ্ছে। তাই ভারতের পক্ষে গ্যাসের আমদানি বাড়ানোও সম্ভব নয়। কারণ ভারতে ব্যবহৃত মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৫০ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে। এই অবস্থায় এর ধাক্কা লাগবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচে। চাপবে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা। সব মিলিয়ে দেশের নাগরিককে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে চলেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। কিন্তু সরকারের ব্যয় সচনের কোনও লক্ষণ নেই। এটাই ভাবাচ্ছে দেশবাসীকে।