স্বস্তি কমিশনের

 স্বস্তি কমিশনের
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে চলমান অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ পর্বের মধ্যেই বড় স্বস্তি পেলো দেশের নির্বাচন কমিশন। ইভিএমের স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন মহলে সংশয় ও প্রশ্ন নানা সময় সামনে এসেছে। বিশেষ করে ভোট এলেই বিরোধী শিবিরের তরফ থেকে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এবারও লোকসভা ভোটের মুখে ইভিএমের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার প্রশ্নটি সামনে এসেছে। বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্রের পরিবর্তে আবারও ব্যালট পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিও তোলা হয়েছে কিছু কিছু মহলের তরফে। এই নিয়ে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। মামলার শুনানির সময়, সম্পূর্ণভাবে ইভিএম বাতিল করার পক্ষে মত না দিলেও, নির্বাচনি প্রক্রিয়ার পবিত্রতা রক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়ে কমিশনকে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে বলেছিলেন শীর্ষ আদালত। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তাও জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট বিতর্ক ইস্যুতে গত বৃহস্পতিবারই কমিশনের উদ্দেশে শীর্ষ আদালত মন্তব্য করেছিল- দেশের ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে। তাই যে কোন মূল্যে ভোট প্রক্রিয়ার পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত। যেমনটা হওয়া উচিত বলে ভোটাররা মনে করছেন, তেমনটা হচ্ছে না বলে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে কারও মনেই কোন সংশয় কিংবা আশঙ্কা থাকা উচিত নয়। মূলত গত ক’দিন ধরেই শীর্ষ আদালতে ভোটের যে বিষয়গুলো নিয়ে শুনানি চলছিল, তার অন্যতম একটি বিষয় ছিল, ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পর সঠিক জায়গায় সেই ভোটটি পড়লো কিনা সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিভিপ্যাটের স্লিপের মাধ্যমে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করা। শীর্ষ আদালতে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস সংক্ষেপে এডিআর- এর পক্ষ থেকে এই মামলাটি করা হয়েছিল। সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল প্রতি বিধানসভায় ২০টি করে ভিভিপ্যাট ভোটের সময় কাজে লাগানো হলেও, ৫ টির বেশি তা গণনার কাজে ব্যবহৃত হয় না। এক্ষেত্রে ভিভিপ্যাট থেকে স্লিপ সংগ্রহ করে ভোটারদের ব্যালটবাক্সে তা ফেলতে দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। পাশাপাশি ভোটে যে কোন ধরনের কারচুপি আটকাতে প্রত্যেকটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা করা দরকার বলেও সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়েছিল। আদালতে আগেই ১০০ শতাংশ বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মেলানোর দাবির বিরোধিতা করেছিল। কমিশন বলেছিল সমস্ত বুথে ইভিএমের সঙ্গে ভিভি প্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আবার ব্যালট পেপারের যুগে ফিরে যাবে। পাশাপাশি ভোটারদের হাতে ভিভিপ্যাট স্লিপ তুলে দেওয়ার দাবিও খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার আদালত ভিভিপ্যাট ১০০ শতাংশ যাচাইয়ের সব আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছে, ভোটের পর ইভিএম ৪৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কার্যত এদিনে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় ইভিএমের স্বচ্ছতা নিয়ে কেন্দ্র উত্থাপিত বিভিন্ন সংশয়ের উপর সাময়িক হলেও একটি সুরক্ষা কর্ম তৈরি করে দিল। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের দিনই একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বললেন, এর আগেও ইভিএম নিয়ে ৪০ টি মামলা হয়েছে এবং উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্ট সেগুলি দেখেছে। সব মামলাই আদালতে খারিজ হয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই রাজীব কুমার জানান, প্রকাশিত এই বইটিতে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া আছে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলগুলো কতবার ভোটে হেরেছে তার বিস্তৃত উল্লেখ আছে এই বইয়ে। অন্ধভাবে অবিশ্বাস, অযৌক্তিক সন্দেহের জন্ম দিতে পারে বলে রায় ঘোষণার পর মন্তব্য করেছেন বিচারপতি খান্না। পাশাপাশি এই মামলায় মাত্র বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম আদালত জানিয়েছিল, তারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থার কাজেও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সেই পর্যবেক্ষনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের জন্য যথেষ্ট স্বস্তির বার্তা বহন করে এনেছে। তবে বিচারপতিদ্বয় যে কথাটা বলেছেন, ভোটের ফল ঘোষণার ৭ দিন পর নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার আবেদন জানাতে পারবেন যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এবং সেই গণনায় ত্রুটি ধরা পড়লে উক্ত ফি ফেরত দেওয়া হবে- এই পর্যবেক্ষণ ও অবস্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.