স্বাগত ২০২৫
বিদায় ২০২৪। বহু ঘটনার সাক্ষী ২০২৪। ফের একটা বছর ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিল।নয়া একটা বছর যখন আসে এমন অনেক আশা প্রত্যাশা থাকে নয়া বছরকে নিয়ে। পুরোনো বছর সাক্ষী থাকে নানা ঘটনার।একটা রাজ্যের ক্ষেত্রে, দেশের ক্ষেত্রে এবং এমনকী গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে একটা বছর নানা ঘাত প্রতিঘাত, চড়াই- উৎরাই ইত্যাদির মিশেলে অতিবাহিত হয়।২০২৪ সালও নানা প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি নিয়েই কেটেছে। ২০২৪ সাল সেই নিরিখে বলা যায় আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে যেমন ভালোমন্দ মিলিয়েই অতিবাহিত হয়েছে, তেমনি গোটা দেশের ক্ষেত্রেও এই বছরটা (২০২৪) ভালোমন্দের মিশেলেই কেটেছে।আমাদের এই ত্রিপুরা রাজ্যের কথাই যদি ধরা হয় তাহলে বলা যায়,এ বছরের প্রাপ্তির ভাঁড়াড়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই।কিন্তু ২০২৪ সাল আমাদের রাজ্যের ইতিহাসে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বীভৎসতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য।প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় পর ২০২৪ সালে এ রাজ্য ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে।ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সম্পদের।মানুষের প্রাণহানিও হয়েছে।মোট ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ভয়াবহ বন্যায়।পশ্চিম জেলা থেকে দক্ষিণ জেলা, সিপাহিজলা থেকে গোমতী হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বাড়িঘর, চাষযোগ্য জমি, গৃহপালিত পশুপ্রাণী সমস্ত কিছুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।রাস্তাঘাট, স্কুলবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিকাঠামো সহ নানা পরিকাঠামোর। শুধু তাই নয়, কয়েক দশক পর জল ছাড়া হয়েছে ডম্বুর জলপ্রপাতের। এই ঘটনাটিও ২০২৪ সালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বন্যার এই বীভৎসতার পাশাপাশি এ বছর বেশ কিছু দাঙ্গা,হিংসা, হানাহানির ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। প্রথমে শুরু হয়েছিল রাণীরবাজারেই। পরবর্তী সময় পানিসাগরে, কাঞ্চনপুরেও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে। এতে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এরজন্য রাজ্য প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা, উত্তেজনার তেমন নজির নেই। কিন্তু সাম্প্রতিককালের এই সমস্ত ঘটনা রাজ্যের জন্য ২০২৪ সালে খুব একটা ভালো খবর ছিল না। তেমনি গণ্ডাছড়ায় জাতিগত হিংসায় অনেক মানুষের বাড়িঘর পুড়েছে। আজও হাজার মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এই ধরনের জাতিগত হিংসার ঘটনাও রাজ্যের জন্য ভালো উদাহরণ নয়।
২০২৪ সালে রাজ্য হারিয়েছে বেশ কয়েকজন গুণীজনকে। বিশিষ্ট কবি কল্যাণ গুপ্ত, সুবিমল রায়, মানস দেববর্মণ, শ্যামল চৌধুরীর মতো গুণী সাহিত্যিক, লেখকদের আমরা হারিয়েছি।ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তা বড় ক্ষতি।২০২৪ সাল সেই নিরিখে আমাদের জন্য দুঃখের খবর বয়ে আনে। এক বছরে এতজন ত্রিপুরার গুণীজনকে হারানো সত্যিই রাজ্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
এ বছর রাজ্যের জন্য এক খুশির খবর বয়ে এনেছেন রাজ্যের রাজ পরিবারের এক সদস্য। তা হলে এ রাজ্যের গুণী সন্তান যীষ্ণু দেববর্মণের তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল পদে মনোনীত হওয়া। স্বাধীনতার পর এই প্রথম ত্রিপুরার কোনও সন্তান রাজ্যপাল পদে মনোনীত হলেন। নিঃসন্দেহে এটা ত্রিপুরার জন্য গর্বের বিষয়।
এ বছর উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিলো লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যে যদিও এর তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। কেন্দ্রের শাসক দলের প্রভাবে ২ প্রার্থীই নির্বাচিত হন লোকসভায়।
এ বছর ২ জন জনপ্রতিনিধি ত্রিপুরায় নির্বাচিত হন। এর একজন দীপক মজুমদার। তিনি প্রথমবার রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত হন। অন্যদিকে অপর এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রাজীব ভট্টাচার্য রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
বছরের শেষদিকে এ বছর এনইসির প্লেনারি রাজ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া ছিল এ রাজ্যের নিরিখে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তেমনি বছরের শেষদিকে ত্রিপুরার পুষ্পবন্দ প্যালেসে হোটেল বিতর্ক নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধে। সব মিলিয়ে বলা যায় এ বছরটি ভালোমন্দের মিশেলেই রাজ্য কাটায়। আগামী বছর ২০২৫ সালের জন্য অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। একটি রাজ্যের, দেশের জন্য আগামী বছর অনেক ভালো খবর বয়ে আনবে এটাই প্রত্যাশা।২০২৫ সালকে সেজন্য আমরা স্বাগত জানাই। ২০২৫ সালের ১লা জানুয়ারীর ভোর সবার জন্য সুখকর বয়ে আনুক সেটাই হোক সবার কামনা।