হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?
হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ,জে পি নাড্ডাদের হরিয়ানা ভোটকে ঘিরে তেমন দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ছে না।হরিয়ানার বিজেপি নেতারাও বড় কোনও জনসভা না করে মূলভ ছোট ছোট জনসভা ঘরোয়া সভার উপরই বেশি জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে কংগ্রেস হরিয়ানা জিততে এবার মরিয়া প্রয়াস নিয়েছে।যদিও কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ মিটেছে এবং যুদ্ধ জয়ের শপথ নিয়েছে।অন্যদিকে রয়েছে আমআদমি পার্টি,জেজেপি আইএনএলডির মতো দল। তবে এবারের ভোটে অন্যতম বিষয় হচ্ছেন দুই জাতীয় দলের মধ্যে সরাসরি লড়াই। গত লোকসভা নির্বাচনেই রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলো। লোকসভায় দশটি আসনের মধ্যে বিজেপি পাঁচটি এবং কংগ্রেস পাঁচটি আসন পেয়েছিল।হরিয়ানায় নানা ইস্যুতে বিজেপি এবার ব্যাকফুটে।একদিকে কৃষক বিক্ষোভ,বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের অভাব, অগ্নিবীর ইস্যু সংরক্ষণ ইস্যু ইত্যাদি বড় ইস্যু।প্রতিটি ইস্যুকে এবার বড় করে কংগ্রেস মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।ভূপেন্দর সিং হুডা,দীপেন্দের সিং হুডারা এবার নির্বাচনের বহু আগে থেকে রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন।অন্যদিকে কংগ্রেসের আরেক গোষ্ঠীর নেত্রী কুমারী শিলজা, কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালারা এবার রাজ্য কংগ্রেসের টিকিট বন্টন নিয়ে অনেকটাই অসন্তুষ্ট।ফলে তারা নির্বাচনি প্রচার থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিলেন।সম্প্রতি হাইকমান্ডের গুঁতো খেয়ে উভয় নেতা নেত্রীই শেষ পর্যন্ত প্রচারে নেমেছেন। কংগ্রেস হাইকমান্ড ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে হরিয়ানায় কংগ্রেসে জিতছেই।তাই যে কোনও মূল্যে হরিয়ানা যেন রাজস্থান না হয়।রাজস্থানে বছরব্যাপী দুই কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট ও শচীন পাইলটের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দলকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে।এবং তাও খুব বেশি ব্যবধানে নয়। অল্প ভোটের শতাংশে কংগ্রেস এই রাজ্যটা হাতছাড়া করে।তাই কংগ্রেস হাইকমান্ড এবার আগেভাগেই কংগ্রেসকে কড়া বার্তা দিয়ে রাখে যে কোনও মতেই হরিয়ানা হারানো চলবে না।বিজেপির অবস্থা শোচনীয় হরিয়ানায়।গত লোকসভা ভোটের মুখে আচমকা হরিয়ানা সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় দুষ্মন্ত চৌতালার পার্টি জেজেপি।যদিও সরকার পড়ে যায়নি।কেন না রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙেও দেননি কিংবা বিধানসভায় আস্থা ভোট নেবার উদ্যোগ নেননি রাজ্যপাল।ফলে সরকার গরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ পায়নি।এর আগে মাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি হাইকমান্ড নায়েব সিং সাইনিকে বসায়।দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরকে লোকসভায় টিকিট দিয়ে পাঠিয়ে দেয় বিজেপি।ফলে বিজেপি হরিয়ানায় এক প্রকার নেতাহীন হয়ে পড়ে। হরিয়ানায় বিজেপির কাছে এই মুহূর্তে ওজনদার এবং বড় মাপের নেতা নেই বললেই চলে।বিধানসভা ভোটের মুখে বিজেপি এবার তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।মনোহর লাল খট্টরকেই তাই ছোট ছোট জনসভা ইত্যাদি করে বেড়াতে হচ্ছে রাজ্যে। প্রধানমন্ত্রী এক দুবার এসে সভা করে গেছেন।অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা সেইভাবে প্রচারে নেই।অর্থাৎ বিজেপি এক প্রকার হরিয়ানা ছেড়ে দিয়েছে বলা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখেও সেই সংরক্ষণ ইস্যু,কংগ্রেস সংরক্ষণ বিরোধী এই প্রচার ছাড়া আর কিছু নেই বিজেপির কাছে।অন্যদিকে কংগ্রেস বেকার কর্মসংস্থান, কৃষক স্বার্থ সহ অগ্নিবীর ইত্যাদি ইস্যুতে বিজেপিকে চেপে ধরেছে।এই অবস্থায় বিজেপির কাছে এবার হরিয়ানা ধরে রাখা বেজায় চ্যালেঞ্জ।দশ বছর পর হরিয়ানায় বিজেপি এবার ব্যাপক প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখে পড়েছে।৯০ আসনের হরিয়ানায় কংগ্রেস বাজি মারতে পারে কি না তাই এখন দেখার।