অনলাইন প্রতিনিধি :-ডায়াবেটিস গুরুতর রোগ যা আজকাল অনেকেরই জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক উপসর্গগুলির মধ্যে একটি হল হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া। এই সমস্যাটি মূলত ইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিস চিকিৎসার কারণে ঘটে, যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং রোগীর শরীরে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হল রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার নিচেও নেমে যাওয়া। গ্লুকোজ হল শরীরের প্রধান শক্তির উৎস, এবং তার অভাব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে। সাধারণত, ডায়াবেটিক রোগীরা যাদের ইনসুলিন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের ব্যবহার থাকে, তারা হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগতে পারেন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ:
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন-১. ওষুধের মাত্রা বেশি নেওয়া:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তার অতিরিক্ত মাত্রা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
২.খাবারের অভাব বা অনিয়মিত খাওয়া: যদি কেউ খাবার গ্রহণে বিলম্ব বা পরিমাণ কম করেন, তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৩.অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম : অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কাজের কারণে শরীরের শক্তির চাহিদা বেড়ে যায় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৪.অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে গ্লুকোজের উৎপাদন কমে যেতে পারে, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।৫.অন্য যেকোনও অসুস্থতা :ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ: হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গগুলি সাধারণত তীব্র হতে পারে, এবং রোগী যদি তা না বোঝে,তবে তাকে অসুস্থতার সম্মুখীন হতে পারে।কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
১.শরীরে দুর্বলতা ও অস্থিরতা।
২.ঘাম ঘাম ভাব ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
৩.কম্পন বা শিরশিরানি/শিহরণ
৪.অবসাদ ও অশান্তি/অস্বস্তি।
৫. মাথাব্যথা।
৬.শারীরিক দুর্বলতা ও বিভ্রান্তি
৭.অজ্ঞান হয়ে পড়া (অত্যন্ত গুরুতর ক্ষেত্রে)
হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়:হাইপোগ্লাইসেমিয়া সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বাড়িতে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। সঠিক জ্ঞান ও ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিক রোগীরা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বাড়িতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া পরিচালনা করার কয়েকটি কার্যকরী উপায় হল-
১.রক্তে শর্করা নিয়মিত পরিমাপ করুন:-
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রক্তে শর্করার স্তর নিয়মিত পরিমাপ করা। যদি রক্তে শর্করা কমে যায়, তা দ্রুত শনাক্ত করা যায়। হোম গ্লুকোমিটার-এর সাহায্যে রোগীরা নিজেই তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা
বাড়িতে পরীক্ষা করতে পারেন।
২.দ্রুত শর্করা গ্রহণ করা :যখন রোগী হাইপোগ্লাইসেমিয়া অনুভব করেন, তখন প্রথম পদক্ষেপ হল দ্রুত শর্করা গ্রহণ করা। এ জন্য রোগী একটি দ্রুত শর্করা উৎস যেমন ফ্লুইড (ফলের রস বা সাধারণ কোলার মতো) চিনি বা চিনির জল,বাড়িতে পরীক্ষা করতে পারেন।
২.দ্রুত শর্করা গ্রহণ করা :যখন রোগী হাইপোগ্লাইসেমিয়া অনুভব করেন, তখন প্রথম পদক্ষেপ হল দ্রুত শর্করা গ্রহণ করা। এ জন্য রোগী একটি দ্রুত শর্করা উৎস যেমন ফ্লুইড (ফলের রস বা সাধারণ কোলার মতো) চিনি বা চিনির জল,গুড়, মধু বা চকোলেট খেতে পারেন। এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাবে এবং উপসর্গগুলি কমে যাবে।
৩.স্ন্যাকস রাখা :ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত স্ন্যাকস যেমন-– বাদাম, ফল, বা হালকা স্যান্ডউইচ রাখা উপকারী। যদি খাবার মিস হয়ে যায় বা অস্বাভাবিক পরিমাণে শর্করা কমে যায়, তবে এই স্ন্যাকসগুলি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।
৪.শারীরিক পরিশ্রমের পূর্বে ও পরে সতর্কতা:
শারীরিক পরিশ্রমের আগে এবং পরে খাদ্য গ্রহণের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। ব্যায়ামের সময় শরীরের শর্করার প্রয়োজন বেড়ে যায় এবং এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ব্যায়াম করার আগে, পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করা উচিত এবং ব্যায়াম শেষ হলে আবার খাবার খাওয়া উচিত।
৫.সময় মতো ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ :যেহেতু ইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিস ওষুধের মাত্রা বেশি নেওয়ার কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় ইনসুলিন নেওয়া উচিত। অনেক সময় ভুল মাত্রায় ইনসুলিন নেওয়া বা ভুল সময়ে ওষুধ নেওয়া হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হতে পারে।
৬.অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন থেকে বিরত থাকুন :অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের এই দুটি উপাদান সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে সেগুলি গ্রহণের সময় যদি শারীরিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল থাকে।
৭.আপাতকালীন চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকা :হাইপোগ্লাইসেমিয়া যদি খুব তীব্র হয়, তবে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্লুকাগন প্রদান করা হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।
৮.পরিবার ও বন্ধুদের সচেতন করা :
হাইপোগ্লাইসেমিয়া যদি খুব তীব্র হয়ে যায়, তবে রোগী মনের অজ্ঞানতা বা বিভ্রান্তিতে ভুগতে পারে। এর জন্য পরিবার বা বন্ধুদের সতর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তারা রোগীকে দ্রুত সহায়তা দিতে সক্ষম হবে।এতে করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং রোগীকে প্রাণনাশের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া : ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি:-
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা দিয়ে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।রোগীদের উচিত তাদের রক্তে শর্করার স্তর নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং উপসর্গগুলি প্রথম থেকেই লক্ষ্য করা। প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীকে তার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হতে হবে। এটি রোগীদের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া সহ অন্যান্য সমস্যা থেকে তাদের রক্ষা করবে।
উপসংহার:-
হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি হলেও এর যথাযথ চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতা, নিয়মিত রক্তে শর্করার পরীক্ষা এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সময়সীমা মেনে চলা হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইন প্রতিনিধি :-ফের লাইনচ্যুত ট্রেন। ছিটকে গেছে তিনটি কামড়া। ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার তিতলাগড় স্টেশনের কাছে।…
অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রথম সংক্রমণের ৫ বছরের রেষ কাটতে না কাটতেই নতুন করে চিনে খোঁজ মিলেছে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-গত ৫ আগস্ট হাসিনা জামানার পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। তবে…
শুক্রবার মরিশাসের সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন আসন্ন ন্যাশনাল ডে বা জাতীয় দিবসের উদযাপনে প্রধান অতিথি…
কোনও চাওয়া যখন পথের থেকে বেশি সংখ্যায় পথবন্ধক তৈরি করে, তাকে পরিত্যাগ করাই বিধেয়। কারণ…
অনলাইন প্রতিনিধি:- নারী নির্যাতন কিংবা মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা রাজ্যে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি…