হাই জাম্প’ দিয়ে চাঁদের আরও কাছাকাছি চন্দ্ৰযান।
চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেল ভারতের চন্দ্রযান-৩। এদিন তাকে ১৭৪ কিমি X ১৪৩৭ কিমি কক্ষপথে নিক্ষেপ করা হল। অর্থাৎ চাঁদ ছোঁয়ার আরও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ইসরোর পাঠানো এই চন্দ্রযান। ইসরোর তরফে ট্যুইট করে জানানো হয়েছে এমনটাই। এর পরবর্তী নিক্ষেপ বা কক্ষপথ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য ১৪ অগাস্টের দিন নির্ধারিত করা হয়েছে। ওইদিন সকাল ১১.৩০ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে এই কক্ষপথ বদলের কাজ শেষ করবে ইসরো।সমস্ত বাধা পেরিয়ে চাঁদের পরিসরে চন্দ্রাযান-৩ ঢুকে পড়েছিল গত শুক্রবার। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় সফট ল্যান্ড করবে তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। এখন চাঁদের প্রথম কক্ষপথেই পেরিয়ে দ্বিতীয় কক্ষে প্রবেশ করল তৃতীয় চন্দ্রযান। আর আসল অগ্নিপরীক্ষা হবে সেই অবতরণের দিন; অর্থাৎ ২৩ আগস্ট।উঁচু থেকে গতি কমিয়ে চাঁদের মাটিতে নেমে আসার প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়। সামান্য ভুল হলেই দ্বিতীয় চন্দ্রযানের বিক্রমের মতো মুখ থুবড়ে পড়বে চাঁদের বুকে। আর তারপরেই চাঁদের ধুলোয় চিরতরে হারিয়ে যাবে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময় ও গতি এই দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া আরও একটা বড় সমস্যা আছে। চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারই খবর পাঠিয়েছে চাঁদের মাটিতে অবতরণের সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে চাঁদের ধুলো বা ‘রেগোলিথ’। তার হাই সেন্সর ক্যামেরা
এবং লার্জ এরিয়া সফট এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারে ধরা দিয়েছে চাঁদের মাটিতে ঘটে চলা আজব কাণ্ডকারখানা। গত ২৯ দিনে একবার চাঁদের দক্ষিণ পিঠের উপর পুরোপুরি একবার পাক খায় অরবিটার। পুরোটা পরিক্রমা করতে তার সময় লাগে মোট ৬ দিন। তার মধ্যেই দক্ষিণ মেরুর আনাচেকানাচে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। অরবিটারের ডেটা বলছে, চাঁদের মাটিতে খনিজের ছড়াছড়ি। তাদের মধ্যে চার্জড পার্টিকলের (প্রোটন- ইলেকট্রন) নিরন্তর বদলও লক্ষ্য করেছে সে।
অরবিটারের লার্জ এরিয়া সফট এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার দেখেছে, দক্ষিণ পিঠে চাঁদের ধুলো বা রেগোলিথের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, টাইটেনিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ মৌল। তাদের অণু-পরমাণুর মধ্যে নিরন্তর উত্তেজিত হয়ে উঠছে ইলেকট্রনেরা।ধাক্কাধাক্কি, মারামারি চলছে।
উত্তেজিত হয়ে উঠছে ইলেকট্রনেরা।এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারের চোখে ধরা পড়েছে, এই ইলেট্রনেরা এতটাই উত্তেজিত, যেন মনে হচ্ছে তারা নেচে নেচে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি বা অন্য কোনও মহাজাগতিক রশ্মি চাঁদের মাটিতে সরাসরি আছড়ে পড়ার সময় এই সূক্ষাতিসূক্ষ ধূলিকণাগুলিকে আঘাত করে। ফলে এগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ তরঙ্গ তৈরি হয়।গরম হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য ধূলিকণাগুলো তড়িৎ ঋণাত্মক কণা বা ইলেকট্রন ছাড়তে থাকে। তাপমাত্রার ফারাক এবং মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে বিরাট এলাকা জুড়ে ধুলোর ঝড় শুরু হয়। এই ধুলোর ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ফোর্স চুম্বকীয় স্তর তৈরি করে।তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রমকে যদি নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে হয়, তাহলে চাঁদের ধুলোর সঙ্গে আগে বোঝাপড়া সেরে নিতে হবে। রেগোলিথদের তাণ্ডব নাচন সামলে হাল্কা পালকের মতো সফট ল্যান্ড করতে হবে চাঁদের মাটিতে।