হার্টের চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাবে রোগীর মৃত্যু, বিক্ষোভ!!

 হার্টের চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাবে রোগীর মৃত্যু, বিক্ষোভ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:-রাজধানীর
আইজিএম হাসপাতালে বুধবার এক রোগীর মৃত্যু ঘিরে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত রোগীর আত্মীয়ের দৌড়াদৌড়িতে কিছুক্ষণের জন্য হাসপাতালে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে হার্টের চরম বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর কারণে এই পরিস্থিতি দেখা দেয়।ঘটনার খবর পেয়ে পশ্চিম থানা থেকে পুলিশ ছুটে আসে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিকালে সুভাষ দেব (৭৩) নামের মুমূর্ষু এক রোগীকে আইসিইউ থেকে বের করে জিবি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে গেলে হাসপাতালেই অল্প সময়ের মধ্যে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মঠ চৌমুহনীর বাসিন্দা সুভাষ দেবকে মঙ্গলবার রাত পৌনে তিনটা নাগাদ আইজিএমে আনা হয়।হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য,রোগীর হাটের সমস্যাজনিত কারণে হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আনা হয়। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে নেওয়া হয়।কিন্তু হাসপাতালে কোনও হার্টের চিকিৎসক না থাকায় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দেন। রোগীর হার্টের মারাত্মক সমস্যাজনিত কারণে দ্রুত একজন হার্টের চিকিৎসক দেখানোর প্রয়োজন পড়ে। আইজিএমে হার্টের বিশেষজ্ঞ কোনও চিকিৎসক না থাকায় রোগী নিয়ে রোগীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন প্রচণ্ড বিপাকে পড়েন। এই অবস্থায় হার্টের বিশেষজ্ঞ কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে না থাকায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর শারীরিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী হাসপাতাল আইজিএমের চিকিৎসা পরিকাঠামোর এই বেহাল দশায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া উদ্বিগ্ন রোগীর আত্মীয়রা সিদ্ধান্ত নেন জিবিতে নিয়ে যাবেন। তাতে জিবিতে নেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকেও রেফার করে দেওয়া হয়। বিকালে আইসিইউ থেকে বের করে পাঁচতলা ভবনের লিফট ধরে নিচে নেমে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ব্লকের সামনের দিকে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে উঠানো হয়। আইসিইউ থেকে বের করার সময় অক্সিজেনের সাপোর্ট (সিলিন্ডার) দিয়ে নিচে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর পর সেই সিলিন্ডার সরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের নিজস্ব অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। তখনই রোগীর আত্মীয়রা দেখেন রোগী আচমকা নিস্তেজ হয়ে পড়েন।নড়াচড়া কিছুই নেই।এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন রোগীর আত্মীয়রা প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বিকট চিৎকার করতে করতে কাছেই ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান।চিকিৎসককে ছুটে এসে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থাকা এই রোগীকে দেখার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু ইমার্জেন্সি ব্লক তথা বিভাগের চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে গিয়ে রোগী তারা দেখবেন না। রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসার জন্য বলা হলে রোগীর আত্মীয়স্বজন তাতে ক্ষোভে ও রোগীর শারীরিক অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে আরও চিৎকার, কান্নাকাটি শুরু করেন। এই অবস্থায়ও ইমার্জেন্সির এই ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীকে আর ইমার্জেন্সিতে না নিয়ে সোজা লিফট ধরে পাঁচতলায় পুনরায় আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ ছুটে এসে শোকাহত মৃতের পরিবারের ও আত্মীয়ের ক্ষোভ ও উত্তেজনা সামাল দেয়। হাসপাতালের আইসিইউর এবং মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের বক্তব্য, অনেকদিন আগে থেকেই রোগীর হার্টের সমস্যাজনিত কারণে চিকিৎসা চলছিল। এদিকে আইজিএমে হার্টের কোনও চিকিৎসক না থাকায় ও হার্টের চিকিৎসা পরিকাঠামো না থাকায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে সুভাষ দেবের মৃত্যু হয় বলে রোগীর শোকাহত পরিবারের অভিযোগ। জিবিতে স্থানান্তরিত করার সময় হাসপাতাল থেকে রোগীর সঙ্গে কোনও চিকিৎসক না দেওয়ায় আইসিইউ থেকে বের করার পর প্রয়োজনীয় মনিটরিং করার অভাবে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়ে পড়ে বলেও রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকার রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে চলছে। অথচ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর বহু প্রাচীন আইজিএমের মতো সরকারী হাসপাতালে হার্টের কোনও চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই।রোগীরা হার্টের সমস্যা নিয়ে এসে হাসপাতালে বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর কারণেই রোগীর মৃত্যুর এই পরিণতি হচ্ছে বলেও ক্ষুব্ধ শোকাহত রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.