হাসিনার পদত্যাগ জট!!

 হাসিনার পদত্যাগ জট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এমনিতেই গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়ার পর থেকে উত্তাল বাংলাদেশ। উগ্র মৌলবাদীরা দেশটিতে ব্যাপক হিংসা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুঠপাট, হত্যা এবং ধর্ষণের মতো নারকীয় ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই নারকীয় এবং অমানবিক হিংস্রতা এখনও অব্যাহত। কবে এই হিংস্রতা বন্ধ হয়ে বাংলাদেশে শান্তি ফিরবে, এখনো তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। একদিকে ব্যাপক হিংসা, লুঠপাট, অন্যদিকে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা এখন কাহিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার কী ফল হয়েছে? গত তিন মাসেই বাংলাদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছে। এখন নিজেরাই নিজেদের কপালে হাতাচ্ছে। তিন মাসেই বাংলাদেশের জনগণ উপলব্ধি করতে পারছে, কতবড় সর্বনাশ তাদের হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যাবে? এ নিয়ে যখন দেশব্যাপী জোর আলোচনা শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের একটি মন্তব্যে নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। নতুন করে জল্পনা ও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে।শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পর আচমকাই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন হাসিনার ইস্তফা নিয়ে এমন এক মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবাদ মাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ‘অনেক খুঁজেও তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র হতে পাননি। মনে হয় পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় পাননি হাসিনা’। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই এখন উত্তাল পড়শি দেশ। হাসিনার দেশ ছাড়ার পর তাঁর পুত্র সজীব আহমেদ জয়ও দাবি করেছিলেন, হাসিনা পদত্যাগ করেননি।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের এই মন্তব্যের সহজ অর্থ যদি ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে বলতে হবে, এখনও খাতায় কলমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন শেখ হাসিনাই। আর তদারকি সরকার বেআইনি। রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্য সামনে আসার পরই তাঁকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন তদারকি সরকারের আইনি উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তাঁর সাফ কথা,ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যাচার’ করছেন। তাঁর কথায়, রাষ্ট্রপতি নিজেই গত ৫ আগষ্ট রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পিছনে রেখে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী ওঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য শপথ লঙ্ঘনের শামিল।কিন্তু এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে পড়শি দেশে কি আদৌ কোনও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে? তর্কের খাতিয়ে যদি ধরেও নেওয়া হয় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তাতেই বা কী হবে? আইনজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রপতির দাবি সঠিক হলেও এখন তাতে আর কোনও গুরুত্ব নেই। কেননা, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে গেছেন। এরপরই রাষ্ট্রপতি নিজেই সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন কি করলেন না, এ নিয়ে বিতর্কের আর কোনও অবকাশ থাকে না। তাছাড়া হাসিনা দেশ ছাড়ার পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের নীতি নির্দেশিকা মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির পরামর্শ অনুযায়ীই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন। ফলে এখন এসব মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব বা যৌক্তিকতা নেই। এমনটাই মনে করছে আইনজ্ঞ মহল। তবে পড়শি দেশে রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্য কোনও গুরুত্ব পায় কিনা সেটা সময়ই বলবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.