হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || জ্বলছে মণিপুর। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ দিয়েছে।প্রশাসনের তরফে রাজ্যবাসীকে সংযত থাকতে এবং শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস বাহিনীকে নামানো হয়েছে। রাজ্যজুড়ে অশান্তির জেরে ইতোমধ্যেই রাজ্যে প্রায় ৯০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায় এবং উপজাতিদের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে ঘিরে এই পরিস্থিতি। গোটা ঘটনায় নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারও। কেন্দ্রের তরফে ইতোমধ্যেই রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সকে পাঠানো হয়েছে।


ঘটনার সূত্রপাত বুধবার।নাগা এবং কুকি উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষজন মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়কে তপশিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেবার উদ্যোগ নেবার প্রতিবাদে একটি উপজাতি সংহতি মিছিল বের করে। এতেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।


উপজাতি জনগোষ্ঠীর সাথে মেইতেই মণিপুরিদের সংঘর্ষ বাধে।দফায় দফায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস,মানুষের বাড়িঘরে আগুন কিছুই বাদ যায়নি।এর ফলে প্রচুর মানুষজন নিয়ন্ত গৃহহীন হয়ে পড়েন।এরই পরিপ্রেক্ষিতে হিংসা মোকাবিলার রাজ্য সরকার দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ দেয়। রাজ্যপাল এই নির্দেশ দেন। রাজ্যপালের নির্দেশে জানিয়ে দেন জেলাশাসকরা, ম্যাজিস্ট্রেটরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখলে প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ দিতে পারেন।


এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসাম রাইফেলস এবং বীরেন সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে।ইতিমধ্যেই আসাম রাইফেলস্ এবং সেনাবাহিনী হিংসা বিধ্বস্ত সব স্থানেই বজায় ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন দুপুরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং রাজ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর করেন।এখন পর্যন্ত যা খবর, হিংসাবিধ্বস্ত এলাকাগুলি থেকে প্রায় ৯ হাজার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।এরমধ্যে চূড়াচাঁদপুরে ৫ হাজার মানুষকে,ইম্ফল উপত্যকায় ২০০০ মানুষকে এবং তেনুগোপাল জেলার মোরেতে আরও ২ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। বুধবার উপজাতিভিত্তিক সংগঠন অল ট্রাইবেল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুরের তরফে ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ বের করা হয়েছিলো। এরপরই রাজ্যের দিকে দিকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।


রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং রাজ্যের পরিস্থিতিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে জনগণকে শান্ত হতে আবেদন জানান।তিনি বলেন, হিংসার কোন স্থান নেই সমাজজীবনে। তিনি জানান, রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।এদিকে কংগ্রেস বলেছে, বিজেপির ঘৃণার রাজনীতিই মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অবিলম্বে মণিপুরের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন।কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মণিপুরের মানুষজনকে অবিলম্বে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।মনিপুর প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার রাতের দিকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় রাজধানীর ইম্ফল,চূড়াচাঁদপুর এবং কাংপোকপিতে।এই বিক্ষোভের জেরে একাধিক বাড়িতে আগুনও ধরে যায়।


বিষ্ণুপুর ও চুরাচন্দপুর জেলায় মোতায়েন থাকা ভারতীয় সেনা, আধা সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।প্রায় ৪ হাজার গ্রামবাসীকে সেনার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে জায়গা দেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য,পাঁচদিন মণিপুর জুড়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।এছাড়াও,ওই রাজ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানে কার্ফু জারি করা হয়েছে বলে খবর।স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর জেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি কোড অর্থাৎ সিআরপিসির ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিধি ও নিয়ম অনুসারে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি দল বেঁধে রাস্তায় বেরতে পারবেন না।এছাড়া,বৈধ লাইসেন্স ছাড়া লাঠি, পাথর, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি যদি কারও কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে আইন অনুযায়ী। প্রসঙ্গত,মণিপুরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের বনাঞ্চল এবং জলাভূমির উপর জনজাতি মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে আন্দোলন চলছিলই। প্রশাসনের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের জনজাতি ছাত্র ইউনিয়ন। সম্প্রতি সে রাজ্যের মেইতেই সম্প্রদায় তাদের তপশিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবি তুলেছে।গত ২৮এপ্রিল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের একটি অনুষ্ঠানমঞ্চ ও উদ্বোধনস্থল আগুনে ছাই করে দেয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত ফোরাম।
মনিপুরের সাম্প্রতিক অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা আজ মণিপুরে রিমস ও অন্যান্য কলেজে পাঠরত রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন থেকে মণিপুরের বিভিন্ন কলেজে পাঠরত ছাত্র ছাত্রীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়।মণিপুর সরকার থেকে রাজ্য প্রশাসনকে ত্রিপুরার ছাত্র ছাত্রীদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে।তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা রিমসের অধ্যক্ষের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। রিমসের অধ্যক্ষ রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে জানিয়েছেন সেখানে পাঠরত রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীরা সুরক্ষিত ও নিরাপদে রয়েছে। এদিকে,তিপ্ৰা মথা সিটিজেনস্ ফেডারেশনের তরফে মণিপুরের হিংসাজনিত পরিস্থিতিতে সে রাজ্যে আটক ১০০ জন যুবককে অবিলম্বে বিমানযোগে রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহ থেকে শুরু করে আসাম, মণিপুর এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যুইট বার্তায় আবেদন জানানো হয়েছে।

Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

10 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

10 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

10 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

10 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago