হিট অ্যান্ড রান!!

 হিট অ্যান্ড রান!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সংসদের সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা,নাগরিক সুরক্ষা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম সংক্রান্ত নতুন ফৌজদারি আইনের তিনটি বিল পাস হয়েছে। কার্যত বিরোধীশূন্য লোকসভায় এই গুরুত্বপূর্ণ তিন আইন পাস করিয়ে নেয় সরকার পক্ষ।

দেশের আইন সংক্রান্ত এই নতুন তিন বিল নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতাও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি তার বক্তৃতায় এই ফৌজদারি আইনের সংশোধনে কেন এই বিল আনার প্রয়োজন ছিল তারও উল্লেখ করেছেন।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী নতুন এই বিলে মব লিঞ্চিং, নাবালিকাকে ধর্ষণের মতো অপরাধকে মৃত্যুদণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন ফৌজদারি এই তিন বিলের অন্তর্ভুক্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ কমবে বলেও সরকারীভাবে দাবি করা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, নতুন এই বিলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২০ টি নতুন অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংগঠিত অপরাধ, জঙ্গি কর্মকাণ্ডহিট অ্যান্ড রান এবং মব লিঞ্চিং-এর মতো ঘটনাগুলো।তাছাড়া নতুন আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রতারণা করে যৌন নির্যাতন, ছিনতাই এবং মিথ্যা এবং ভূয়ো খবর প্রকাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়। বিরোধীশূন্য লোকসভায় ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত এই তিন বিল পাস করা নিয়ে দেশের বিরোধী দলগুলো শুরু থেকেই প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছে সরকারের উপর। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে তারা সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, সংসদে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল পাস হওয়ার পক্ষকাল অতিক্রম না হতেই এই আইনের একটি দিক নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন যানবাহন চালকরা।বলা হচ্ছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে ন্যায় সংহিতা আইন পাস করেছে তাতে গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে চালকদের উপর কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করার কথা এই আইনে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের এই নতুন ফৌজদারি আইনে যানবাহন চালকদের পক্ষে আর গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করা সম্ভব হবে না- এই অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেছেন বাণিজ্যিক গাড়ির চালকরা। কারণ এই আইনে বলা হয়েছে, যানবাহন চালাতে গিয়ে গুরুতর দুর্ঘটনার পর অভিযুক্ত চালককে পুলিশের কাছে এসে ধরা দিতে হবে। অর্থাৎ কাউকে ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে এবং দুর্ঘটনার খবর পুলিশকে না দিলে গাড়ি চালকের ১০ বছরের জেল হতে পারে এবং কারাবাসের পাশাপাশি ৭লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের দুর্ঘটনায় চালকের বিরুদ্ধে ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলা করা যাবে। এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গাড়ি চালকরা। তাদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্টকংগ্রেস মনে করছে, দুর্ঘটনার সময় উত্তেজিত জনতার সামনে চালক ধরা দিলে গণরোষে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অথচ মাসিক মাত্র ১৫ হাজার টাকার বেতনে গাড়ি চালাতে গিয়ে কোন দুর্ঘটনায় পড়লে, পালানোর অপরাধে চালককে ১০ বছর কারাবাস এবং ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা দুটোই ভোগ করতে হবে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের নয়া আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ট্রাক চালকরা। এতদিন এই আইনে সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ ছিল মাত্র ২ বছর। আজ নিয়ে টানা তিনদিন দেশের সব বড় শহরে রাস্তা রোখো কর্মসূচির জেরে বেসরকারী পরিবহণ ব্যবস্থায় বড়সড় প্রভাব পরতে শুরু করেছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হল ট্রাক চালকদের রাস্তা অবরোধের ফলে তেল সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হলে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যার ফলে বাড়তে পারে পেট্রোল ডিজেলের মূল্য। এই আশঙ্কার কারণ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাক্কা জ্যামের জেরে মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, দিল্লী, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, ইন্দোর, গোয়ালিয়র, ভোপালে যানজটের খবর মিলেছে। দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবাহী ও জ্বালানিবাহি ট্যাঙ্কার। আর এই আশঙ্কার পেট্রোল পাম্পগুলোতে গাড়ির লম্বা লাইন জ্বালানি সংকটের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারী যানবাহনের এই আচমকা ধর্মঘটের প্রভাব কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এর ব্যাপকতা কতদূর ছড়ায়-তার আগেই প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে সদর্থক ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্ভূত বিতর্ক ও জট নিরসনে উদ্যোগী হবে এটাই প্রত্যাশা। কারণ এটা মনে রাখতে হবে, একদিকে যেমন দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। কিন্তু একথাও সত্য, চালকরা ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনায় জড়াতে চান না কিংবা দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনাও কাম্য নয়। অথচ দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাই গোটা বিষয়টিকে বাস্তবতার
নিরিখে মানবিকভাবে পর্যালোচনা করা জরুরি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.