অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী একটি অবস্থা হল কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদযন্ত্রের আকস্মিক থেমে যাওয়া। এটি যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে প্রাণ হারান।তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?:-কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট একটি আকস্মিক এবং জীবনসংকটজনক অবস্থা, যেখানে হৃদপিণ্ড হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসের কারণে হয়, যা হৃদপিণ্ডকে কার্যকরভাবে পাম্প করতে বাধা দেয়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে পারে।কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্য:-অনেকেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাককে এক মনে করেন, কিন্তু এই দুটি আলাদা অবস্থা।
হার্ট অ্যাটাক: এটি ঘটে যখন হার্টের
কোনও ধমনী ব্লক হয়ে যায় এবং হৃদযন্ত্র পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদপিণ্ড সচল থাকে, তবে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: এটি তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ড হঠাৎ করে সম্পূর্ণ থেমে যায়। এটি সাধারণত বিদ্যুৎ সংকেতের গোলযোগের কারণে হয় এবং এতে রোগী মুহূর্তের মধ্যেই জ্ঞান হারাতে পারেন।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ:-
অনেক কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: অনেক কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১-ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন-এটি হৃদপিণ্ডের অনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক সংকেতজনিত সমস্যা, যা হৃদপিণ্ডকে কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করতে বাধা দেয়।২. করোনারি আর্টারি ডিজিজ-ধমনীর ব্লকেজের কারণে হৃদযন্ত্র ঠিক মতো রক্ত পায় না এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।৩. হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী জটিলতা-আগের কোনও হার্ট অ্যাটাকের কারণে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে, তা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বাড়ায়।৪. কার্ডিওমায়োপ্যাথি-এটি একটি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায় এবং কার্যকারিতা হারায়।৫. জন্মগত হৃদরোগ-কিছু মানুষ জন্ম থেকেই হৃদযন্ত্রের গঠনে সমস্যা নিয়ে জন্মান, যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে৬.লেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স-পটাশিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে হৃদযন্ত্রের ছন্দ ব্যাহত হতে পারে।৭. ড্রাগ ওভারডোজ ও মদ্যপান-অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ বা মদ্যপান হৃদপিণ্ডের ছন্দ নষ্ট করতে পারে।৮. তীব্র মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং আকস্মিক ভারী পরিশ্রমের ফলে হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সাধারণত হঠাৎ করেই ঘটে, তবে কিছু পূর্ব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
অচেতন হয়ে পড়া।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া।
হৃৎস্পন্দন অনুভব না করা। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা বুকে চাপ অনুভব করা।
হঠাৎ করে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
যদি কেউ হঠাৎ এই লক্ষণগুলোর শিকার হন, তাহলে এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করবেন?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নিলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।১. CPR (Cardiopulmonary Resuscitation) দিন- আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বুকের মাঝখানে দুই হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিন (প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার)।২. AED (Automated External Defibrillator) ব্যবহার করুন- যদি আশেপাশে AED মেশিন থাকে, তাহলে সেটি ব্যবহার করে বিদ্যুৎপ্রবাহ দিন।৩. দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন- যত দ্রুত সম্ভব ১০২ বা নিকটবর্তী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করুন।৪. শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কি না দেখুন- যদি রোগী শ্বাস না নেন,তাহলে মুখে-মুখে শ্বাস (মাউথ-টু-মাউথ রেসপিরেশন) দিতে পারেন।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধের উপায়:-
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলা উচিত :
হৃদযন্ত্রবান্ধব খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন- বেশি করে শাকসবজি, ফল, বাদাম, মাছ, এবং স্বাস্থ্যকর তেল (অলিভঅয়েল) খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন।প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
এগুলো হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমান।যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
নিয়মিত ডাক্তার দেখানো কেন জরুরি?যারা পূর্বে হৃদরোগে ভুগেছেন বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য নিয়মিত কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হার্টের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
যেকোনও জটিলতা দ্রুত শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডাক্তার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে পারেন।
উপসংহার:-কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট একটি জীবনঘাতী অবস্থা হলেও সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। প্রতিটি মানুষকে উচিত সুস্থ জীবনযাপন করা, হৃদরোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং হার্টের যত্ন নেওয়া। আপনার পরিবার ও প্রিয়জনদের সুস্থ রাখতে, এখনই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করান।
জীবন অমূল্য, তাই আজ থেকেই আপনার হৃদযন্ত্রের যত্ন নিন!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এপ্রিল মাসের শেষে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দেবার নাম করে ডা. সোমা চৌধুরী নামে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিএফএর সংবিধান সংশোধন করার নামে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার…
অনলাইন প্রতিনিধি :-এডিসির ৩০২ টি স্কুলে শিক্ষক ১ রয়েছে।জাতীয় স্তরে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র- শিক্ষকের অনুপাত…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্টের টানা ২৫ বছরে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়নই হয়নি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে…
একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। কথাটা বোধহয় এক্ষেত্রে একেবারে যথার্থভাবে ধ্বনিত হয়।গত কয়দিন ধরেই…