হেমন্তে কুপোকাত হিমন্ত!!
শনিবার গোটা দেশবাসীর নজর ছিল মহারাষ্ট্র ঝাড়খণ্ড- এই।দুই রাজ্যের ভোটের ফলাফলের উপর।দুই রাজ্যের জনাদেশ ইতিমধ্যে
দেশবাসীর জানা হয়ে গেছে। এখন দুই রাজ্যের ফলাফল নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।নানা রকম ব্যাখ্যা যুক্তি তর্ক চলছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, দাবি-পাল্টা দাবি, যুক্তির পিঠে পাল্টা যুক্তি খাড়া করার আপ্রাণ প্রয়াস চলছে। এই প্রক্রিয়া আরও বেশ কয়েকদিন চলবে।ভারতীয় গণতন্ত্রে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।এখানে নতুন করে কিছু বলার না থাকলেও, কিছু বিষয় তো অবশ্যই গোটা দেশবাসীর নজর কেড়েছে।
প্রথমত, মহারাষ্ট্র-ঝাড়খণ্ডে ম্লান বিরোধিতার ঢেউ। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে দুই শাসকদলই।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে,বিভিন্ন সময়ে ইস্যু পৃথক হলেও,দুই রাজ্যেই প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারবিরোধী হওয়া ছিল যথেষ্ট।অথচ দুই রাজ্যেই দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরেছে দুই শাসক জোট।যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ঝাড়খণ্ডে জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। একই সাথে চম্পাই সোরেন দলবদল করে বিজেপিতে শামিল হওয়ায় চাপে পড়েছিল ঝাড়খণ্ডের শাসক জোট। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ইস্যুকে ম্লান করে দিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেন হেমন্তই।
মহারাষ্ট্রেও বিজেপির বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল দল ভাঙানোর।২০১৯ সালের নির্বাচনের পর মাঝের পাঁচ বছরে দুই দল ভেঙে তোলপাড় হয়েছে মারাঠাভুরে রাজনীতি।আর এই সবের জন্য বিরোধীরা পুরো দায় চাপিয়েছিলো বিজেপির ঘাড়ে।কিন্তু জনতার রায়ে সমস্ত অভিযোগ আছড়ে পড়লো আরব সাগরে। মহারাষ্ট্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরল বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে) এনসিপির (অজিত) জোট। একেবারে ধরাশায়ী হলো বিরোধীরা।
এই দুই রাজ্যের নির্বাচনি ফলাফলে আরও একটি বিষয় দেশবাসীর নজরে এসেছে।সেটি হলো প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পারফরম্যান্স। এক কথায় বলতে গেলে ‘বড় ধাক্কা’ খেয়েছে কংগ্রেস।কংগ্রেসের এই পারফরম্যান্স নিয়েও দেশব্যাপী আলোচনা চলছে। শুধু মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের ভোটের ফলাফল নয়, একই সাথে অনুষ্ঠিত ১৫ টি রাজ্যে ৪৮ টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলও অস্বস্তি বাড়িয়েছে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের।৪৮ আসনের মধ্যে ২৯ টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি এবং এনডিএ জোটের শরিক দলগুলি।ঝাড়খণ্ডে বিজেপি জোট ক্ষমতায় আসতে না পারলেও, ফলাফল খুব
একটা খারাপ হয়েছে এমন দাবি করা যাবে না।কেননা, কম করেও পনেরটি কেন্দ্রে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে খুবই কম ভোটের ব্যবধানে।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি জোট পরাজয়ের পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে কাউকে প্রজেক্ট করতে না পারা।তেমন কাউকে সামনে এনে বিজেপি জোট ভোটের ময়দানে লড়াই করতে পারেনি। তারপরও যে বা যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই পুরনো মুখ। তাদের চাইতে হেমন্তই যে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল, সেটা ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট হয়েছে।
এই ভোটে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে।সেটি হলো শিবরাজ সিং চৌহান এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো বিজেপি নেতাদের ধাক্কা খাওয়া।বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এবার ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে দলের এই দুই পোড়খাওয়া নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। দুই নেতাই ডাহা ফেল করেছেন।ভোটের ব্রণকৌশল তৈরিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন দুই নেতাই। এই নিয়েও বিজেপির অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে।অনেকে মনে করছেন বেশি আত্মবিশ্বাসই ডুবিয়েছে।অনেকে বলছেন, ‘হেমন্তে কুপোকাত হিমন্ত’।সে যাই হোক,রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটে।আগামী দিনেও ঘটবে। রাজনীতি মানেই ঘটনার ঘনঘটা। কখন কোথায় কী হয় কেউ বলতে পারে না। তবে সব ঘটনাতেই নজর থাকবে আমাদের।