১০৬ বছর বয়সেও রেল ইউনিয়নের নেতা, গিনেস বুকে নামের অপেক্ষা
এজ ইজ রিয়েলি ওনলি আ নাম্বার । বয়স নিছকই একটা সংখ্যা মাত্র । কথাটা প্রথম বলেছিলেন ফোর্ড গাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড । তিনি বলতেন , হোয়েদার ইউ থিঙ্ক ইউ ক্যান , অর ইউ থিঙ্ক ইউ কান্ট— ইউ আর রাইট । অর্থাৎ মনটাই আসল । মনের বয়সকে আটকে রাখতে পারলে শরীরের বয়সকেও অনেকটা আটকে রাখা যায় । তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ রেল ইউনিয়নের নেতা কানহাইয়া লাল গুপ্তা । গোরক্ষপুরের বাসিন্দা কানহাইয়া লাল গুপ্তা । ১০৬ বছর বয়সে তিনি এই নিয়ে ৬১ বার উত্তর পূর্ব রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের ( এনইআরএমইউ ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন । এনইআরএমইউ বিশ্বের প্রাচীনতম ট্রেড ইউনিয়ন । সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই ৬২ তম বারের জন্য কানহাইয়া লাল গুপ্তা নির্বাচিত হওয়ার পরেই ইউনিয়নের তরফে লিমকা বুক বুক অফ রেকর্ডস এবং গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে । ইউনিয়নের দাবি , লিমকা বুক তো বটেই , সেই সঙ্গে গিনেস বুকে কানহাইয়া লাল গুপ্তার স্বীকৃতি সময়ের অপেক্ষা মাত্র । দেশের স্বাধীনতার আগে , ১৯৪৬ সালে কানহাইয়া লাল রেলের চাকরিতে যোগ দেন । কয়েক বছরের মধ্যে তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন । প্রায় ৬৫ বছর আগে তিনি ভোটে জিতে প্রথম ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । সেই থেকে টানা ৬১ বছর ওই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন । ইউনিয়নে শতায়ু নেতার সতীর্থরা বলেন , ১০৬ বছরে পা রাখা কানহাইয়া লালের ভুমিকা মোটেই আলঙ্কারিক নয় । এই বয়সেও তিনি নিয়মিত গোরক্ষপুরে সংগঠনের অফিসে বসেন । বয়সের ভার তাকে ন্যুব্জ করতে পারেনি । কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সামনে ডেপুটেশন দেওয়া , চিঠি লেখা , সভা – সমিতিতে ভাষণ দেওয়া— হ্যাঁ , এখনও কিছুতে বিরাম নেই তার । এনইআরএমইউ – এর সদস্যরা লিমকা বুক অফ রেকর্ডস এবং গিনেস বুকে বিশ্বের প্রাচীনতম সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসাবে তার নাম তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । ৬১ বারের জন্য ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে অপেক্ষমাণ কানহাইয়া সাংবাদিকদের সামনে কানহাইয়া লাল সহাস্যে বলেন , ‘ হেনরি ফোর্ড যেমনটা বলতেন , আমিও তাই বলি । বয়স আমার কাছে নিছকই একটা সংখ্যা । ঈশ্বর চাইলে হয়তো আগামী বছরও আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব । ‘ ১৯৮১ সালে ‘ রেলের চাকরি থেকে অবসর নেন কানহাইয়া । অবসরের পর ৪১ টি বছর কেটে গেছে । কিন্তু কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে ১৯৮০ সালে তার যেমন সম্পর্ক ছিল , আজও তেমনই আছে । জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেও এতটা ক্রীয়াশীল কি ভাবে থাকেন ? কানহাইয়া লাল বলেন ‘ প্রথম কথা জীবন যাপনে শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতা রক্ষা খুব জরুরি ব্যাপার । এই দুটোই আমি পেয়েছি প্রবাদপ্রতীম জননেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের ( জেপি ) সান্নিধ্যে থেকে । জরুরি অবস্থার সময় বিহারের মাটি থেকে জয়প্রকাশ ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটাতে নৈতিকতাকে হাতিয়ার করেছিলেন । বলেছিলেন , স্বৈরতন্ত্রের থেকে বড় বিপদ আর কিছু নেই । যারা এর অবসান চান তারা বিভেদ ভুলে একজোট হোন । আমি তখনও বয়সে তরুণ । জেপির বক্তৃতা আমার শরীরে নতুন করে রক্তের জোগান দিয়েছিল। তার পর নানা ঘটনাক্রমের মধ্যে দিয়ে আমি জেপির সান্নিধ্য লাভ করি । খুব কাছে থেকে দেখি , জীবনের প্রতি তার শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার আদর্শে অবিচল থাকা । ‘ তিনি জানান , সংগঠন করায় তাকে চার বার চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয় । এমনকী একবার প্রায় এক মাসের জন্য তাকে জেলেও হয়েছিল । তারপরেও ট্রেড ইউনিয়নের কাজ থেকে দূরে সরে যাননি । মামলা মোকদ্দমার পাশাপাশি লড়াই করেছেন পথে , ,মাঠে – ময়দানে ।এনইআরএমইউ সদস্যদের কথায় , জীবনযাপনে শৃঙ্খলা রক্ষাই কানহাইয়া লালের দীর্ঘ সুস্থ জীবনের রহস্য । এখনও সারাদিন , এমনকী কোনও কোনও দিন অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে বসে কাজ করেন ।