১৬ রাজ্যে মিলল জিকা ভাইরাস

 ১৬ রাজ্যে মিলল জিকা ভাইরাস
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নিঃশব্দেই জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে । এমনকী , এমন সব এলাকাতেও এটি ছড়াচ্ছে , যেখান থেকে আগে কখনও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি । পুণের জাতীয় ভাইরোলজি ইনস্টিটিউট ও আইসিএমআর – এর বিজ্ঞানীদের মতে , এই রোগের স্থানীয় সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে । ফন্ট্রিয়ার্স অফ মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে , বর্ষার সময় যখন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশা – বাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায় , সেই সময় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সম্ভাবনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ।

এই সমীক্ষার প্রধান গবেষক তথা আইসিএমআরের প্রবীণ বৈজ্ঞানিক ডা . প্রয়াগ যাদব জানিয়েছেন যে , ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জিকা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল দেশের ১৬ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে । কোভিড -১৯ মহামারির মধ্যেই মশা – বাহিত এই জিকা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে ফের ১৬ রাজ্যেই । যার মধ্যে রয়েছে অমৃতসর ( পঞ্জাব ) , আলিগড় ( উত্তরপ্রদেশ ) , জয়পুর ,যোধপুর (রাজস্থান) পুণে ( মহারাষ্ট্র ) , রাঁচি ( ঝাড়খণ্ড ) , হায়দরাবাদ ( তেলেঙ্গানা ) ও তিরুবন্তপুরম ( কেরল ) এবং দিল্লি । এইসব এলাকা ঘন জনবসতিপূর্ণ বলে পরিচিত ।

তিনি বলেন , ‘ আমাদের গবেষণায় ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । এর ফলে , প্রসবপূর্ব স্ক্রিনিংয়ের উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে । কারণ , এটি নবজাতক শিশুদের মধ্যে মাইক্রোসেফালি এবং জন্মগত অক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় । গত ১৬ জুন পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজিতে আক্রান্তদের নমুনা পাঠানো হয় । ওই নমুনায় ২৫ জনের শরীরে চিকনগুনিয়া , তিনজনের শরীরে ডেঙ্গু ও একজনের শরীরে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ।

প্রসঙ্গত , ১৯৪৭ সালে আফ্রিকাতে প্রথম জিকা ভাইরাসের স্ট্রেন দেখা গিয়েছিল । কিন্তু এই ভাইরাস প্রথম নজরে আসে ২০১৫ সালে , ব্রাজিলে । এরপর ধীরে – ধীরে এই জিকা ভাইরাস ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে । এই ভাইরাসটি সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় । এছাড়া , অবাধ মেলামেশাতেও এই ভাইরাস ছড়ায় । ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু জিকা ভাইরাসকে ‘ পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি ‘ হিসাবে চিহ্নিত করে । চলতি মাসের প্রথম দিনেই কেরলে জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হন এক মহিলা । প্রাথমিকভাবে জ্বরের উপসর্গ দেখা যায় তার শরীরে ।

সঙ্গে মাথা ব্যথা ও চামড়ায় লাল লাল দাগ দেখা যায় । প্রাথমিক রিপোর্টে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে তার শরীরে । এর পর বিষয়টি সোমবার নিশ্চিত হতে পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজিতে ওই মহিলার রক্তের নমুনা পাঠানো হয় । সেখান থেকেই নিশ্চিত করা হয় গোটা বিষয়টি । পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজির সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে পুরো স্বাস্থ্য প্রক্রিয়া যখন কোভিড – ১৯ – এর সঙ্গে মোকাবিলা করার ওপর মনোযোগ দিচ্ছে সেই সময় মশা – বাহিত রোগগুলির সঙ্গে আপস করা হয়েছিল । এর ফলে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় মশার প্রজননের স্থান বেড়ে যায় । এতে মশাদের অতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ।

ডাঃ যাদবের অভিযোগ , ‘ গত দু’বছর ধরে কোভিড -১৯ প্রকোপের কারণে জিকা ভাইরাসের জনস্বাস্থ্য নজরদারি না করার জন্যই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । ‘ ইবোলা বা সার্সের মতো প্রাণঘাতী নয় রোগটি । এমনকি এইডসের মতো নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কাও নেই এতে । মশাবাহিত রোগ জিকা ভাইরাসকে তুলনা করা যেতে পারে ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া বা ওয়েস্ট নাইল রোগের সঙ্গে । জ্বর , অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও র‍্যশ এটির লক্ষণ । এখনও পর্যন্ত জিকা ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি কোনও দেশ । ফ্রান্সে গবেষণা চলছে । ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও শুরু হয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬ সালে এক বিবৃতিতে জানিয়ে ছিল জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ থামানো না গেলে আগামী প্রজন্মের বিরাট অংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নিতে পারে । একটা গোটা প্রজন্ম এমন ভয়ংকর রোগের শিকার হলে ভবিষ্যতে সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.