১ জুলাই থেকে রাজ্যেও চলবে নয়া ফৌজদারি আইন: সচিব!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে আগামী ১ জুলাই থেকে গোটা দেশের – পাশাপাশি রাজ্যেও চালু হতে যাচ্ছে নয়া তিন আইন। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ১৮৬০ এর পরিবর্তে এখন থেকে চলবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা- ২০২৩। এছাড়াও দ্যা কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৯৭৩ এর পরিবর্তে চলবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-২০২৩ এবং দ্যা ইন্ডিয়ান ইভিডেন্স অ্যাক্ট ১৮৭২ এর পরিবর্তে চলবে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম-২০২৩। স্বরাষ্ট্র সচিব পি কে চক্রবর্তী শনিবার এ কথা জানিয়ে বলেন, নয়া তিন আইনের প্রণয়ন হলেও পুরনো মামলাগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না এগুলি। শুধুমাত্র আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন করে কোনও ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে নয়া আইন। স্বরাষ্ট্র সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী এদিন মহাকরণে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, নারী থেকে শুরু করে শিশু এবং সব অংশের জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ দূরীকরণকে অগ্রাধিকার দিয়েই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার এই সংস্কার সাধন করা হয়েছে। নয়া আইনের বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৭৩ ধারা মূলে এখন থেকে একজন নাগরিক নির্ধারিত থানা এলাকার বাইরেও যে কোনও এলাকা থেকে এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। একই সাথে এই আইনে নাগরিকদের ই-এফআইআর করারও সংস্থান রয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-২০২৩ (বিএনএসএস)-এর ৫৩০ ধারা অনুযায়ী সমস্ত ট্রায়াল, অনুসন্ধান এবং কার্যধারাগুলিও ইলেকট্রনিক মুডে করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নয়া আইনে দূরবর্তী সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক উপস্থাপনাকে এখন থেকে সমভাবে গ্রাহ্য করা হবে। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক রেকর্ডগুলি এখনকার মতোই কাগজের রেকর্ডের ন্যায় একই আইনি প্রভাব থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, নয়া আইনে পুলিশকে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তিকেও যুক্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি জানান, নয়া আইনে ১ জুলাই থেকে মামলা নথিভুক্ত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত মামলাকারীকে জানাতে হবে। এছাড়াও চার্জশিট দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া, ট্রায়াল শুরু করা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করার বিধান আনা হয়েছে। আরও যে সমস্ত বিষয় রয়েছে তার মধ্যে বিচারের শুনানি শেষে ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতাও আনা হয়। বিএনএসএস-এর ৬৫ (২) ধারা মূলে ১২ বছরের কম বয়সি মেয়েদের ধর্ষণজনিত অপরাধের ক্ষেত্রে দোষীদের মৃত্যদন্ডের বিধানও চালু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, নয়া আইনে যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে তিন বছরেরও কম সময়ের জেল হয়, সেসব অপরাধের ক্ষেত্রে দোষীদের গ্রেপ্তারের সময় সর্বনিম্ন ডিএসপি পদমর্যাদাসম্পন্ন পুলিশ অফিসারের অনুমতির প্রয়োজন হবে। তিনি জানান, নয়া এই আইনগুলি কার্যকর করার জন্য এখনও পর্যন্ত পুলিশ, স্বরাষ্ট্র (কারা), আইন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর এমনকী প্রসিকিউশন দপ্তরের এবং স্টেট ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ২,৩৪৭ জনকে অনলাইন ও অফলাইনে দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও সংশোধিত সিসিটিএনএস অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনার জন্য মোট ২৮২ জন পুলিশ কর্মীকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নাগরিকদের ক্ষেত্রে আইনগুলি সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য সমস্ত জেলা পুলিশ সুপাররা ইতিমধ্যেই সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান। এছাড়াও চালু হতে যাওয়া নতুন এই আইনগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইনসেবা কর্তৃপক্ষও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে আইন দপ্তরের সচিব সঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং রাজ্য পুলিশের আইজি এল ডার্লংও উপস্থিত ছিলেন।