২০০ বছর পর ‘ঘরের বন্য’ ফিরছে কাজাখস্তানে!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-এ যেন ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার আখ্যান!তবে এ ক্ষেত্রে ‘ছেলে’ নয়, বন্য ঘোড়া।একদা যে ঘোড়ার একমাত্র বসতস্থল ছিল কাজাখস্তানের মধ্যাঞ্চল, দু’শো বছর পরে সেই ঘোড়া ঘরে অর্থাৎ কাজাখস্তানে ফিরে এসেছে।এই বন্য ঘোড়ারা ‘প্রজেলওয়াস্কির ঘোড়া’ নামেই পরিচিত। প্রখ্যাত এক রুশ অভিযাত্রীর নামে এ-হেন নামকরণ।পৃথিবীর সর্বশেষ বন্য ঘোড়ার আবাসভূমি ছিল কাজাখস্তানের মধ্যাঞ্চল। কিন্তু অন্তত গত ২০০ বছরে নিজেদের আদি বাসস্থানে এই ঘোড়াকে কেউ দেখতে পায়নি।এই জাতের ঘোড়াকে শেষবারের মতো দেখা গেছিল ১৯৬০ সালে মঙ্গোলিয়ায়। এরপর এটিকে বিশ্বের আর কোথাও উন্মুক্ত স্থানে দেখা যায়নি।তবে ইউরোপের কয়েকটি চিড়িয়াখানায় এ জাতের কিছু ঘোড়া দেখা যায়।
বেলে-বাদামি রঙের সুঠাম দেহের ঘোড়ার এই জাতকে নিজেদের প্রাচীন আবাসস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য কয়েক দশক আগে চেষ্টা শুরু করে কাজাখস্তান।সেই দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে চলতি মাসের শুরুর দিকে কাজাখস্তানের মাটিতে অন্তত ২০০ বছর পর আনা হয় বিপন্ন প্রজাতির সাতটি ঘোড়া।এই প্রজাতি বর্তমানে ‘প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়া’ নামে পরিচিত।
চলতি মাসের শুরুতে আনার পর সাতটি বন্য ঘোড়াকে মধ্য কাজাখস্তানের আলটিন ডালা, অর্থাৎ গোল্ডেন স্টেপে ছাড়া হয়েছে।গোল্ডেন স্টেপ হলো হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত জলাভূমির বিস্তীর্ণ তৃণভূমি।কাজাখস্তানের গোল্ডেন স্টেপটির আয়তন প্রায় সাত হাজার বর্গমাইল।
ঘোড়াগুলিকে প্রথম এক বছর এই বিস্তীর্ণ গোল্ডেন স্টেপের ৬০ হেক্টরের একটি অঞ্চলে রাখা হবে।স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিলে ঘোড়াগুলির জন্য আরও বিস্তৃত তৃণভূমি খুলে দেওয়া হবে,জানিয়েছে কাজাখস্তান সরকার।আগামী শীতের আগে সেগুলি স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাতটি ঘোড়ার মধ্যে একটি পুরুষ।বাকি ছয়টি নারী বা মাদি।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেন, প্রাথমিক আতঙ্ক কাটিয়ে ঘোড়াগুলি
ইতিমধ্যে সমতল ভূমিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি শুরু করেছে।এমনকি প্রজননপ্রক্রিয়াও শুরু করেছে।
প্রশ্ন হলো কী ভাবে এদের আনা হলো? প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়াগুলি আনতে ২০২২ সালে প্রাগ চিড়িয়াখানা ও কাজাখস্তান সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়।সেই অনুযায়ী, ইউরোপে নিজেদের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ঘোড়াগুলি বাছাই করে প্রাগ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পূর্বপুরুষদের আবাসস্থলের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে সেগুলিকে বার্লিনের চিড়িয়াখানায় একসঙ্গে কয়েক মাস রাখা হয় য়াতে তারা নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে পারে।এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে চেক সামরিক বাহিনীর দুটি বিমানে করে ওই সাতটি প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়াকে কাজাখস্তানের উদ্দেশে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে সেগুলি কাজাখস্তানের আরকালিক বিমানবন্দরে পৌঁছয়।সেখান থেকে বিশেষ ট্রাকে করে আরও আট ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে তারা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য গোল্ডেন স্টেপে পৌঁছেছে।