২০ বছরে এই প্রথম সমান হয়ে গেল ইউরো ও ডলার

 ২০ বছরে এই প্রথম সমান হয়ে গেল ইউরো ও ডলার
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইউরো সমান – সমান ২০ বছরে প্রথম বার ১ ইউএস ডলার । ২০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মার্কিন মুদ্রা এবং ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর মান সমান্তরালে চলে এল । ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো প্রবর্তিত হয় ১৯৯৯ সালে । আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে এক ডলারের বিনিময়ে ঠিক এক ইউরো মিলেছে গত মঙ্গলবার । একটা সময় ডলারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল ইউরো । কিন্তু চলতি বছরে ইউরোর দরে পতন হয় প্রায় ১২ শতাংশ । রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ইউরোপ , আমেরিকাসহ সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড ছুঁয়েছে ।

দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়িয়েছে । এই বাস্তবতায় ইউরোপসহ আমেরিকায় চলতি বছরের শেষ দিকে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে । ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ইউরো আর ডলার সমান হয়ে গেল । যুদ্ধের আগে ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাস আসত রাশিয়া থেকে । যুদ্ধের জেরে ইউরোপ রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে । শুধু তাই নয় , দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার তেল – গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে তারা । এর জবাবে রাশিয়াও ইউরোপের অনেক দেশে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস করেছে । ফলে উৎপাদন সংকটে পড়েছে ইউরোপ বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে ।

তবে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এ পর্যন্ত নীতি সুদহার ৭৫ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে । সে কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে আমেরিকায় বন্ডে বিনিয়োগ করছেন । এই সূত্রে ভারতীয় শেয়ার বাজারে ক্রমাগত পতন হয়ে চলেছে । ফলে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডলারের চাহিদা বেড়েছে । এদিকে শুধু ইউরো নয় , এ কারণে গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল হয়েছে । ভারতীয় মুদ্রা টাকার দর ডলার সাপেক্ষে এখন ৮০ টাকা ছুইছুই । চিনের ইউয়ান , জাপানের ইয়েনেরও পতন হয়েছে । পতন হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুদ্রারও ।

ইউরো নিউজ জানিয়েছে , ইউরো এবং ডলার ২০ বছরে প্রথম বারের মতো সমতায় পৌঁছেছে , যা বাজারের অনুমানকে ইঙ্গিত করে যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে ইউরোপীয় অর্থনীতি গভীর মন্দার দিকে যাচ্ছে । ১ ইউরোর সমান ১ ডলারের অর্থ হল ইউরোপীয় কোম্পানি এবং ভোক্তারা তাদের আমদানিকৃত পণ্য ও পরিষেবার জন্য আরও বেশি অর্থ প্রদান করবে , যখন ইউরোপীয় রপ্তানি আন্তর্জাতিক বাজারে অবিলম্বে সস্তা হয়ে যাবে । গত ২৪ ফেব্রু ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া । ঠিক তখন থেকেই ইউরো মূল্যের নাটকীয় পতন শুরু হয় । রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের আগেও ১ ইউরো ১.১৩ ডলারের বেশি মূল্য ছিল । শেষবার ইউরো আর ডলার সমান হয়েছিল ২০০২ সালের নভেম্বরে ।

সেই সময় ১ ইউরোর মূল্য ছিল ০.৯৯ ডলার । তারপর থেকে ইউরোর দরে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে । ২০০৮ সালের গ্রীষ্মে ১ ইউরোর মূল্য ১.৬০ ডলারে পৌঁছয় । কারণ ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আর্থিক বিপর্যয় তথা মহা মন্দা’র কবলে পড়েছিল । কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে । ইউরো নিউজের খবরে বলা হয়েছে , ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে জ্বালানি বাজার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম যেভাবে স্থির হয় , সেই চাহিদা আর জোগানের অঙ্ক মেনেই বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে দেশীয় মুদ্রার দাম নির্ধারিত হয় ।

বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হয় বৈদেশিক বাণিজ্যের কাজে । বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের একক আধিপত্যের কারণে ডলার এগিয়ে যাচ্ছে । ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ( আইআইএফ ) -এর প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস টুইটারে লিখেছেন , ‘ হয়তো কিছু স্তরে ইউরো বনাম ইউএস ডলারের সমতা একটি সংখ্যা মাত্র । কিন্তু বাজারগুলি এমন মানুষের দ্বারা গঠিত যারা স্তরের যত্ন নেয় , যা সমতাকে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব দেয় , অন্তত যেহেতু আমরা ২০ বছরে ( সমতা ) দেখিনি , এটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.