২৩-এর নির্বাচন থেকে শিক্ষা না নিলে ২৮-এ ভুগতে হবে!!

 ২৩-এর নির্বাচন থেকে শিক্ষা না নিলে ২৮-এ ভুগতে হবে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-নিগো ও
জমি মাফিয়াদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে রাজ্যবাসী ২০১৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিল।৪৪টি আসন নিয়ে বিজেপি-আইপিএফটি জোটের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় রাজ্যে।এই ৪৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি এককভাবে ৩৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল।জোট শরিক আইপিএফটি জয়ী হয়েছিল ৮টি আসনে।২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম শিবিরে ভোট পড়েছিল ৪৩.৫৯ শতাংশ।মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি- আইপিএফটি জোট কোনওরকমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে।২০২৩ নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ৩২টি আসনে।সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র একটি আসন বেশি। আর জোট শরিক আইপিএফটি জয়ী হয় মাত্র ১টি আসনে।প্রাপ্ত ভোটের হারও কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮.৯৭ শতাংশে।তারপরও এই রেজাল্ট হয়েছে প্রদ্যোত কিশোরের তিপ্রা মথার ভোেট কাটাকাটির কারণে।প্রদ্যোত কিশোরের তিপ্রা মথা দল যদি ২০২৩ বিধানসভায় ৪২টি আসনে লড়াই না করতো, তাহলে ডা. মানিক সাহার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার রাজ্যে ডবল ইঞ্জিনের অর্থাৎ বিজেপি – আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারতো কিনা?এই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এক কথায় বলা যায় প্রদ্যোত কিশোরের তিপ্রা মথাই দ্বিতীয়বার ডবল ইঞ্জিনকে বৈতরণী পার করে দিয়েছে। এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকে পদ্ম শিবির কোনও শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন এবং ভোট কমার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধ নিগো বাণিজ্য এবং জমি মাফিয়াদের আস্ফালনে অতিষ্ট জনগণ সেইভাবে শাসক দলকে (বিজেপি) ভোট দেয়নি।কেননা, ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম শিবিরের প্রতিশ্রুতি ছিল, বাম সরকারের লালিত পালিত নিগো বাণিজ্য নির্মূল করার এবং এর সাথে যুক্ত নিগো মাফিয়া ও জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের নির্মূল করার।কিন্তু বর্তমান সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে।শুধু তাই নয়, বামফ্রন্ট আমলে যে অবৈধ বাণিজ্য রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু হয়েছিল, সেই বাণিজ্য এখন ভাইরাসের মতো রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।নিগো বাণিজ্য ও জমি দালালির ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে এখন প্রতিটি বুথ স্তরে ছোট – বড় সংঘর্ষ হচ্ছে।প্রতিটি বুথ স্তরেই এখন নিগো বাণিজ্য ও জমি দালালিকে কেন্দ্র করে একাধিক গোষ্ঠী (গ্রুপ) তৈরি হয়েছে।বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সব রিপোর্টই আছে। অথচ ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা,উল্টো শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ যারা বিভিন্ন পদে রয়েছে,তাদের বিরুদ্ধেও নিগো বাণিজ্য এবং জমি দালালিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে।পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে,গরিব ও প্রান্তিক মানুষের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যেসব কল্যাণকারী প্রকল্প রয়েছে,ওই সব প্রকল্পের মধ্যে নিগো বাণিজ্যের থাবা পড়েছে। সাধারণ মানুষ অভিযোগ নিয়ে যাবে কোথায়? অভিযোগ নিয়ে যাদের কাছে যাবে, তারাই নিগো বাণিজ্যের সাথে যুক্ত। অভিযোগ নিয়ে গেলে উল্টো আপোশ, করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।। সম্প্রতি রাজধানীর ইন্দ্রনগর থেকেও এমন একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজ্যে যে কোনও ঠিকাদারি কাজের গুণগতমান এখন তলানিতে।কাঞ্চনপুর থেকে নিগোর ভাগ আগরতলায় আসছে।এমন অভিযোগও বিস্তর। দলের হাইকমান্ডের কাছে ওই সব রিপোর্ট আছে। বিভিন্ন অডিও বার্তা, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট সম্পর্কে হাইকমাণ্ডও অবহিত।বিগত দিনে যারা সিপিএমের তাবড় তাবড় নেতা, মুন্সী ও মাফিয়া হিসাবে পরিচিত ছিল, যাদের কারণে বাম সরকারের বদনাম ও পতন হয়েছিল,দেখা যাচ্ছে তারাই এখন গেরুয়া শিবিরে হর্তাকর্তা।নিচ থেকে উপর পর্যন্ত একই ছবি।
রাজ্যের বর্তমান সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাকে বিভিন্ন সময় বলতে শোনা গেছে যে, রাজ্যের কর্মচারীদের এখন আর চাঁদা দিতে হয় না, দাবি পূরণে মিছিলে হাঁটতে হয় না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো। বিভিন্ন কর্মচারী সংঘের নামে ব্যাপক হারে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় অশান্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই চাঁদার
কত অংশ সংঘের বা দলের তহবিলে আসে সন্দেহ।নিগো বাণিজ্যে পার্টি ফাণ্ডের কথা বলে (অঘোষিত) কমিশন তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। আদৌ সেই কমিশন পার্টির ফান্ডে আসে কি?ব্যক্তিগত তহবিলেই নিগোর অর্থ জমা হচ্ছে বলে অভিযোগ।প্রতিটি বিধানসভাভিত্তিক একাধিক নিগো গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছে শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা।জনগণের এমনটাই অভিযোগ। ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য এরাই কিন্তু দলকে পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নেতার সঙ্গে সেলফি তুলে,গলায় উত্তরীয় পরে প্রকাশ্যে নিয়োগ এবং জমি দালালির অর্থ আদায় করছে হুমকি দিয়ে।এসবের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা না নিলে, ২০২৩ নির্বাচনে মানুষ যে বার্তা দিয়েছে সেখানে থেকে শিক্ষা না নিলে ২০২৮-এ ভয়ানক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.