২৪ ঘন্টার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ১ দিন!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নিজের বৃত্তাকার কক্ষপথ ধরে লাট্টুর মতো পাক খায় পৃথিবী । তার এমন চক্কর খাওয়ার উদ্দেশ্য সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা । সূর্যকে সবটা প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন , অর্থাৎ এক বছর । নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর ঘোরার সূত্রেই রাত হয় , রাত কেটে দিন হয় । আসলে এই দিন – রাতের হিসাবও এক ধরনের বিভ্রম । সার্বিক ভাবে পৃথিবীতে আসলে দিনও হয় না , রাতও হয় না । পৃথিবীর নির্দিষ্ট অংশে হয় । ভারতে যখন রাত হয় , এই উত্তর গোলার্ধেরই অন্য অংশ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অংশে তখন ফুটফুটে দিন থাকে । সোমবার নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তোলা একাধিক গ্যালাকটিক ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ব্রহ্মাণ্ডের গ্যালাক্সিগুলির ( ছায়াপথ ) অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা রহস্য অনেকটাই উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা । এই সংক্রান্ত রিপোর্টে নাসা জানিয়েছে , গত ২৯ জুলাই ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ১.৫৯ মিলিসেকেন্ডে পৃথিবীর আহ্নিক গতির ঘূর্ণন সম্পন্ন হয়েছিল । নাসার রিপোর্টে বলা হয়েছে ,২৯ জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট দিন হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে । তবে , এটাই প্রথম নয় । ২০২০ সালের ১৯ জুলাই পৃথিবীর ঘূর্ণন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১.৪৭ মিলিসেকেন্ড রেকর্ড করা হয়েছিল । তখন সেটিকে সর্বকালের সবচেয়ে ছোট দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয় । স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর উপর বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করছেন । পৃথিবীর গতি কেন বাড়ছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি । কিন্তু , সায়েন্স জার্নাল ইন্ডিপেনডেন্ট – এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন এমন বিসদৃশ ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তন , পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ বা বাইরের স্তরগুলি আমূল বদলে যাওয়া এবং মহাসাগরীয় বন্ধন – সহ অন্যান্য কারণে হতে পারে । নাসার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , কিছু বিজ্ঞানী পরামর্শ দিয়েছেন যে হ্রাস হওয়া দিনগুলি ‘ চ্যান্ডলার ডোবা ’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে , যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষের একটি ছোট বিচ্যুতি । আগামী সপ্তাহে এশিয়া ওশেনিয়া জিওসায়েন্স সোসাইটিতে লিওনিড জোটোভ , ক্রিশ্চিয়ান বিজোয়ার্ড এবং নিকোলে সিডোরেনকভের মতো প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে তাদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করবেন ।পূর্বে সূর্য ওঠে । পশ্চিমে অস্ত যায় । এটাই শাশ্বত সত্য । এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি । আহ্নিক গতিতে দিন – রাত হয় , বার্ষিক গতিতে বছর পাল্টে যায় । সম্প্রতি এই আহ্নিক গতিতে কিছু বেনিয়ম দেখছেন বিজ্ঞানীরা । তারা লক্ষ্য করেছেন , পৃথিবীর ঘোরার স্পিড বাড়ছে । ২৪ ঘণ্টার আগেই একটা দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে । বিজ্ঞানের ভাষায় , নিজের কক্ষের চারপাশে এক বার চক্কর কাটতে পৃথিবীর সময় লাগছে ২৪ ঘণ্টার কম । এর ফলে দিন – রাতের হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে । এর ফলে বিশেষত দিনের দৈর্ঘ্য অনেক কমে এসেছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা । গত ২৯ জুলাই ক্ষুদ্রতম দিনের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে । সেদিন দিনের দৈর্ঘ্য ছিল সবচেয়ে কম । এখন প্রশ্ন হল , পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি বেড়ে যাওয়া কি ভাল ? নাসার বিজ্ঞানীরা তাদের রিপোর্টে যা বলেছেন ‘ তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বেশ খটমট । তারা বলেছেন , পৃথিবী যখন ফ্ল্যাশের মতো ঘুরতে থাকে , তখন এটি একটি ধারণার দিকে নিয়ে যেতে পারে । একে বলা হয় ‘ নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড ‘ । এই সেকেন্ডটি পরমাণু শিলা থেকে পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পৃথিবী যে হারে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তা বজায় রাখার জন্য কার্যকর হয় । এই ‘ লিপ সেকেন্ড সাধারণত কোনও সুখবর নয় । ‘ মেটা ’ প্রকাশিত একটি ব্লগে বলা হয়েছে , দ্বিতীয় লিপ ‘ প্রধানত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের উপকার করে তবে এটি একটি ‘ ঝুঁকিপূর্ণ অনুশীলন যা ভালর চেয়ে বেশি ক্ষতি করে । প্রশ্ন ওঠে এমন চলতে থাকলে যে বিজ্ঞানীদের নতুন করে ঘড়ি তৈরি করতে হবে ! নাসার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে , ‘০০ : ০০ : ০০ রিসেট করার আগে ঘড়ির কাটা ২৩ঃ৫৯ঃ৫৯ থেকে ২৩ঃ৫৯ঃ৬০৷ পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিজমো ওয়ার্ল্ডকে থিম লিপ সেকেন্ড ঠিক করে দেবে এবং যদি সময় পাল্টে যাওয়ার মতো কোনও অসঙ্গতি থাকে তা হলে প্রোগ্রামগুলি ডমিনোর মতো ভেঙে পড়তে পারে এবং সারা বিশ্ব জুড়ে ডেটা দুষিত হতে পারে। বিজ্ঞানিরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর আহ্নিক গতি যদি এভাবেই বাড়তে থাকে, তবে সময়ের হিসেব ঠিক রাখার জন্য লিপ সেকেন্ডের জন্ম হতে পারে। তবে আপাতত
সাধারন মানুষের তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আসেনি। লিপ সেকেন্ডের হিসেব কাজ লাগবে বিজ্ঞানি ও গবেষকদেরই। বিজ্ঞানিরা মনে করছেন, এই ধাঁধার সমাধান করে ফেলতে পারলে মহাবিশ্বের তহস্য বোঝা আরও সহজ হয়ে যাবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

শুরু হলো পর্ষদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এপ্রিল মাসের শেষে…

9 hours ago

টিএমসি কাণ্ড, ঋণ নিয়েছিলেন অধ্যাপিকা!তদন্ত চলছে, কাউকে ছাড়া হবে না বিধানসভায় কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দেবার নাম করে ডা. সোমা চৌধুরী নামে…

9 hours ago

নিজেদের অধিকার রক্ষায় বৈঠকে যাচ্ছে টিএফএর আজীবন সদস্যরা।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিএফএর সংবিধান সংশোধন করার নামে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার…

10 hours ago

এডিসির ৩০২ স্কুলে ১ জন করে শিক্ষক, ছাত্র সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিক, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-এডিসির ৩০২ টি স্কুলে শিক্ষক ১ রয়েছে।জাতীয় স্তরে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র- শিক্ষকের অনুপাত…

10 hours ago

কাজ করেনি,ফেরত গেছে ২২.৯১ কোটি টাকা,বাম আমলে অন্ধকারে ডুবে ছিল রাজ্যের পর্যটন: সুশান্ত।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্টের টানা ২৫ বছরে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়নই হয়নি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে…

11 hours ago

জাল ওষুধের রমরমা।

একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। কথাটা বোধহয় এক্ষেত্রে একেবারে যথার্থভাবে ধ্বনিত হয়।গত কয়দিন ধরেই…

11 hours ago