বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
২৫ বছর পরে মিলল নয়া বাঁদরের প্রজাতি

১৯৯৭ সালের পর ২০২২ সাল । টানা ২৫ বছর পর অরুণাচল প্রদেশের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ফের খোঁজ মিলল বাঁদরের একটি নতুন প্রজাতির । রাজ্যের তাওয়াং এবং পশ্চিম কামেং জেলা দু’টির মধ্যে অবস্থিত প্রায় ১৪ হাজার ফুট উঁচু সেলা পাসের দুর্গম এলাকায় গবেষণা চালাতে গিয়ে অত্যন্ত বিরল প্রজাতির এই বাঁদরের খোঁজ পেয়েছেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বা জেডএসআইয়ের বাঙালি বিজ্ঞানীরা । ১৯৯৭ সালে এই অরুণাচলেই ম্যাকাক নামের এক নতুন প্রজাতির বাঁদরের খোঁজ পেয়েছিলেন ভারতীয় প্রাইমেটোলজিস্ট আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী । যদিও তিনি সদ্য সন্ধান পাওয়া ওই প্রজাতিকে তিব্বতি ম্যাকাকেরই এক প্রজাতি বলে মনে করেছিলেন । ২০০৫ সালে ‘ নেচার কনজার্ভেশন ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া’র একদল গবেষক নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করেন অরুণাচল ম্যাকাক ম্যাকাকা মুনজালা একেবারে আলাদা একটি প্রজাতি ।

বুনো বানরের মল – মূত্র থেকে পাওয়া ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই ধারণা করছিলেন যে , অরুণাচল প্রদেশে বানরের নতুন প্রজাতি রয়েছে । তবে এতদিন ধরে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি । যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তারা লন্ডন , লেইডেন , নিউইয়র্ক এবং সিঙ্গাপুরের প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘরগুলোয় থাকা বানরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে শুরু করেন । প্রথমদিকের অভিযাত্রীরা এসব নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন , কিন্তু যেগুলো তেমনভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি । এর পর অরুণাচল প্রদেশেরই সেলা পাসে আলোড়ন ফেলা আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানী অভিজিৎ ঘোষের । তাওয়াং এবং পশ্চিম কামেং জেলার মাঝে সেলা পাস অভিযানের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তারপরেও সংশয় কাটছিল না যে নয়া প্রজাতির বাঁদরের অবাধ প্রজাতি মিশ্রণেও কোনও যোগ আছে কিনা । সংরক্ষণবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল ‘ এর মুখ্য অধিকর্তা ফ্রাঙ্ক মোমবার্গ বলেছেন , বৈজ্ঞানিকভাবে এই বিশ্লেষণ বাঁদরটির সুরক্ষায় কাজে আসবে ।

ফ্রাঙ্ক বিবিসি নিউজকে বলেছেন , ‘ সদ্য আবিষ্কৃত বাঁদরের এই প্রজাতি চরম বিপন্ন এবং বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রাণী সুতরাং তাদের মধ্যে যেগুলো এখনও বেঁচে আছে , সেগুলো রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এগুলোর নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি বেসরকা সংস্থাদের সহায়তাও নিতে হবে । ‘জেডএসআই – এর গবেষকদলের তরফে মুকেশ ঠাকুর বলছেন , ‘ আনুমানিক ১ লক্ষ ৬০ হাজার বছর আগে এই প্রজাতির বাঁদর অরুণাচল ম্যাকাক থেকে আলাদা হয়ে যায় । সম্ভবত প্রাকৃতিক বাধাই পাসের একদিকের প্রজাতির অন্য দিকে যাতায়াত বন্ধ করে দেয় । কলকাতার গবেষক অভিজিৎ ঘোষ প্রথম লক্ষ্য করেন , সেলা গাসের এক দিকে বসবাসকারী অরুণাচল ম্যাকাকের তুলনায় অন্য দিকের বাঁদরদের মুখ অনেকটা ফ্যাকাসে । আচরণগত ফারাকও রয়েছে । তারপরই গভীর গবেষণায় প্রমাণ হয় দুটো সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতির বাঁদর ।

১৯০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বাঁদরের একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার হওয়ার বহু বছর পর এই অরুণাচল প্রদেশ থেকেই বাঁদরের নতুন প্রজাতির খোঁজ মেলে ১৯৯৭ সালে । তার পর আবার একই জায়গায় ফের নতুন প্রজাতির বাঁদর । জেএসআই – এর অধিকর্তা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন , ‘ আমার সহকর্মী গবেষকদের অজস্র অভিনন্দন । প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওরা দুর্গম এলাকায় গবেষণা চালাচ্ছেন । ‘ এখন এই প্রজাতির ২০০ থেকে ২৫০ প্রাণী বেঁচে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই রেড পান্ডা নিয়ে জেডএসআই – এর কাজ প্রশংসা পেয়েছে । এবার নতুন প্রজাতির বাঁদরের খোঁজ দিলেন সেখানকার প্রাণিবিদরা । সেলা পাসে সন্ধান পাওয়ার জন্য বাঁদরের এই নতুন প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ‘ সেলা ম্যাকাক ‘ । গবেষকদলের পক্ষ থেকে মুকেশ ঠাকুর বলছেন , ‘ অরুণাচল প্রদেশ সংলগ্ন ‘ ভুটানে এদের অস্তিত্ব আছে কি না , সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে ।