বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
৩২ নম্বর ধানমন্ডি!!

ইতিহাস আর আবেগের ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি আজ ইতিহাসের অগ্নিদগ্ধ স্মারক’। ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির এই বাড়িটি থেকেই একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ঠিক চার বছর পরে ১৯৭৫ সালের আগস্ট রাতে, এই বাড়িতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের ছোঁড়া তপ্ত বুলেটে রক্তে ভেসে গিয়ে খুন হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সপরিবারে। সেই বিভীষিকাময় রাতে বাড়িতে না থাকায় শুধু বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যা। একজন শেখ হাসিনা, অন্যজন শেখ রেহানা।
গত বুধবার রাতে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক স্মারকটিকে। নির্মমভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে তিনতলা বাড়িটি। সব কিছু আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির দরজা, জানালা, ইট, পাথর, রড, বই, আসবাবপত্র, যে যা পেয়েছে সব লুঠ করে নিয়ে গেছে। গত বুধবার থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে, আজও এই তাণ্ডব চলছে উগ্র মৌলবাদীদের। যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চায়। ৩২ নম্বরের সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আজ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে ইতিহাস।
ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি শুধু একটি ইট -কাঠ- রড – পাথরের কাঠামো নয়।
এই বাড়ি একটি গোটা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাক্ষ্য। এই বাড়িতেই ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ প্রথম স্বাধীন ভাবভৌম বাংলাদেশের পরম কাঙিক্ষত লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বাড়ি কই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। তাঁর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন লক্ষ বাঙালি। এই বাড়িতেই শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতায় রূপান্তরিত হয়েছেন তিনি জ্বেলেছেন বাংলাদেশের মুক্তিসূর্যের আলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এই বাড়ি থেকেই পাকিস্তানি সেনার হাতে বলি ছিলো বঙ্গবন্ধু। তার সাক্ষীও এই বাড়িটি। তারপরের ইতিহাস সকলের জানা। ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান মুজিবার রহমান। দেশে ফিরে ১২ জানুয়ারী তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন। এরপর পুনরায় এই বাড়িটি মেরামত করে বাসযোগ্য করে তোলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সরকারী বাসভবনে না থেকে সপরিবারের এই বাড়িতেই বসবাস করতেন বঙ্গবন্ধু। এই বাড়ি থেকেই পরিচালনা করেছেন দেশ। সামলেছেন রাজনৈতিক দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি হয়েছে এই বাড়িটি থেকেই। ১৯৭০ সালে ১৫ আগষ্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে খুন হয়েছেন বঙ্গবন্ধু এরপর পদ্মা-মেঘনা দিয়ে বহু জল গাড়িয়েছে। বাংলাদেশে রাজনীতিতে বহু উত্থান পতন হয়েছে। জানা গেছে, একসময় এই বাড়িটি নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সামরিক সরকার। বঙ্গবন্ধুর নেওয়া ঋণের কিস্তি বকেয়া থাকায় বাড়িটি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শেষে বহু কষ্টে ঋণের বারো হাজার টাকা মিটিয়ে দিয়ে নয়ের দশকের শুরুতে বাড়ির মালিকানা বুঝে নেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগষ্ট এই বাড়িটি জাদুঘর হিসাবে উন্মুক্ত করে দেন তারা। একটা বাড়ির পরিচয় গড়ে ওঠে, ওই বাড়ির বাসিন্দাদের পরিচয়ে। স্মৃতি নির্মাণের আধার হয়ে উঠে একটি বাড়ি। আর সে বাড়ি থেকে যদি একটি দেশের স্বাধীনতার খবর ঘোষণা করা হয়, সেই বাড়িতেই যদি স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়, আর সেই বাড়িতেই যদি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতার নৃশংস হত্যা হয়, তখন সেই বাড়ি যে নিজেই একটি ইতিহাস হয়ে ওঠে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাধীনতার সেই সমস্ত ইতিহাস আজ ধূলিসাৎ। আসলে ৩২ নম্বর কোনও বাড়ি নয়। এটি বাঙালি জাতির ভালোবাসা, আবেগ। এই বাড়িটিকে ঘিরেই রচিত হয়েছে একটি জাতির আত্মমর্যাদার, স্বাধীনতার ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে শেষ করে দিতে চাওয়া তথাকথিত এই বিপ্লব বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? তা সময়ই বলবে।