৬৪ বছর আকাশে উড়ে বিদায় নিল এয়ার ইন্ডিয়া, হতাশ রাজ্যবাসী!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-একটানা ৬৪ বছর রাজ্যের আকাশে উড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে অবশেষে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান রাজ্যের আকাশ থেকে গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার এয়ার ইন্ডিয়ার আগরতলায় সেক্টরের শেষ বিমান ১৮৬ আসনের এয়ারবাস আইসি ৭৪৪ নির্ধারিত সময় দুপুর ১ টা ৩৯ মিনিটে আগরতলা ত্যাগ করে কলকাতা উদ্দেশে আকাশে উড়ে।শেষ দিনে ১৭৬ জন যাত্রী বিমানে কলকাতায় গেছেন।তার আগে কলকাতা থেকে এই এয়ারবাসটি এ আই ৭৪৩ নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট আগে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে এমবিবি আগরতলা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানে দু’জন শিশু সহ ১৮৪ জন যাত্রী আসেন।৬৪ বছর ধরে একটানা চলা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান শনিবারই আগরতলা সেক্টরে থেকে চূড়ান্ত ভাবে বিদায় নেওয়ায় বিমানবন্দরে বিমান কর্মী থেকে শুরু করে সকলেরই মন খুব খারাপ দেখা গেছে। বিমান পাইলট সহ কেবিন ক্রুরা- বিমান অ্যাপ্রোনে দাঁড় করিয়ে টার্মিনাল ভবনে চলে আসেন। বিমানবন্দরের এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের সঙ্গে এসে এক সঙ্গে মিলিত হন। বিদায়বেলায় ছোট একটি সৌজন্যমূলক প্রোগ্রামও হয়। বিমানের প্রধান পাইলট হিতেশ সিং রাজ্যের আকাশে এয়ার ইন্ডিয়ার শেষ বিমানটি কলকাতা থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসেন। প্রসঙ্গত, গত দু’ মাস আগেই এয়ার ইন্ডিয়ার আগরতলা-কলকাতা রুটের রাতের ১৮৬ আসনের এয়ারবাসটি উড়ান আগরতলা সেক্টর ও রাজ্যের আকাশ থেকে গুটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এই রুটে ১৮৬ আসনের দুটি এয়ারবাস যাতায়াত করতো। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান রাজ্যের আকাশে ৬৪ বছর ধরে উড়েছে ও খুব সুনামের সঙ্গে যাত্রী পরিষেবা দিয়েছে। আগে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স নামে থাকলেও ২০০৭ সালে নাম পরিবর্তনে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। এক সময় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এই বিমান রাজ্যের তিনটি বিমানবন্দরেই উঠা-নামা করতো। কৈলাসহর, কমলপুর ও খোয়াই বিমানবন্দর বিমান পরিষেবা চালু ছিল। আগরতলা বিমানবন্দরে সঙ্গে রাজ্যের ওই তিন বিমানবন্দরের মধ্যে বিমান পরিষেবা চালু ছিল। তখন ছোট ছোট বিমানের মাধ্যমে রাজ্যের এই তিন বিমানবন্দরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান পরিষেবা চালু ছিল। কম ভাড়ায় যাতায়াতে মানুষের খুব সুবিধা হতো। শেষবার ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কৈলাসহর বিমানবন্দরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান পরিষেবা চালু ছিল। আগরতলা- কলকাতা রুটের উভয় দিকে রাজন্য আমল থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান চালু ছিল ২০০৭ সালে নাম পরিবর্তনে এয়ার ইন্ডিয়া হয়। আগরতলা সেক্টরে ইতিপূর্বে বহু সংস্থার বিমান পরিষেবা চালু ছিল। কয়েক বছর পরেই সেই বিমানগুলির উড়ান পরিষেবা গুটিয়ে নেওয়া হলেও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানই একমাত্র চালু ছিল। একমাত্র এই বিমান সংস্থার বিমানের উপর নির্ভর করেই রাজ্যের যাত্রীরা সরাসরি কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলচর বা বহিঃরাজ্যের অন্যান্য শহরে যাতায়াত করত। সেই সময় বিমানের ভাড়াও যাত্রীর নাগালের মধ্যে ছিল। এই বিমান সংস্থার বিমানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই রোগীর পরিষেবাও দিতো। রাজ্যের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা চালু না থাকায় এক সময় স্ট্রেচারে গুরুতর অসুস্থ ও সঙ্কটাপন্ন রোগী কলকাতায় নেওয়ার জন্য রোগীর ভিড় লেগেই থাকতো। প্রতিদিন স্ট্রেচারে রোগী নেওয়া হতো। এমনও দিন গেছে এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমানে স্ট্রেচারে একদিনে ৫-৬ জন রোগীও কলকাতায় নেওয়া হয়েছে। স্ট্রেচারে বা হুইল চেয়ারে গুরুতর অসুস্থ ও সঙ্কটাপন্ন রোগী নিতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে খুব সুবিধা চালু ছিল। বিমান কর্মীরাও তাতে ভালো সাহায্য ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কেন্দ্রীয় সরকার আড়াই বছর আগে সরকারী সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ায় বিমান দেশবাসীর আপত্তি উপেক্ষা করে কর্পোরেট সংস্থা টাটা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপরই টাটা কোম্পানি গত আড়াই বছর ধরে উদ্যোগ নেয় আগরতলা সেক্টর থেকে এয়ার ইন্ডিয়া সব বিমান চূড়ান্ত ভাবে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য।টাটার সেই চেষ্টা শনিবার পুরো সফল হলো।যাত্রী পরিষেবায় নানা সুবিধাযুক্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিনা বাধায়, বিনা আপত্তিতে উঠিয়ে নেওয়ার পথ সহজ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের নীরবতা কারণেই বলে যাত্রীসাধারণের অভিযোগ। এয়ার ইন্ডিয়া শনিবার উঠে গেলেও একই মালিকানাধীন টাটার অপর বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমান আগরতলা সেক্টরে চালু করা হয়েছে। দু’মাস আগে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ১৮২ আসনের সকালে এই রুটে একটি বিমান চালু করা হয়। শনিবার এয়ার ইন্ডিয়া উঠিয়ে নিয়ে বিকালের জন্য এই রুটে যাতায়াতে ১৮২ আসনের একটি বোয়িং বিমান রবিবার ১ ডিসেম্বর থেকে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস চালু করছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বুকিং যাত্রীদের এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে এখন ১৫ কিলো নথিভুক্ত ফ্রি লাগেজ নিতে একাধিক লাগেজ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানে ১৫ কিলো ফ্রি লাগেজ নিতে পারলেও শুধু একটি লাগেজ নিতে পারবেন যাত্রীরা। ১৫ কিলো ওজনের মধ্যে একের বেশি লাগেজ নিলে যাত্রীকে প্রতি লাগেজের জন্য ১০০০ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ভেতর যাত্রীদের ফ্রি জলখাবার দিলেও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানে সেই সুবিধা নেই। হতাশ রাজ্যবাসী। স্ট্রেচারে রোগী নিতেও এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের মতো সব সুবিধা নেই বলে জানা গেছে।