৯৮ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হয়ে রেকর্ড
শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের কোনো বয়স নেই , আর সেটিই প্রমাণ করে দেখালেন ইতালির ৯৮ বছর বয়সী বৃদ্ধ জিউসেপ্পে পাতের্নো । বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করে ইতালির সবচেয়ে বয়স্ক গ্র্যাজুয়েট হিসেবে আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন ওই নবতিপর।পালের্মো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও দর্শন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন পাতেনো । একই বিভাগ থেকে দুই বছর আগেই গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নিয়েছিলেন তিনি । পাতের্নোর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয় যে তিনি এবারও সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে ডিগ্রি লাভ করেছেন ।
১৯২৩ সালে সিসিলিতে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া পাতেনো শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষাটাই পেয়েছিলেন। স্কুল পড়তে পড়তেই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করার জন্য নৌবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে ফিরে এসে রেলওয়েতে কর্মজীবন শুরু করেন । তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর । দারিদ্র্য , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও কোভিড মহামারি পেরিয়ে এসেও দমে যাননি নবতিপর এই মানুষটি । শিক্ষালাভের জন্য পাতের্নোর এই অদম্য মনোভাব সবাইকে অনুপ্রেরণা দিবে বলে মনে করছেন ইতালির শিক্ষামন্ত্রী পার্তেজো বিনাচি । উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর টুইটারে নেটিজেনদের কাছ থেকে প্রশংসায় ভাসছেন পাতের্নো ।
নিম্ন – আয়ের পরিবারের জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও জীবনে কখনো হাল ছেড়ে দেননি তিনি । যুদ্ধ থেকে ফিরে , রেল ইয়ার্ডের কারখানায় কাজ করতে করতে ৩১ বছর বয়সে তিনি হাইস্কুলের শিক্ষা শেষ করেন । এরপর তিনি বৈবাহিক বন্ধন আবদ্ধ হলেন তার কৈশোরের বান্ধবী তুতেজুনের্তার সঙ্গে । চলতি বছরের গত মার্চ মাসে তারা বিয়ের হীরক জয়ন্তী পালন করেছিলেন । সকল বাধা – বিপত্তি মোকাবিলা করে অবশেষে ২০১৭ সালে সিসিলি থেকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই প্রাক্তন সৈনিক । শিক্ষা জীবনের দিনগুলিতে পাতের্নো বইয়ের উপরেই বেশি নির্ভরশীল ছিলেন ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলিতেও তার অবসর কাটতে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে । একদিকে বুলেটের লড়াই আর অন্যদিকে বইয়ের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ তাকে ত্রিশোর্দ্ধ বয়সেও স্কুলমুখী করে তুলেছিল । স্কুলে পড়ার সময় কিংবা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামেও তিনি নেট মাধ্যমের ওপর একেবারেই নির্ভরশীল ছিলেন না । করোনা মহামারির ভয়াল থাবা এবং এরপর প্রায় সবকিছুই আরো ডিজিটাল হয়ে ওঠা সত্ত্বেও , হাল ছেড়ে দেননি তিনি । বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে ডিগ্রি অর্জন করেই ছেড়েছেন তিনি ! পড়ালেখার প্রতি সবসময়ই অদম্য নেশা ছিল তার । নিজের টাইপরাইটার ব্যবহার করে একটি উপন্যাসও লিখতে চান তিনি ।
আর লেখাপড়ার দুনিয়া থেকে বিরতি নেওয়ার ইচ্ছাও নেই তার । তার পরিবারের তরফ থেকে সমাজমাধ্যমে যে পোস্ট করা হয়েছে সেখানে পাতের্নোর একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করা হয়েছে । সেখানেই পাতেনো বলেছেন , ‘ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পড়াশুনোটা চালিয়ে যাওয়াটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।আর এটাই ঈশ্বরের কাছে আমার একান্ত প্রার্থনা । ‘ আপাতত যে উপন্যাসটি লেখার জন্য তিনি মনোযোগ দিয়েছেন তার বিষয়ে প্রেক্ষাপট কিছুই না জানালেও ইতালির বেশ কয়েকজন প্রকাশক ৯৮ বছর বয়সীর উপন্যাস প্রকাশ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ।