২৩-এ রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে মাঠে ঝাঁপাবে সিপিএম

 ২৩-এ রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে মাঠে ঝাঁপাবে সিপিএম
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৩-এ রাজ্যে ক্ষমতা পুনর্দখলের লক্ষ্যে সোমবার করা হয় সিপিআইএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির বৈঠক। একদিন ব্যাপী বৈঠকের মধ্য দিয়ে আসন্ন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। উপজাতি সংরক্ষিত আসনগুলির জন্য একটি বিশেষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও হয়। অন্যদিকে, দলের যুবাদের সমাজদ্রোহী, বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাম প্রতিরোধ বাহিনীকে রাজ্যব্যাপী পথে নামার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দলের মতে ২০১৭ সাল থেকে রাজ্যে উপজাতি সমাজের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। এখন তিপ্রামথাও বলেছে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড। আর ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে আইপিএফটি বলেছিল তিপ্রাল্যান্ড। যদিও এডিসিই চালাতে পারছে না তিপ্রা মথা। তাই রাজ্যের মানুষকে এখন সতর্ক করার উদ্দেশ্যে উপজাতি এলাকা, গ্রাম, পাহাড়, জেলা, মহকুমা, রাজ্যব্যাপী রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিয়াইএম রাজ্য কমিটি। এদিনের বৈঠকে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী, নারায়ণ কর, তপন চক্রবর্তী, পবিত্র কর, রমা দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছিলেন, ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসের পর রাজ্য কমিটির বৈঠক হচ্ছে। রাজ্যের বর্তমান জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে পাল্টাচ্ছে। এই অবস্থায় রাজ্য কমিটির বৈঠক দলের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত দিল্লীর খারাপ আবহাওয়ার জন্য উপস্থিত থাকতে পারেননি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি রাজ্যের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি দলের এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে দিলো এরা রাজ্যে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ। প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়ে, ২৩-এ পরাজয়ের ভয়ে মুখ্যমন্ত্রী বদল করল বিজেপি। একটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ যখন শেষ হবার মুখে, মাত্র ৯ মাস বাকি, সে সময়ে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বদলের সিদ্ধান্ত সরকার ও দলের চরম ব্যর্থতার নিদর্শন। কারন বিজেপি জোট সরকার ভিশণ ডকুমেন্টের মাধ্যমে ২৯৯ টি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। প্রতিশ্রুতি ছিল ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার হলে প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের সপ্তম বেতনক্রম প্রদান করা হবে। এই প্রথম কেবিনেট বৈঠকে রাজ্যের অনিয়মিত, ডিআরডব্লিউ, কন্ট্রাকচুয়েল কর্মচারীদের নিয়মিত করা হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প যথাক্রমে সর্বশিক্ষা, এনআরএইচএম, রেগা সহ অন্যান্য প্রকল্পের কর্মচারীদেরও নিয়মিত করা হবে। রাজ্যের টিএসআর, অন্যান্য রাজ্যপুলিশের সকল স্তরের কর্মচারীদের ও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর মতো বেতনভাতা কেন্দ্রীয় হারে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, চার বছরে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের সাথে প্রতারণা করেছে বিজেপি সরকার।

কিছুই দেওয়া হয়নি। উল্টো সামাজিক ভাতা ২০০০ টাকা, রেগার মজুরি ৩৮০ টাকা সহ দুশো দিনের কাজের বিষয় গায়েব। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রী বদল করেও রাজ্যবাসীর ক্ষোভ বিক্ষোভ উষ্মাকে প্রতিহত করতে পারবে না শাসক বিজেপি। শুধু তাই নয়, বিজেপি সরকার ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময় চলমান সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার ফলে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষিত বেকারের বয়স উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। বিজেপির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বছরে পঞ্চাশ হাজার চাকরির মোতাবেক চার বছরে দুই লক্ষ বেকারের চাকরি হবার কথা। কিন্তু এরা চাকরির সুযোগই বন্ধ করে দিয়েছে। দাই-ইন-হারনেস চাকরি পর্যন্ত বন্ধ করে দিলো। সরকারী চাকরি প্রদানের নামে ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে পর্যন্ত বঞ্চনা করেছে বিজেপি। টেট শিক্ষক এবং টেট উত্তীর্ণ বেকারদের সাথেও প্রতিশ্রুতির খেলাপ করেছে বিজেপি সরকার। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে তিপ্রা ল্যান্ডের দাবিদারদের জোটসঙ্গী ছিল শাসক বিজেপি। জাতীয় সড়ক অবরোধ। উপজাতি ট্রাইবেল মানুষের আবেগকে পুঁজি করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও। এরপর মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তিপ্রাল্যান্ডের দাবি তুলে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি জোট। কিন্তু বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের একান্ন মাস হচ্ছ! তিপ্রা ল্যান্ড হলোনা। রাজ্যের ট্রাইবেল অংশের মানুষ এখন বুঝতে পারছেন এরা মিথ্যাচার করেছে। এখন আবার আরেকজন উপজাতি দরদের নামে বলেছেন গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড! এদের মূল লক্ষ্য হলো রাজ্যের উপজাতি-অনুপজাতি মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে ক্ষমতা দখল করা। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে রাজ্যব্যাপী চলছে সন্ত্রাস। গনতন্ত্র ও আইনের শাসন পর্যন্ত নেই। উপজাতি দরদের কথা বলছে অথচ রাজ্যের উপজাতি এলাকায় কাজ নেই, খাদ্য নেই। অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে। সন্তান বিক্রি চলছে। রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। পুলিশ কাঠপুতুল। সংবিধান অচল। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দল পর্যন্ত আক্রান্ত। এদিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যের মানুষ এখন সবকিছুই বুঝতে পারছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী বদলের কৌশলী সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। এদিনের বৈঠক থেকে দলের নেতা, কর্মী সমর্থকদের বলা হয়, ভোট লুঠ এখন বন্ধ করে দিতে হবে। এই কাজ যুবকদের দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। কারণ এখন ঘরে বসে থাকার দিন শেষ। মানুষকে ভোট দানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এর জন্য বাম যুবকদের প্রতিরোধ বাহিনীকে এখন রাজপথে থেকে রাজ্যবাসীকে সাহস যোগাতে হবে। কারণ, প্রতিরোধ দ্বারাই ক্ষমতা পুনর্দখল করা যাবে। দলের রাজ্য নেতাদেরও রাজপথে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দলের সর্বভারতীয় নেতারাও রাজ্যে আসবেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.