বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
অনাকাঙিক্ষত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আপনার আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে- বিজ্ঞপ্তির আদলে অনেকে মোবাইলে এমন বার্তা পাচ্ছেন। বার্তা যারা পেয়েছেন, তাদের অনেকে ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে ওই বিজ্ঞপ্তির ছবি (সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক সংবাদ) দিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। সব মিলে জনমানসে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্তৃক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ফের দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) রূপায়ণের বার্তা দেওয়া এবং ঘটনাচক্রে তার পরেই মোবাইলে আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার বার্তাটি আসায় বিষয়টি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। কারণ ওই বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য নিয়ে আধার ঘিরে শুরু হয়েছে সংশয়, উদ্বেগ, প্রশ্ন, ধোঁয়াশা ও জল্পনা। যদিও সমাজমাধ্যমে ঘুরতে থাকা নোটিশের ‘লেটারহেড’ দেখে সোমবার প্রাথমিকভাবে আধার কর্তৃপক্ষ সূত্রের দাবি, এটি ভুয়ো। যদি প্রকৃতই আধারের লেটারহেড ব্যবহার করে কেউ বা কারা এই ধরনের বার্তা ছড়িয়ে জনমানসে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে চান, অবিলম্বে তা তদন্তের আওতায় আসা উচিত।তবে বিষয়টি যদি উদ্বেগের আবহ নির্মাণের একটি প্রয়াস হয়ে থাকে,সে ক্ষেত্রে সখেদে বলার,এমন প্রয়াস পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত। এক বা একাধিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার বার্তা দিয়ে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় আবেগ জাগরিত করে ভোটবাক্সে সুফল মেলে ঠিকই, তবে তাতে দেশে ঐক্য ও সংহতিতে চিড় ধরে।এই যুক্তির বিরোধীতায় অনেকেই বলতে পারেন, সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে কোনও সরকার সওয়াল করলে তা মোটেই অনভিপ্রেত নয়। তাছাড়া সকলেই জ্ঞাত যে হিন্দুত্বকে বাঁচিয়ে রাখা বিজেপির অন্যতম উদ্দেশ্য। সতরাং সেই অভিজ্ঞান থেকে শাসক গোষ্ঠীর এই আচরণ খুবই স্বাভাবিক এবং সঙ্গত। এ নিয়ে আপত্তি যারা তুলেন, বরং তাদের আচরণও রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়।তারাও বিশেষ কিছু সম্প্রদায়ের ভোটের দিকে তাকিয়েই এর বিরোধিতা করে চলেছেন।
বস্তুত মন্দির-মসজিদ রাজনীতি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণের
প্রয়োজনীয়তা এবং এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন আধার নিষ্ক্রিয় করা (যদি সত্যি হয়) আদতে দৈনন্দিন সমস্যা থেকে জনসাধারণের দৃষ্টির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল। প্রশ্ন হল, ধর্মভিত্তিক বিভাজনকারী রাজনীতি যখন দারিদ্র, ক্ষুধা, অপুষ্টি,স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থানের অব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, এমন সমস্ত মৌলিক সমস্যার মূলোৎপাটন করতে পারে না, তখন সমগ্র বিষয়টিকে শুধুমাত্র ‘ধর্মের মুদ্রাদোষ’ হিসাবে চিহ্নিত করাটা সব দিক দিয়ে কতটা সমীচীন? বর্তমানে এ দেশে গরিবের শোষণ, তাদের প্রতি বৈষম্যের মাত্রা বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ২০১৪ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ৫৫। ২০২৩ সালে ১২৫ টি দেশের মধ্যে ভারত ১১১ তম স্থান পেয়েছে, যা গুরুতর ক্ষুধার মাত্রাকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ক্রমাগত পিছানো সত্ত্বেও কেন শিশুপুষ্টি প্রকল্পে সদ্য পেশ হওয়া কেন্দ্রীয় বাজেটে কার্পণ্য করা হল,সে প্রশ্নও থেকে যায়।বেকারত্বের অবস্থাও তথৈবচ। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র তথ্য অনুসারে, গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণে ২০২৩-এর অক্টোবরে ভারতের বেকারত্বের হার দুই বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সমীক্ষা বলছে, এ দেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে ১৩জনই বেকার। আর্থিক বৈষম্যের স্বরূপও প্রকট। অসরকারী সংস্থা অক্সফ্যাম-এর রিপোর্ট অনুসারে, মাত্র ১ শতাংশ ধনকুবেরের হাতে ভারতের ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ। খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা খরচ-সহ সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমাজের দরিদ্র লোক প্রবল যন্ত্রণার মুখে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো- র রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৪-২০২২ এই আট বছরে কৃষিক্ষেত্রে ঘটেছে ১,০০,৪৭৪টি আত্মহত্যা। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন কৃষক ও দিনমজুর আত্মহত্যার পথকে বেছে নেন প্রধানত ঋণভারের কারণে। দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুসারে, ভারতে ৫-১৪ বছরের প্রায় এক কোটিরও বেশি শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুসারে, গোটা বিশ্বের ১৬ শতাংশ শিশুশ্রমিক ভারতের। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প শুরু হলেও, আজও দেশের বহু মানুষের বাসস্থান খোলা রাস্তার ধারে, রেলস্টেশনে বা ঝুপড়িতে। এই সব প্রাত্যহিক বারোমাস্যা বদলে চর্চার কেন্দ্র উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার বাতাসে ভারী হয়ে উঠলে, তা তা আদৌ কাঙিক্ষত নয়।